Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৃষ্টি ও যানজটের দুর্ভোগে নগরবাসী

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বৃষ্টি ও যানজটের দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীবাসী। সড়কের অবস্থাও বেহাল। রাস্তায় নেমেই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে যানজটের দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় ছিল অসহনীয় যানজট। ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। 

গাড়ির চাকা যেন ঘুরতেই চায় না। এক মিনিট চলেতো ২০মিনিট থেমে থাকা। স্কুলে যাওয়া শিশুরা, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া ছাত্রছাত্রী, অফিস আদালতসহ নানা প্রয়োজনে মানুষ রাস্তায় নেমেই পড়েছে দুর্ভোগে। কোথায়ও যানজট আবার কোথায়ও যানবাহনের সঙ্কট। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর অলিগলি ও রাজপথে কাঁদা পানি মিলে একাকার হয়েগেছে। আর এতে নগরবাসী পড়েছে ভোগান্তিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানগুলোতে পানি জমে আছে। সেই পানিতে ভাসছে নোংরা-আবর্জনা।
বিশেষ করে নগরীর শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, আরামবাগ, বাড্ডা, রামপুরা ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে পানি জমে পানিজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহনে ভোগান্তি বেড়েছে। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর থেকে হালকা বৃষ্টি হলেই রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পানি জমে যায়। পুরো রাস্তাজুড়েই কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পরিমাণ পানি। আর তাতে যান চলাচলের এমনই অবস্থা হয় যে, সাধারণ জনগণকে বাস ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে উঠতে হয় ভ্যান, রিকশা অথবা নৌকায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে সারাদিন আবারও সে দুর্দশা পোহালো মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা। এদিন রাস্তাঘাটে পানিবদ্ধতার কারণে কর্মজীবী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দেখা গেছে সড়কজুড়ে বৃষ্টির পানির ঢেউ।
কাজীপাড়ার বাসিন্দা শাহ নেওয়জ বলেন, নতুন করে কিছু বলার নেই এখন। ইদানিং একটু বৃষ্টি হলেই কাজীপাড়ার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। আজ যেন আরও বেশি খারাপ অবস্থা। পানিবদ্ধতার কারণে সকাল থেকে মানুষ কর্মক্ষেত্রে যাবার জন্য বের হলেও যেতে পারছে না।
আক্ষেপ প্রকাশ করে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা তৈমুর রহমান বলেন, ভোগান্তির তো আর শেষ নেই এখন। বাস চলছে না, আটকে আছে। বাধ্য হয়েই নৌকায় পার হলাম ৫০ টাকা দিয়ে। কিন্তু এরপর আবার বাস পাবো কি না জানি না!
একটু বৃষ্টি হলেই এ এলাকায় জমে যায় কয়েক ফুট পানি। রাস্তায় নেমে অনেক প্রাইভেটকার ও গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে পানি ঢুকে যায় গাড়ির ভেতরেও। আর পানিবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে এ এলাকার কর্মজীবী মানুষ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং করতে ঢাকার মিরপুর পল্লবীতে এসে উঠেছে যশোরের সাবিহা ইয়াসমিন। এমনিতেই সে অস্বস্তি বোধ করে ঢাকা শহরের জ্যামে। তার উপর আজ কোচিং শেষ করে বাসায় ফেরার পথে কাজীপাড়ার পানিবদ্ধতা দেখে বেশ হতবাকই হয়েছে সে। রাস্তার পানিবদ্ধ অংশ পার হতে ভ্যানে ওঠার পর তার নাভিশ্বাস যেন আরও বেড়ে যায়।
কথা হলে ইয়াসমিন বলেন, ঢাকার দুর্ভোগের কথা এতদিন টিভিতে দেখেছি, পত্রিকায় পড়েছি। কিন্তু তা যে একটা ভয়াবহ, তা এখন টের পাচ্ছি। এই দেখেন না, বাসগুলোর সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়েই চলছে নৌকা আর ভ্যানগুলো। এভাবে রাস্তায় চলা সত্যি অনেক বিপদজনক ব্যাপার।
এদিকে মিরপুর-১২, ১১, ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা ও আগারগাঁওয়ের সড়কজুড়ে দিনরাত নির্মাণযজ্ঞ চলছে মেট্রোরেলের। এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়া এ এলাকাগুলোতে প্রকল্পের পাইলিংয়ের জন্য বসানো হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রেন, এসকেভেটর ইত্যাদি। আর মেট্রোরেলের এ কাজের কারণে পানিবদ্ধতার ভেগান্তি বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
কয়েকজন বাস চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি অংশ ব্যারিয়ার দিয়ে বন্ধ রেখে নির্মাণ কাজ করার কারণে অনেক ছোট হয়ে গেছে রাস্তা। আর যানবাহনের চাপ তো বাড়ছেই। ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বৃষ্টি হলে কনক্রিটের ব্যারিয়ারের কারণে পানিও আটকে যাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগ।
এদিকে সড়কের বিভিন্ন ম্যানহোল ও ড্রেন উন্মুক্ত করে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছে সিটি কর্পোরেশন।
দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় কাজ করার জন্য অঞ্চলভিত্তিক কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। বর্তমানে রাজধানীর ১৩টি স্থানে পানিবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্প এলাকায় খাল খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা হবে।
এছাড়া নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার পানির সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজ চলমান থাকায় খোঁড়া গর্তে পানি জমে সড়কের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পথচারীরা।
বাড্ডা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রাস্তায় কাদা ও নোংরা পানিসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন রাসেল নামের এক কর্মজাবী। তবে শুধু বাড্ডা-মিরপুর কিংবা মালিবাগ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট নানা দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন অনেক পথচারী।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি আর অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলছে। তবে এ দুর্ভোগ লাঘবে সংশিষ্টদের কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আবার কোন কোন এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর ডিএনডি বাঁধসহ বহু এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওইসব এলাকার মানুষকে। পুরান ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবচেয়ে অপ্রতুল। হালকা বৃষ্টি হলেই ড্রেন ভরে রাস্তায় জমে যায় পানি। দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা পানিতেই চলতে হয়ে পুরান ঢাকাবাসীকে। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকারও।
গতকাল বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায়। এছাড়াও পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ি, মানিকনগর, মুগদা, মান্ডা, বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, গোড়ান, সিপাইবাগ, মেরাদিয়া, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার, রমনা, খিলগাও, তালতলা, মিরপুর, পল্লবী, শ্যমলি, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, জিগাতলা, আগারগাঁওয়ের নিচু এলাকা ও গলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
শাহজাহান পুর আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে কথা হয় শিরিন সুলতানার সাথে। তিনি বলেন, বাচ্চাকে রেডি করে বসেছিলাম, বৃষ্টিও থামে না, রিকশাও মেলে না। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি। ওদিকে স্কুলে বাচ্চার পরীক্ষা। অবশেষে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হলো।



 

Show all comments
  • কামরুল ১ জুন, ২০১৮, ৪:২৩ এএম says : 0
    কর্তাব্যাক্তিরা কী এসব দেখেন না ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