পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : জটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ থেকে খালাসের হারের তুলনায় ডেলিভারি পরিবহন কমে গেছে। আমদানিকারক বা কনসাইনীরা তাদের পণ্যসামগ্রী ডেলিভারি গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরে ভারী যন্ত্রপাতি (ইকুইপমেন্টস) এবং টার্মিনাল, ইয়ার্ড-শেড, জেটি-বার্থসহ সামগ্রিকভাবে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা সীমিত হয়ে আছে দীর্ঘদিন। এতে করে ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় এবার বন্দরে কন্টেইনার ও খোলা সাধারণ পণ্যের (ব্রেক বাল্ক কার্গো) জট পরিস্থিতি বেসামাল আকার ধারণ করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইই্উএস-এর (২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের একক হিসাবে) বিপরীতে গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৮ হাজার ৪৬২টিই্ইউএস কন্টেইনার মজুদ জমে গেছে। আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৫৭ টিইই্উএস-এর স্থলে ৩২ হাজার ৮১ টিইই্উএস জমেছে। একক আমদানিকারকের পণ্যভর্তি কন্টেইনারের (এফসিএল) ২২ হাজার ৪৮৫ টিইই্উএস ধারণক্ষমতার বিপরীতে মজুদ তৈরি হয়েছে ২৫ হাজার ৪৭৬ টিইই্উএস।
কন্টেইনারজাত পণ্যসামগ্রী ও খোলা কন্টেইনারের মজুদ বৃদ্ধির প্রভাবে জাহাজের জট তৈরি হতে পারে। বর্তমানে বন্দর ও বহির্নোঙরে মোট ৬২টি জাহাজ পণ্যসামগ্রী বোঝাই অবস্থায় রয়েছে। জেটি-বার্থ, টার্মিনাল ও ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনার খালাসের গতি আরও ধীর হয়ে পড়লে জাহাজকে পণ্যসামগ্রীর কন্টেইনার খালাস এবং শিপমেন্টের জন্য অলস অপেক্ষায় থাকতে হবে। তখন জাহাজের জট সৃষ্টি এবং এতে করে ডেমারেজ বা পরিচালনে বাড়তি ব্যয় বাবদ লোকসান গুণবে অপেক্ষমান জাহাজ। তবে কনসাইনী বা আমদানিকারকদের পণ্য ডেলিভারি নেয়ার গতি কিছুটা ধীর হলেও এখন পর্যন্ত বন্দরে জাহাজ জটের কোন আশঙ্কা নেই বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ সময়মতো পণ্য ডেলিভারি গ্রহণ করতে গার্মেন্টস শিল্পোদ্যোক্তা, আমদানিকারক-ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (অফডক) মালিকদের সহযোগিতা চেয়েছে।
অপরদিকে বন্দর ব্যবহারকারী তথা স্টেক হোল্ডাররা পণ্যসামগ্রী খালাসে বন্দরের যান্ত্রিক, অবকাঠামোর ঘাটতি ও বিভিন্ন সমস্যা-সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আহŸান জানান। গত ৩ জুন রোববার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের সাথে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সমিতি-সংগঠনের বৈঠকে সম্ভাব্য বন্দরজট পরিস্থিতি এড়াতে ঈদের ছুটিতে বা তার আগে-পরে পণ্যসামগ্রীর ডেলিভারি পরিবহন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার গোলাম সারওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্যভর্তি কনটেইনার (এলসিএল) দ্রæততর সময়ের মধ্যে আনস্টাফিং করা, ডেলিভারি শেডে পর্যাপ্ত জায়গার বরাদ্দ, এলসিএল পণ্য মজুদে সমন্বয় ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত গুলো সুন্দরভাবে রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা একমত হন। সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বন্দর ব্যবহারকারীদের সমস্যাবলী দ্রæত সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। সভায় জানানো হয়েছে, ঈদের আগে-পরে অনেক দিন ধরে গার্মেন্টস পণ্যসামগ্রী যথাসময়ে খালাস ও ডেলিভারি নেয়া হয় না। এতে করে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়। অথচ গার্মেন্টস কারখানাগুলোর নিজস্ব বাণিজ্যিক শাখা চালু রাখা হলে পণ্য ডেলিভারি দ্রæতায়িত করা সম্ভব। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম চেম্বার ও পোর্ট ইউজারস ফোরামের নেতৃবৃন্দ বন্দরে আমদানিকৃত খোলা সাধারণ (বাল্ক) পণ্যসামগ্রী খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন কার্যক্রম দ্রæতায়িত করার জন্য পল্টুন জেটি স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তবে লাইটারেজ কার্গো জাহাজের ঘাটতির কারণেও খোলা সাধারণ কার্গো খালাসে সময়ক্ষেপণ এবং খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান আমদানিকারকগণ।
