বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঈদের আগে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ চারলেন মহাসড়ক খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও এর কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগবে আরও। তাই বরাবরের মতো এবারের যাত্রায়ও ভোগান্তি আশঙ্কা থাকছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাসড়কে। বরং তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন এ পথের যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
তবে পুলিশ ও প্রশাসন আশা করছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার এই মহাসড়কে ভোগান্তি কম হবে। নির্বিঘ্নে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারবে উত্তরের পথের যাত্রীরা। মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেভাবেই বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
রাজধানী সঙ্গে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ পথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গসহ ২৬টি জেলার হাজারো যানবাহনের চলাচল করে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদের আগে-পরে এই মহাসড়কে ভোগান্তি একরকম নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঈদ মৌসুমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে ওঠে এক দুশ্চিন্তার নাম।
এবারের অবস্থা কেমন? মহাসড়কের কোথাও ভালো, কোথাও যান চলাচলের অনুপযোগী। ভাঙাচোরা রাস্তায় ধুঁকে ধুঁকে চলে যানবাহন। তার মধ্যে ধুলোর রাজ্য। দুই ঘণ্টার রাস্তা লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা। ঈদ মৌসুমে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে গাড়ির চাপ বাড়ে কয়েক গুণ। তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়।
রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যাতায়াত সহজ করতে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে এবারও ঈদে নির্বিঘেœ বাড়ি যাওয়া ও কর্মস্থলে ফেরা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা এই পথের যাত্রী ও চালকদের।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারলেনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, পৌলি, রসুলপুর, পাছবিক্রমহাটি, নগরজলপাই, ঘারিন্দা, করটিয়া, পাকুল্লা, মির্জাপুর, হাঁটুভাঙ্গা, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, বাইপাল-আব্দুল্লাহপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। নির্মাণকাজ চলার সময় বর্ষণের ফলে মহাসড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে এমনিতেই ধীরগতি।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতির এলেঙ্গা পর্যন্ত চলছে চার লেনের কাজ। সড়কের এক পাশ দিয়ে চলছে যান চলাচল। ফলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ছে শত শত গাড়ি। মহাসড়কের চারলেনের কাজ যদিও দ্রুত গতিতে হচ্ছে, তবে ঈদের আগে শেষ হবে না কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা কয়েক কিলোমিটার চার লেন কাজ শেষ তো এরপর অসম্পন্ন সেতু বা অসম্পন্ন চারলেন। ফলে যানবাহনকে কিছু রাস্তা দুই লেন সড়কে চলতে হয়। ঈদের আগে যানবাহনের চাপ বাড়লে দুই লেনে বাড়তি গাড়ির চাপ পড়বে। আর সেটা সামাল দেয়া কঠিন হবে।
তবে চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জিকরুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় থাকা কয়েকটি অংশের রাস্তা ও বেশির ভাগ সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। আশা করি কোনো ধরনের যানজট হবে না এবার।
এদিকে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে মহাসড়ক সংস্কারসহ যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি প্রায়ই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ি আটকে পড়ে। এ থেকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
জানা গেছে, এই মহাসড়কে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ে ৫-৬ গুণ। এ ছাড়া ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে ঢাকা-উত্তরবঙ্গের ১২টি ট্রেন দিনে ২৪ বার যাতায়াত করে। এতে সারা দিনে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এর ফলেও ঈদের আগে মহাসড়কে যানজট হবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। রেললাইনে ওভার ক্রসিংগুলো সম্পন্ন হলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করেন চালকরা।
উত্তরবঙ্গে চলাচল করা হানিফ পরিবহনের চালক হুমায়ুন জানান, সড়কের বেহাল দশা আর নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে এখনই যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, ঈদের ছুটিতে ভোগান্তি আরও বাড়বে। তবে যানজট নিরসনে যদি জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকে তাহলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাস চালান সুমন সাহা। রাস্তার হাল অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বেলন, ‘বর্তমানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ রয়েছে। অন্যদিকে মহাসড়কে চলছে চারলেনের কাজ। ঈদের আগে সড়কের খানাখন্দ ঠিক করা না হলে এবং চারলেনের কাজ সম্পন্ন না হলে এই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হবে।
টাঙ্গাইল-গাজীপুর মহাসড়কে চলাচল করা জনতা পরিবহনের চালক নুরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিবছরই ঈদযাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রার আগে মহাসড়কের মেরামতের কাজ শেষ না হলে এবারও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যানজটের সৃষ্টি হলে টাঙ্গাইল থেকে গাজীপুর যেতে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যায়। কোনো কোনো সময় আরো বেশি সময় লাগে। অন্য সময় পথ দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় যাওয়া যায়।
রাবনা বাইপাস থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কে ভাঙাচোরা রয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু সেতুগামী লোকাল বাসের চালক মো. ফারুক জানান। তার ভাষ্য, এখনই প্রায়ই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদযাত্রায় পরিস্থিতি কি হবে এ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
এসব আশঙ্কার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আছে বলে জানান টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল এহসান। তার আশা এবার যানজটমুক্ত থাকবে মহাসড়কটি। তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারে এবং স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারে, সেজন্য ৮ জুনের মধ্যে চার লেন খুলে দেয়া হবে।’
আর এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আজিজুর রহিম তালুকদার বলেন, যানজটের কথা মাথায় রেখে ১৫ রোজা থেকে এ ব্যাপারে তারা কাজ শুরু করেছেন। গেলো বছরগুলোর চেয়ে এবার মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বাড়ানো হচ্ছে। মোটরসাইকেল করে পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করছে।
মহাসড়কে যানজট রোধে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মোশারফ হোসেন বলেন, ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে ছিনতাই রোধ ও মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে তৎপর থাকবে পুলিশ।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল হক বলেন, যানজট নিরসনে পুলিশ মহাসড়কে সব সময়ই সর্তক অবস্থানে থাকবে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, থানা পুলিশসহ সাত শতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করবে মহাসড়কে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। আশা করছি এ বছর মহাসড়কে যানজট থাকবে না।
তবে মহাসড়কে ঈদযাত্রায় গাড়ির সংখ্যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে ৫-৬ গুণ বৃদ্ধি পায় জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত বছর ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১ হাজার গাড়ি পারাপার হয়েছে। এটি বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে তখন পর্যন্ত রেকর্ড।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় জানান, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে এবং ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারেন তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।