পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যে কৃষকের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ ছিল অবস্থা; সে কৃষক এখন স্বাবলম্বী। রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে ধান চাষ করে দু’বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়া ছিল দূরহ। দুঃখ-কষ্ট বাসা বেঁধেছিল ঘরের মধ্যে; সেই কৃষক হাড়িভাঙ্গা, কফিল বাঙরি, এস আর তেলি আম চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলিয়েছে; সংসারে এনেছে সুখ-শান্তি। খড়-টিনের ঘরের বদলে বাড়িতে এখন পাকা বিল্ডিং। মোটর সাইকেল, ব্যাংক ব্যালেঞ্জসহ পাল্টে ফেলেছেন জীবন ধারা। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার কৃষক আম চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। সেই হাড়িভাঙ্গা আম চাষের পরিধি ক্রমান্বয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। আম নিয়ে মহারণ। কেউ পোটলা বাঁধছে, কেউ গাছ থেকে আম পাড়ছে, কেউ কাঁচাপাকা ছোট-বড় বাছাই করছে, কেউ ওজন করছে, কেউ বস্তা ভরছে, কেউ মোবাইলে খবরাখবর দিচ্ছে, ভ্যান-রিক্সায় বাজারে নিচ্ছে, বাশ দিয়ে তৈরি টুকরি, পাটের বস্তা তৈরির বিশেষ ব্যাগ, বাশের খাচা, ভ্যান রিক্সায় আনা নেয়া, খড় ক্রয় বিক্রয়, ঘরের ভিতরে খড়ের বিছিয়ে আম পাকানো এবং রঙ সুন্দর করা, ছোট ছোট খুপরি করে ভাড়া দেয়া, পাইকার, শ্রমিক, কুরিয়ার সার্ভিস, ট্রাক চালক, মজুরদের হাকডাক, হৈচৈ, দোকানীদের চিৎকার চেঁচামেচি এলাহী কারবার। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকার কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, ফরিয়া দালাল, মুটে-মজুর, দোকানী, ভ্যান-রিক্সা চালক, ট্রাকা চালক, ফ্যাক্স ফোনের ব্যাবসায়ী, কুরিয়ার সার্ভিস সবাই ব্যস্ত হাড়িভাঙ্গা আম নিয়ে। নানা পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়েছে আমের সঙ্গে। আমই জীবন আমই মরণ। বদরগঞ্জের কুতুবপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক ‘রংপুরের নতুন অর্থকরি ফসল’ আমের জগৎ ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে এসব তথ্য দিয়ে জানালেন, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। পাঁচ-দশ বিঘা জমি চাষাবাদ করে অতি কষ্টে জীবন চালাতেন। এখন পাঁচ-দশ বিঘা জমিতে আমের চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এই ‘আম অর্থনীতি’ মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে দিয়েছে। এখন কৃষকের পাকা বাড়ি, ঘরে ঘরে মোটর সাইকেল। অথচ এক সময় এরা দু’বেলা ভেট ভরে খেতেই পারতেন না। ঈদের পর ‘আম মেলা’ বসবে। তখন আম কেন্দ্রীক ব্যস্ততা আরো বাড়বে। রংপুর শহরের টার্মিনাল থেকে শ্যামপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে শহরের পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার যেতেই চোখে পড়লো গ্রামের গেরস্তের ঘরবাড়ির উঠোনে ছোট ছোট গাছে আম ঝুলছে। কোনো কোনো গাছে এমন অবস্থা যে গাছের যতগুলো পাতা প্রায় ততগুলোই আম। আমের ভারে গাছ হেলে পড়েছে। গন্তব্য মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ। পাশে রংপুর সদর ও বদরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের আমবাগান ঘুরে দেখা। ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতেই চোখ পড়লে মাঠে দিকে। ধানি জমির দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া। ধান পাট নয়, মাঠে আমের চাষ হচ্ছে। ছোট ছ্টো গাছের আম বাগান। কোথাও কোথাও ধানি জমির আইলের চতুর্দিকে সারি সারি করে আমগাছ লাগানো হয়েছে। পথের ধরে, কোনো কোনো বাসাবাড়ির পরিত্যাক্ত যায়গায় শোভা পাচ্ছে আমগাছ। সব গাছেই প্রায় একই সাইজের। সবুজ গাছে শত শত হাজার হাজার আম ঝুলছে। যতই ভিতরে যাচ্ছি ততই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর, কুতুবপুর, লোহানী পাড়া, ওসমানপুর, বক্সিগঞ্জ, রংপুর সদর উপজেলার রানীপুকুর, পালিচরা, রামজীবন, কাটাবাড়ি, রুকনিগঞ্জ, ফাজিল খা, মিঠাপুকুর উপজেলার ঘোড়াগাছ, কদমতলী, পদাগঞ্জের আম বাগান দিনভর ঘুরে দেখা গেল প্রায় অভিন্ন চিত্র। একই ধরণের গাছ, একই ধরণের আম। হাড়িভাঙ্গা, এস আর তেলি ও কফিল বাঙরি। হাড়িভাঙ্গা আমের গাছই বেশি। অর্ধশত বাগান ঘুরে দেখা গেল বাগানের কিছু বড় গাছ রয়েছে সেগুলোর আমের সাইজ অপেক্ষাকৃত ছোট। গাছের বয়স বেশি হলে হাড়িভাঙ্গা আম আকারে ছোট হয়ে থাকে।
বদরগঞ্জের খিয়াপাড়ার আমচাষী মোহাম্মদ খোকন নিজের আমের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখালেন। তিনি জানালেন, তিন একর জমিতে আম চাষ করেছেন। এক সময় এই জমিতে ধান চাষাবাদ করে কোনো রকমে জীবন চালাতেন। দুঃখকষ্ট ছিল জীবনের সঙ্গী। কিন্তু আমের চাষ শুরু করার পর সুকান্ত ভট্টচার্যের ‘কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি’ পংক্তির মতোই সংসার থেকে ‘দুঃখ-কষ্ট দারিদ্রতা’ ছুটি নিয়েছে। জানালেন, বাড়ির উঠোন পুকুর পাড়সহ তার বাগানে ১৫০টি আমগাছ। বাগানে হাড়িভাঙ্গা আম বেশি হলেও এস আর তেলি, কফিল বাঙরি, সাদা আমের গাছও রয়েছে। বাড়ির আশপাশ, পরিত্যাক্ত জমি ও আঙ্গিনায় আম গাছ লাগিয়েছেন। জানালেন, এস আর তেলি, কফিল বাঙরি আমের প্রচারণা কম হওয়ায় সেগুলো সম্পর্কে মানুষ তেমন জানেন না। তবে হাড়ি ভাঙ্গা আমের মতোই সেগুলো সুস্বাদু। তিন আমই বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। তার ভাষায় হাড়িভাঙ্গা আম একটু বেশি পাকলে পানসে লাগে কিন্তু এস আর তেলি ও কফিল বাঙরি আম বেশি পাকলেও মিষ্টি স্বাদ অটুট থাকে। ৩৫ বছর বয়সী তরুণ কৃষক খোকন এবার বাগান বিক্রী করেছেন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে দামাদামি করলে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বাড়ান বিক্রী করতে পারতেন। আম চাষের সাফল্যের ধারা বর্ণনা দিতে গিয়ে জানালেন, আমের বাগান বিক্রী করেছেন গাছে মুকুল আসার সময়। গাছের আম বিক্রীর পর তাদের আর কোনো কাজ নেই। পাইকার ও ব্যাপারীরা গাছ পাহারা দেয়া, পরিচর্যা (তেমন প্রয়োজন হয় না) সবকিছুই করেন। বাগান বিক্রীর সময় অর্ধেক টাকা পেয়েছেন; বাকী টাকা আম তোলার সময় পাবেন। তবে চাহিদা ও বাগান ভেদে কোনো কোনো বাগান মালিক সব টাকা এক সঙ্গে নিয়ে থাকেন। কৃষকরা জানান, তাদের কেউ আম বাগান ১০ লাখ টাকা বিক্রী করেছেন; কেউ ১৫ লাখ, ২০ লাখ এমনকি এক মৌসুমে আম বিক্রী করে অর্ধ কোটি টাকা আয় করেন এমন কৃষকও রয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে আমচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফসলি জমি, পরিত্যাক্ত ও অনাবাদী জমিতে এই আম চাষ করা হচ্ছে। বীজ থেকে চারা তৈরি ছাড়াও টেপ কলম, ফাটা কলম পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা হয়। এখন বেশ কিছু নার্সারী গড়ে উঠেছে তারা হাড়িভাঙ্গা, এস আর তেলি, সাদা, ও কফিল বাঙরি আমের চারা তৈরি করেন। চারা আকৃতি ও প্রকার ভেদে ২০ টাকা থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রী হয়। মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার