পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই পানিজট-যানজট। স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই রাজপথ ও অলি-গলিতে পানি জমে যায়। এ পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা বিপুল পরিমান বর্জ্য। এতে নাগরিকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায়। পানি জমতে যে সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় লাগে পানি সরতে। এ জন্য নগরবাসী দুষছেন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না। দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খানাখন্দক ও খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে আছে। কোথয় সমতল আর কোথায় খানাখন্দক বুজার উপায় নেই। এ সব সড়কে প্রতিদিন অহরহ ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গতকালের বৃষ্টিতে এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারীদরে পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা অফিসে বহু অভিযোগপত্র জমা পড়েলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রাজধানী ঢাকাকে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তাও মুখ থুবড়ে বড়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল ইনকিলাববে বলেন, ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাষণের প্রধান দায়িত্ব ওয়াসার। কারণ ঢাকা শহর থেকে বড় অংকে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম স্যুয়ারেজের দায়িত্ব তাদের কাছে। আমাদের কাছে শুধু মাত্র কিছু ছোট খাট ড্রেনের দায়িত্ব।
বর্ষা মৌসুম শুরু হতে আরও বারদিন বাকি। শেষ জ্যেষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে নগরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত। রমজানের এইদিনে সবাই একটু শস্তির আশায় অপেক্ষা ছিলেন, কখন নামবে বৃষ্টি। গত কয়েকদিন ধরেই তিব্র তাপদাহের পর বৃষ্টির শস্তি মিললেও নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ। এ বর্ষাতে নগরবাসীকে সীমাহিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে এমন আশঙ্কা আগেই করেছিলেন নগর বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবারের মাত্র ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই রাজপথে নেমেছে নৌকা। বর্ষার আগেই সামান্য বৃষ্টিতে ময়লা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকার অনেক সড়ক। কারণ অত্যন্ত ধীর গতিতে সংস্কার কাজের কারণে অনেক সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। খানাখন্দ দুর্ভোগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। বৃহস্পতিবার প্রায় তিন ঘণ্ট বৃষ্টি হয়েছে। আবার গতকাল শুক্রবার দুপুরের বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক সড়কে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। এই বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে যানজটও। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। রাজধানীর মিরপুরে বেগম রোকেয়া সম্মরনীতে নৌকা নামাতে বাধ্য হয়েছেন লোকজন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মীরপুর, শ্যামলি, পল্লবী, তালতলা, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সড়ক জুড়ে বৃষ্টির পানির ঢেউ। গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে সড়কে পড়ে আছে। সড়কের কোথাও কোথাও যানজট রয়েছে। পানির মধ্য দিয়ে পথচারীরা হেঁটে চলাচল করছেন।
অপরদিকে, দারুস সালাম, ক্যান্টনমেন্ট, কালশি, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি-২৭, হাজারীবাগ, শংকর, জিগাতলা, রায়েরবাজার ও পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডসসহ বেশ কিছু স্থানে পানিবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় যারা ঘর ছেড়ে কাজে বাইরে বের হয়েছেন, তাদের সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরো সড়কটি হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে। পানিতে ডুবে থাকা সড়কের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছিল ঢেউ। কাজী পাড়ার বাসিন্দা আবু সালেহ সাহাদাত বলেন, জুমার পর একটা কাজে মীরপুর ১০ নম্বরে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখি পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে আছে। যানবাহনও অনেক কম। কয়েকটি গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পরে বাধ্য হয়ে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে কাজে গিয়েছি। পানি জমলে বেগম রোকেয়া সরণিতে কাজী পাড়া নৌকা নেমে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় কাজ করার জন্য আমাদের অঞ্চল ভিত্তিক কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। তারা সড়কের বিভিন্ন ম্যানহোল ও ড্রেন উন্মুক্ত করে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ডিএসসিসি এলাকায় পানিবদ্ধতা তেমন একটা নেই।
বর্তমানে রাজধানীর ১৩টি স্থানে পানিবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া, প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা হবে। এজন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সমপ্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পানিবদ্ধতা নিরসন করা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানীর গুলিস্তান, সিদ্দিক বাজার, বাবুবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্নি এলাকায় সড়কে পানি থৈ থৈ করছে। পুরাতন ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রæত নিষ্কাশন হতে না পেরে মুল সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এছাও মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে বহুদিন ধরে। যে কারণে বেশ কিছু সড়ক এখন চলাচলে একেবারই অযোগ্য। তাই রাজধানীর রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রথানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিনদিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
রাজধানী পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রাজন খান বলেন, এ এলাকার ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইনের ত্রুটির জন্য প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। বেশি বৃষ্টি লাগে না, হালকা বৃষ্টিই যথেষ্ট হাঁটু পানি হওয়ার জন্য। ড্রেন দিয়ে তো পানি যায়-ই না, বরং ড্রেনের ময়লা ওই পানির সঙ্গে মিশে যায়। স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা খুলে রাখলেও পানি যায় না, বরং মল-মূত্র ভেসে ওঠে।
কুড়িলের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি হলে বন্যার মতো আবস্থা হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। চল্লিশ বছরের ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন পুরোপুরি অকেজো। একবার পানি উঠলে সপ্তাহখানেকের আগে নামে না। অপবিত্র পানির জন্য বাসা থেকে বের হতে পারি না। আজান দিলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি না। শুধু আমি কেন, এলাকার কেউই মসজিদে যেতে পারেন না। তার ওপর এ ময়লা পানি যদি মসজিদের সীমানা পর্যন্ত চলে যায় তাহলে পবিত্রতা কীভাবে রক্ষা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।