Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিনাজপুরে মাদকবিরোধী অভিযান: মূলস্রোতে ফেরার আকুতি

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুই সন্তানের জননী আকলিমা খাতুন থাকে দিনাজপুরের লাইন পাড় এলাকায়। নেশাগ্রস্থ স্বামীর অত্যাচার নিত্যসঙ্গি হলেও ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভালই ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে স্ত্রী ছেলে মেয়ে রেখে স্বামী ইকলাস (ছদ্দ নাম) লাপাত্তা হয়ে গেছে। সারাদেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশ অভিযানে ইকলাস এর মত আরো অনেক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এখন ঘর ও এলাকা ছাড়া হয়ে গেছে। তাদের পরিবার পরিজন কষ্টে থাকলেও তারাও চায় এভাবে পালিয়ে থেকে যদি সঠিক পথে আসে। কিন্তু ভয় একটাই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তা-হলে যদি সব শেষ হয়ে যায়। কেননা দিনাজপুরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও দু-পক্ষের গোলাগুলিতে এ পর্যন্ত ৫ মাদক ব্যবসায়ী প্রাণ হারিয়েছে। পাঁ হারিয়ে দু’জন চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে পুলিশি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি হয়েছে পুলিশের সাথে মাদকসেবীরা ছুটছে মাদক ব্যবসায়ীদের পিছনে। পুলিশের উদ্দেশ্য ধরা আর মাদকসেবীদের উদ্দেশ্য মাদক ক্রয় করা। তবে এখনও সর্ষের ভিতরে থাকা ভূত নির্মূল করতে না পারায় মাদক বিরোধী অভিযানের সফলতা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এজন্য দিনাজপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের সাথে সখ্যতা বজায় রাখা পুলিশ সদস্যদের প্রতিও নজর রাখার কথা বলছে। এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান গত কয়েক বছরের মত এবারের ঈদ বাণিজ্যকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে এর প্রভাব শহর জীবনে পড়তে শুরু করেছে। মাদকের জন্য ছিঁচকে চুরি, ছিনতাই অনেকাংশে কমে গেছে। আতঙ্ক যদি দীর্ঘস্থায়ী করা যায় তাহলে প্রাণের ভয়, স্ত্রী-সন্তানের মায়া আর পালিয়ে থাকার যন্ত্রণা বিপদগামী অনেককেই ভাল পথে আসতে বাধ্য করবে। এ জন্য দরকার হবে সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতা। সীমান্ত ঘেষা দিনাজপুর জেলায় মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রুপ নিয়েছিলো। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে গত ১৬ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান। সকাল হলেই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর খবর প্রচার হতে থাকে। বিরল, বীরগঞ্জ, বিরামপুর, সদরসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ জন নিহত হয়। পুলিশ বলছে এরা চিহ্নিত মাদক ব্যাবসায়ী। তবে মাদক ব্যবসার গডফাদার হিসাবে পরিচিত প্রায় ২’শ জন এখন বাড়ি ছাড়া হয়ে আছে। পুলিশ সুপার হামিদুল আলম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাদকের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। এক্ষেত্রে পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায় তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন অভিযান শুরুর পর থেকে জেলায় ৪৫৫টি মামলায় ৫০৪ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ২ কোটি টাকারও বেশি মাদক। গত ৫ মাসে জেলায় ২৪৫২ টি মামলায় ৩২৪৪ জনকে আটক করা হয়।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরার আকুতি নিয়ে নিজে অথবা স্ত্রী-সন্তানদের দিয়ে ভাল হওয়ার আবেদন জানায়। কিছুদিনের মধ্যেই সাড়ে তিন হাজার মাদকসেবী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয় সমাজসেবীদের সহযোগিতায় ভ্যান, রিক্সা, সেলাই মেশিন দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকবিরোধী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