কৃষক এখন আম চাষে জড়িয়ে পড়েছেন। ধান-পাট চাষে তাদের আগ্রহ নেই। এক একজন কৃষক বাড়ি ঘরের উঠোন থেকে শুরু করে পতিত জমি এবং ধানি জমিতে ২ বিঘা থেকে ৫০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমির আম আগাম বিক্রী হয়ে থাকে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যে একবিঘা জমিতে ধান চাষ করে ৫ হাজার টাকা রোজগার করা কঠিন ছিল সে জমিতে আম চাষ করে অনায়াসে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়। সে জন্যই এলাকার কৃষক ধান চাষের বদলে আম চাষের প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়েছেন। তবে আমের বাগানের ভিতরেই ধান, নানা ধরণের সবজি, আদা, হলুদের চাষ করা যায়। কেউ কেউ একই জমিতে বহুমুখী চাষাবাদ করে থাকেন। চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আম চাষে তেমন পরিশ্রম নেই। ঝুকি এবং খরচও কম। ১২ থেকে ১৫ হাত দূরত্ব রেখে আমের চারা রোপন করতে হয়। রোপনের সময় জমিতে গোবর সার দিলে ভাল হয়। রোগবালাই ছাড়া অন্য সার বা কিটনাশক দেয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। চারা রোপনের দুই বছরের মাথায় গাছে আম ধরা শুরু কয়। ৭ থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত গাছে আমের ফলন খুব ভাল হয়। তবে গাছের বয়স ১০ বছরের বেশি হয়ে আমের আকৃতি ছোট হয়। এ জন্য গাছের বয়স ১২ পার হলে কৃষক সে গাছ কেটে সেখানে নতুন করে আম গাছ রোপন করেন। কৃষকরা জানালেন, রোদ হলে আমের রঙ ভাল হয়। আবুল হোসেন নামের এক কৃষক জানালেন, কয়েক বছর আগেও ছিলেন খড়ের ঘরে; আম চাষ করে পাকা বাড়ি করেছেন। জমিজমা কিনেছেন। এখন ব্যাংকেও তার টাকা জমা থাকে। মোহাম্মদ খোকন ও আবুল হোসেনের মতোই হাজার হাজার কৃষক আম চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন।
কুতুবপুর ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম মিলন জানালেন, মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজারকে কেন্দ্র ধরে চারপাশে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার এলাকায় কৃষকরা আম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই আম এখন বাংলাদেশের সব বড় বড় শহরে বিক্রীর পাশপাশি বিদেশেও রফতানী হচ্ছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ফরমালিন ও কার্বাইড ছাড়াই বিশেষ পদ্ধতিতে আম প্যাকেটিং করা হয়। যার কারণে হাড়িভাঙ্গা, এস আর তেলি ও কফিল বাঙরি নিয়ে ভীতির কারণ নেই। সঙ্গী সাংবাদিক হালিম আনছারী শতাধিক দোকান ঘরের স্যাটারের নীচের খড়ের অস্থিত্ব দেখিয়ে জানালেন, ওই ঘরগুলোতে আম পাকানোর জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে রাখা হয়েছে। খড়ের ভিতরে বিশেষ ভাবে আম রেখে সেগুলো পাকানো হয় রঙও সুন্দর হয়।
মূলত ‘আম’ দুই অক্ষনের ফলটি বিপ্লব ঘটিয়েছে রংপুর জেলার গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার অর্থনীতি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ উপজেলার এই আম কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। দারিদ্রতা ছিল মানুষের নিত্য সঙ্গী। গ্রামের যারা বছরে ১০-২০ মন ধান পেয়ে সারাবছর কষ্টে জীবনযাপন করতেন; তারা এখন লাখ লাখ টাকা আয় করেন আম বিক্রী করে। হাড়িভাঙ্গা আমকে কেন্দ্র করে বছরের একটা সময় কর্মচাঞ্চলে উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ওই বিস্তীর্ণ এলাকা। আম উৎপাদনকে কেন্দ্র করে আম চাষী, খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ী, ফরিয়া দালাল, শ্রমিক, কাটুন ঝুড়ি প্রস্তুত কারক, বস্তা বিক্রী, ফোন ব্যবসা, কুড়িয়ার সার্ভিস, খড় ও ডালি-কুলা তৈরি কারক, ট্রাক চালক এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ‘আম’ নিয়েই তাদের নিজ নিজ পেশায় কর্মব্যস্ততা এবং কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় আমের। