বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : জ্যৈষ্ঠের শেষ দিকে এসে উত্তর বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের উপকূলে সৃষ্ট বৃষ্টি ঝরানো মৌসুমি নি¤œচাপটি স›দ্বীপ হয়ে গতকাল (রোববার) মধ্যরাতে সীতাকুÐ অতিক্রম অতিক্রম করে গেছে। বর্ষার নিয়ামক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমনের সাথে মৌসুমী নি¤œচাপের সক্রিয় প্রভাবে গতকাল সিলেট ও রংপুর ছাড়া দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের, কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। সেই সঙ্গে ছিল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারে ১৭৩ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ২৬ মিমি, চট্টগ্রামে ৫০ মিমি, রাঙ্গামাটিতে ৭২ মিমি, কুমিল্লায় ২৪ মিমি, হাতিয়ায় ৮৫ মিমি, রাজশাহীতে ১৭ মিমি, খুলনায় ৪৫ মিমি, মংলায় ১১২ মিমি, বরিশালে ৬৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে মৌসুমী বায়ু বিস্তার ও সক্রিয় না হওয়ার কারণে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৬ ও ২৬ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী এবং নওগাঁ অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তবে তা কেটে যেতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশের উপকূলভাগের সন্নিকটে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গতকাল মৌসুমী নি¤œচাপে পরিণত হয়। এর সক্রিয় প্রভাবে বরিশাল, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারেরও বেশি) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের সতর্কতার কথা জানানো হয়। নি¤œচাপে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরে ৩নং সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।
মৌসুমী নি¤œচাপের প্রভাবে দেশের অধিকাংশ স্থানে আকাশ ঘনঘোর মেঘে ঢাকা রয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কেটে গেছে গত এক সপ্তাহের ভ্যাপসা গরম ও গুমোট আবহাওয়া।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মৌসুমী নি¤œচাপে রূপ নিয়ে গতকাল দুপুরে স›দ্বীপ ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ ২২.৫ ডিগ্রি উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ ৯১.৫ ডিগ্রি পূর্ব) অবস্থান করে। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল মধ্যরাত নাগাদ সীতাকুÐের নিকট দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে গেছে।
মৌসুমী নি¤œবচাপের প্রভাবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে বিস্তার লাভ করেছে। আগামী ৫ দিন পর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস, তাপমাত্রা ফের বৃদ্ধি পেতে পারে। মৌসুমীবায়ু দেশের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে বিস্তার লাভ করতে পারে।
ভারী বর্ষণ এবং পাহাড় ধসের সতর্কতায় আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, স›দ্বীপ ও এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী নি¤œচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর সক্রিয় প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি’রও বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।