অনেক সময় অফডকের অবহেলা, অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণেও কন্টেইনারজাত পণ্যসামগ্রী খালাস ডেলিভারি পরিবহন বিলম্বিত হচ্ছে। যা বন্দরে জটের অন্যতম কারণ। বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, শুধু ঈদের দিনে আংশিক সময় ছাড়া সার্বক্ষণিক বন্দর কার্যক্রম খোলা রাখা হয়। আমদানি-রফতানিকারকদের পণ্য খালাস, ডেলিভারি পরিবহনের সুযোগ দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের সবরকম সেবা প্রদানের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের বক্তব্য হলো, শুধুই চট্টগ্রাম বন্দর খোলা রাখা হলেও বন্দর-নির্ভর সরকারি-বেসরকারি শিপিং অফিস, শিপিং কোম্পানি ও এজেন্টস, কাস্টমস, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং, সিএন্ডএফ এজেন্টস, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ, মেইন লাইন অপারেটর, বিএসটিআই, কোয়ারেন্টাইন, পরিবহন এজেন্টস ইত্যাদি বিভাগ বা শাখাসমূহ সার্বক্ষণিক বিশেষত রোজার শেষ দিক থেকে ঈদের ছুটি পর্যন্ত সচল রাখা হলে বন্দরের ডেলিভারি পরিবহন কার্যক্রমে গতিশীলতা বজায় থাকবে।
এদিকে ঈদের আগেই চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কন্টেইনার খালাসের তুলনায় ডেলিভারি পরিবহনে ভাটা পড়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি পণ্যবাহী এফসিএল কন্টেইনারের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এফসিএল কন্টেইনার ডেলিভারির ধীরগতিতে জটের আলামত তৈরি হয়েছে। বন্দরের সাথে কাজে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজে-কর্মে গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে ঈদের অনেক আগে থেকেই। এক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে সার্বিক সমন্বয়হীনতা। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেইনার মোভার, ট্রেলার, ভারী ও মাঝারি ধরনের যন্ত্রপাতি চালক-শ্রমিকদের অধিকাংশই যেন ছুটির আমেজে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। অনেক সময়ই সুযোগ বুঝে ঈদের বকশিশ, স্পিডমানির নামে দুর্নীতিবাজ চক্র ঘুষ হাতিয়ে নিচ্ছে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বন্দরের সার্বিক উৎপাদনশীলতা ও গতি থমকে গেছে। ঈদের আগে-পরে কয়েক সপ্তাহ বন্দরে জট পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠতে পারে।
পণ্য বা কন্টেইনার ও জাহাজের জট যে কোন সমুদ্রবন্দরের সুনামহানি ঘটে। কোন বন্দরে স্বচ্ছন্দে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে অন্তত ৩০ শতাংশ স্থান, ধারণক্ষমতা ও অবকাঠামো খালি রাখার বিধি-বিধান রয়েছে আঙ্কটাড ও অন্যান্য পোর্ট-শিপিং কনভেনশনে। অথচ দুই ঈদসহ বিভিন্ন সময়েই চট্টগ্রাম বন্দর পণ্যভারে উপচে পড়ে। জট সামাল দিতে হিমসিম অবস্থায় পড়ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জটের বিপরীতে বিভিন্ন ধরনের মাশুল ও বন্দর-ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে শত শত কোটি টাকার এই ক্ষতি ব্যবসায়ীদের দিতে হলেও পরবর্তীতে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্য, সেবাপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে তার খেসারত গুণতে হয় ভোক্তা সাধারণকেই।
চট্টগ্রাম বন্দর-শিপিংয়ে প্রবৃদ্ধির সমানুপাতে জেটি-বার্থ, টার্মিনাল, ইয়ার্ড-শেড, যান্ত্রিক সরঞ্জামসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো সুবিধা বাড়ছে না। বরং সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। গতবছর ৮ কোটি মেট্রিক টন সাধারণ কার্গো এবং প্রায় ২৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। অথচ প্রয়োজনীয় জেটিবার্থ, টার্মিনাল, যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্ট সঙ্কটে ধুঁকছে বন্দর দীর্ঘদিন। চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে চাহিদার উপযোগী জেটিবার্থ, টার্মিনালসমূহ নির্মাণ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুলে আছে। এ প্রকল্পে যন্ত্রপাতির রয়েছে ১০টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, ২০টি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন, পর্যাপ্ত স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রীচ স্ট্র্যাকার, কন্টেইনার মোভার, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন প্রভৃতি। অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, যান্ত্রিক সরঞ্জামের বিরাট অংশ ইতোমধ্যে বন্দরে সংযোজিত হয়েছে। গত এক বছরে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। আরো বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া প্রস্তাবিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), বে-টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে বন্দরে অবকাঠামো সমস্যা নিরসন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।