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি হাড়িভাঙ্গা, এস আর তেলি, কফিল বাঙরি আম বিদেশেও রফতানি হয়। জুন জুলাই তিন উপজেলার মানুষের আমেই জীবন আমেই মরণ।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে হাড়িভাঙ্গা আমের গল্প শোনা যায়। এই হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তিস্থল রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রাম। ওই গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার মূলতঃ এ হাড়িভাঙ্গা আমের উদ্ভাবক। তিনি কোথা থেকে আমের চারা এনে নতুন হাড়িতে করে রোপন করেছিলেন। সেই গাছ বড় হলে গাছের শেখড়বাকর বৃদ্ধি পেয়ে হাড়িটি ভেঙ্গে যায়। তখন থেকে ওই আমের নামকরণ করা হয় হাড়িভাঙ্গা। মিঠাপুকুরের ব-দ্বীপ সাদৃশ ত্রিকোণাকৃতি তেকানী গ্রামের এক কোণে মেঠো রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিমে আধুনিক নকশার সুন্দর একটি মসজিদ এবং এর উত্তর-পশ্চিম কোণে প্রায় ১০০ ফুট দূরত্বে সনামধন্য সেই “হাড়িভাঙ্গা” আমের মূল/মাতৃ গাছটি এখনো মাথা উঁচু করে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছটির বেড় প্রায় ১০ ফুট, মূল কান্ডের উচ্চতা ৬ ফুট এবং মোটা মোটা ডালপালা গাছটির চারপাশে প্রায় ৩৫/৩৬ ফুট পর্যন্ত বিস্তুৃত। এই হাড়িভাঙ্গা আমের নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। হাড়িভাঙ্গা আম নিয়ে মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু রংপুরের ওই অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আমের পাশাপাশি আরো দুটি আম কফিল বাঙরি ও এস আর তেলি খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। এ দুটি আমও বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ হচ্ছে।
কফিল বাঙরি মিঠাপুকুর উপজেলার কদমতলী গ্রামের কফিল বাঙরি দশ গ্রামে ছেলেদের খাতনা করে বেড়ান। ১০/১২ বছর আগে তিনি কোথা থেকে আমের চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে রোপন করেন। দুই/তিন বছর পর সেই চারায় (ছোট্ট গাছ) আম ধরে। নতুন আকৃতির আম বেশ সুস্বাদু। পদাগঞ্জ বাজারে কপিল বাঙরির আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সেই আমের নাম দেন ‘কফিল বাঙরি’ আম। রংপুর জেলার সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর উপজেলা ও বদরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ গ্রামের এসার উদ্দিন পেশায় তেলি। তার নামে আমের নামকরণ হয়েছে কফিল বাঙরি।
হাড়িভাঙ্গা আম বদলে দিয়েছে রংপুর জেলার তিনটি উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য। এই আম এখন জেলার অন্যান্য উপজেলাও চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এক সময়ের শতরঞ্জির জন্য বিক্ষাত ছিল রংপুর। কার্তিক ও চৈত্র মাসে মংগার জন্য রংপুরের নাম আলোচনায় ছিল। সরলতার জন্য রংপুরের মানুষকে ‘মফিজ’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। সেই মফিজদের দেশের কৃষকরা হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিন করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।