Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্রব্যমূল্য ও নতুন করে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে উত্তাল জর্ডান : বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ’র কথামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন করে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে টানা কয়েকদিনের উত্তাল বিক্ষোভের মুখে জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী হানি মুলকি পদত্যাগ করেছেন। সোমবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
গত মাসে জর্ডানের সরকার একটি আয়কর আইনের খসড়া প্রস্তাব করে। আইনটি এখন সংসদে পাস হয়নি। এই আইনে ব্যক্তিগত আয়কর ৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর ওপর ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রতিবাদেই রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। গত কয়েক বছরের জর্ডানে এটাই বড় ধরনের বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী স্লোগান, সড়ক অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৭২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্ত অনুযায়ী অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেয় জর্ডান। স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ দেশটি অনেক দিন ধরে বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছে। এরমধ্যে গত জানুয়ারি মাস থেকে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে এসব পণ্যের ওপর আরও কর বাড়ানো হয়েছে। এই বছরে জ্বালানি তেলের দাম ইতোমধ্যে পাঁচ দফা বাড়ানো হয়েছে আর গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের দাম ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মুলকি আইএমএফ সমর্থিত করবিলটি বাদ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার পার্লামেন্টের। সরকার বলছে, সরকারি সেবা দেওয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজন এবং নতুন করারোপের ফলে ধনীরা বেশি কর দেবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মুলকিকে ডেকে পাঠান বাদশাহ আব্দুল্লাহ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেন বাদশাহ।
গত বুধবার দেশটির ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে সরকার পতনের ডাক দেওয়ার পর থেকে পুরো জর্ডানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী আম্মান থেকে শুরু করে অন্যান্য শহরের সড়কেও মানুষের ঢল নামে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘নারীরা ডাস্টবিনে তাদের সন্তানের জন্য খাবার খোঁজা শুরু করেছেন। প্রতিদিন আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন নতুন টাক্সের সম্মুখীন হচ্ছি।’ ব্যাংকে চাকরিরত মোহাম্মদ শালাবিয়া বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা সরকারকে বলতে চাইছেন, এই ধরনের আইনের সঙ্গে নাগরিকদের আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর আমাদের বিক্ষোভের অধিকার রয়েছে।’
রবিবার বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের কাছে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হানি মুলকিকে পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, নতুন প্রস্তাবিত ট্যাক্স বিল বাতিল করা হলেই তারা ফিরে যাবে। গত মাসে বিলটি মন্ত্রিসভা থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠানো হয়েছে। সমালোচকদের দাবি, বিলটি পাস হলে জর্ডানের স্বাভাবিক জীবন-মান কমে যাবে।
বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রিসভার কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা সেøাগান দেন, ‘বিলটি বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো। এই সরকার নির্লজ্জ’। বিক্ষোভকারীরা জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে সেøাগান দেন, ‘আমাদের দাবি বৈধ। আমরা দুর্নীতির পক্ষে নই।’ রবিবার সকালে আম্মানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ অবস্থান নিলে নিরাপত্তা কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভকারী সেখানে গাইতে শুরু করেন, ‘আমরা পরাজয় মানবো না।’ সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