গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চট্টগ্রামের দুই তরুণ নেতা মনোনীত হওয়াকে চমক বলছেন দলের নেতাকর্মীরা। এই চমকে পদ প্রত্যাশী এ অঞ্চলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে টেনশন বেড়ে গেছে। তারা অধীর আগ্রহে দলের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে কয়েক ডজন নেতা শেষ মুহূর্তে জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। পদধারীদের অনেকে আবার পদ হারানোর শঙ্কায় দিন পার করছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও গভীর আগ্রহ নিয়ে পরবর্তী চমক দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।
১৯ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর দুই দফায় মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহŸায়ক লায়ন আসলাম চৌধুরী। অন্যদিকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেন। লায়ন আসলাম চৌধুরীকে দলের যুগ্ম মহাসচিব করায় দলের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও ডা: শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করায় তৃণমূলে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নতুন কমিটি দলের ত্যাগী এবং দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরেছেন তাদের ঠাঁই করে দেবেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অনেকবার। তৃণমূলে কর্মী- সমর্থকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া তার কথা রাখছেন। তাদের প্রত্যাশা বাকি কমিটিগুলোতেও তারুণ্যদীপ্ত সাহসী এবং বিএনপি তথা শহীদ জিয়ার আদর্শে অটুট অবিচল যারা তাদেরই ঠাঁই হবে। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা আড়ালে ছিলেন কিংবা আপোষ করে মামলার খড়গ থেকে নিজেদের রক্ষা করেছেন তারা যেন কোণঠাসা হয় এমন আশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
ডা: শাহাদাত হোসেনকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করায় খুশি বৃহত্তর চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিমত, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ডা: শাহাদাতের যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। এক-এগারোর পর দলের দুঃসময়ে সামনের কাতারে আসেন ডা: শাহাদাত হোসেন। মহানগর এবং জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে তখন দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে। নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নিতে যে কয়জন নেতা এগিয়ে আসেন তাদের অন্যতম ডা: শাহাদাত হোসেন। এ কারণেই বিগত ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের মতো বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তিনি। ওই পদ পাওয়ার পর থেকে নগর বিএনপির হাল ধরেছেন শক্তভাবে। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকাÐেও সরব রয়েছেন তিনি। মামলা-হুলিয়া মোকাবেলা করে নেতাকর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন ডা: শাহাদাত হোসেন। ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে নগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে কিছুটা সমালোচিত হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। এ অবস্থায় তাকে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করায় খুশি বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তরুণ এ চিকিৎসক ড্যাব, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাÐেও জড়িত রয়েছেন। চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে দেয়া দায়িত্ব পালনে তিনি সফল হবেন এমন প্রত্যাশা সমর্থকদের।
যুগ্ম মহাসচিব পদ পাওয়া লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরাও মহা খুশি। তবে তাকে নিয়ে জেলা এবং মহানগরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সীতাকুÐ আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন লায়ন আসলাম চৌধুরী। ২০০৯ সালে তিনি উত্তর জেলা বিএনপির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এরপর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও দেয়া হয় তাকে। টানা প্রায় ৫ বছর উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তৎকালীন সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সরিয়ে দিয়ে তাকে উত্তর জেলা বিএনপির আহŸায়ক করা হয়।
আহŸায়কের পদ পাওয়ার পর প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান কমিটির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সাথে। উত্তর জেলার প্রতিটি উপজেলা এবং পৌরসভায় পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে বিএনপির। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলার প্রতিটি এলাকায় দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাÐে। যিনি নিজ জেলায় দলকে বিভক্ত করে রেখেছেন যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালনে তিনি কতটুকু নিরপেক্ষ থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির সাধারণ কর্মীদের। তবে আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা বলছেন, বড় দল হিসেবে নেতাদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি থাকবে সেটা স্বাভাবিক।
তাদের অভিমত, দলের প্রতি আস্থাশীল এবং বয়সে তরুণ হওয়ায় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করতে পারবেন আসলাম চৌধুরী। তার অনুসারীদের মূল্যায়ন বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে আসলাম চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা সীতাকুÐের কর্মী-সমর্থকেরা যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তার প্রতিদান পেয়েছেন তিনি। আসলাম চৌধুরীর যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার নেপথ্যে সীতাকুÐের তৃণমূল নেতাকর্মীদের রক্তঝরা আন্দোলনের প্রতি দলীয় চেয়ারপারসনের সমর্থন হিসেবে দেখছেন তার অনুসারীরা।
তরুণ এ দুই নেতা গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদ পাওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উচ্ছ¡সিত। দুই নেতার বাড়িতে নেতাকর্মীদের ভিড় লেগেই আছে। ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জেলা এবং মহানগরের নেতারাও তাদের দু’জনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ দুই নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়াও দুইজনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সামশুল আলম, সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে দলের স্থায়ী কমিটিতে কারা আসছেন এ নিয়ে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নগর বিএনপি সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান স্থায়ী কমিটিতে আসছেন এ আলোচনা অনেক দিন থেকে। যুগ্ম মহাসচিব থেকে বাদ পড়া সালাহউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটিতে আসছেন এমন গুঞ্জনও চলছে জোরেশোরে। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর রহস্যজনকভাবে ভারতে তার সন্ধান মেলে। সে দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে একটি মামলার বিচার চলছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকাকালীন সময়ে অসুস্থ হওয়ায় সেখানে তার চিকিৎসাও চলছে। বিএনপির তরুণ এ নেতা চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। তার সমর্থকদের প্রত্যাশা ত্যাগের মূল্যায়ন পাবেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে চাইছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি, পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির সভাপতি একই সাথে দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তিনি। তার অনুসারীদের প্রত্যাশা, স্থায়ী কমিটি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে তাকে দেখা যেতে পারে।
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়েছেন গোলাম আকবর খন্দকার। তবে তিনি আরো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তার অনুসারীরা। তিনি নিজেও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদ পেতে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন গোলাম আকবর খন্দকার।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা এম মোরশেদ খান, মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান শামীম, জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, গাজী শাহজাহান জুয়েল, এস এম ফজলুল হক, সরওয়ার জামাল নিজাম, ডা: খুরশিদ জামিল চৌধুরী, নারীনেত্রী নূরিআরা সাফা, রোজী কবির, ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে এম মোরশেদ খান দীর্ঘদিন থেকে দলে রয়েছেন। দলের নেতারা একসঙ্গে একাধিক পদে থাকতে পারবেন না গঠনতন্ত্রে এমন নিয়ম হওয়ায় মহানগর এবং জেলা নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে তদবির অব্যাহত রেখেছেন। সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে চলে যাওয়ার পর তাদের শূন্য আসন পেতে জুনিয়রদের লড়াইও বেশ জমে উঠেছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের পদ পেতে দৌড়ে আছেন কয়েক ডজন নেতা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলকে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘাঁটি মনে করে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এ পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রামের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে ছিলেন। নতুন কমিটিতেও এ অঞ্চলের নেতাদের অনেকে ঠাঁই পাবেন এমন প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।