পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি/ ---শুক্লা দ্বাদশীর দিন--/ --তারপর -- অমাবস্যা চলে গেলো/ ---পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি/ -- নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদা ঠাকুর/ তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো/ --লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা/ ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি, ভিতরে রাস-উৎসব/ --দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়/ বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম/ তবু কথা রাখেনি’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতার মতোই হয়েছে যেন তিস্তা চুক্তির পরিণতি। কবির ভিখারীর মতো দাঁড়িয়ে অন্যের লজেন্স চোষা দেখা; ২৫ বছর প্রতিক্ষা; ১০৮টা নীল পদ্ম সবগুলো উপমাই ‘ঝুলন্ত তিস্তা চুক্তি’র সঙ্গে যায়। ৩৩ বছর নয় তিস্তা চুক্তির জন্য ৩৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের মানুষ। ২৫ নয়, ২০১১ সালে ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় থেকে ৮ বছর ধরে ‘তিস্তা চুক্তি’র জন্য প্রহর গুনছি। ১০৮ নীল পদ্ম খুঁজে আনার মতোই ট্রানজিট, সমুদ্র বন্দর, সেভেন সিষ্টার্সে স্বাধীনতাকার্মীদের দমনে সহায়তাসহ দিল্লী যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। কিন্তু কবিতার ‘নাদের আলী’ চরিত্রের মতোই ড. মনমোহন সিং, নরেন্দ্র মোদী কেউ কথা রাখেননি; তিস্তা চুক্তি হয়নি। হালে গুজরাটের কসাইখ্যাত নরেন্দ্র মোদী যেন সাক্ষাৎ সুশীলের কবিতার নাদের আলীর প্রতিচ্ছবি। হিন্দুত্ববাদী এই নেতার চলনেবলনে গুরুগম্ভীব ভাব; যেন উপমহাদেশের রাজনীতির মহানায়ক। বাস্তবে গুজরাটের কসাই আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী জগতের বাইরে বের হতে পারেননি। হিন্দি-বাংলার মিশ্রনে কথা বলে বাহবা নেন; কিন্ত রাজনীতিতে কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেন না। মোদী এক বছর আগে শেখ হাসিনাকে কথা দিয়েছিলেন মূখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কথা বলে তিস্তা চুক্তি করবেন। কিন্তু নাদের আলীর মতোই তিনি কথা রাখেননি; প্রতিবেশি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া কথা রাখার চেস্টাও করেননি। এমনকি তিনি শান্তিনিকেতনে শেখ হাসিনা ও মমতার ব্যান্যার্জীকে একমঞ্চে পেয়েও ‘তিস্তার পানি’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি।
ক্যালেÐারের পুররো পাতা উল্টালে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেছেন দিল্লী সফরে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করছেন। পাশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আগের দিন ৭ এপ্রিল ভারতের হায়দারাবাদ হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কথা দিয়ে বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি হবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেই’। শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই প্রধানমন্ত্রীর ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদী আরো বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, আশা করি শীঘ্রই তিস্তার জট কাটবে।’ শেখ হাসিনার ওই ভারত সফরে দু’দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সবগুলো চুক্তিই হয়েছে কার্যত ভারতের স্বার্থে। সংবাদ সম্মেলনের পর নরেন্দ্র মোদী টুইট বার্তায় লেখেন, ‘তবে এত কিছুর (২২ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি) পরও বাংলাদেশের কাছে বড় প্রত্যাশা হয়ে থাকছে তিস্তা চুক্তিই। গত ৩৪ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি। পরের বছরই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। সেই ভোটে বাংলাদেশের সা¤প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি হাসিনার পক্ষে বড় হাতিয়ার সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে তিস্তা চুক্তি হয়ে গেলে নিঃসন্দেহে তা তাঁর (শেখ হাসিনা) সাফল্যের মুকুটে বড় পালক হয়ে উঠবে।---’। সেদিন মোদির এসব ঠকবাজি কথাবার্তা ও প্রতিশ্রæতি যে ছিল নিছক ধাপ্পাবাজী তা কারো বুঝতে বাকী নেই।
শুক্রবারের শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরপুর। আনন্দঘন পরিবেশে সেখানে বক্তৃতায় রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদী ও মমতা ব্যানাজী উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে আমি সে সব বিষয় তুলে এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে ¤øান করতে চাই না।’ এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছে ‘কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেই বার্তা দেওয়ার একটি দারুণ উদাহরণ এটি। ‘তিস্তা’ শব্দটি উচ্চারণ না করেও শেখ হাসিনা তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি তুলেছেন।’ তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতা থাকলে শেখ হাসিনার এই ইংগিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী নদীর পানির ভাগাভাগি নিয়ে মমতার সামনে কথা উঠাতে পারতেন। তাঁর আন্তরিকতার অভাব নেই বরং মমতার কারণে তিস্তা চুক্তি বিলম্ব হচ্ছে প্রমাণ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ‘তিস্তা’ প্রসঙ্গ তোলেননি। বাস্তবতা হলো তিনি নিজেই তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক নন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি তিস্তা চুক্তির না হওয়ার জন্য ‘ছেলে ভুলানোর মতোই’ মমতাকে দায়ী করছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করে তিস্তা চুক্তির জন্য কখনো মোদীর কখনো মমতার কাছে ভিক্ষুকের মতো অনুনয় বিনয় করেছি। এটা কী মোদীর রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজী নাকি ‘কপটতার’ বিজেপি স্টাইল! হায়দারাবাদ হাউজে মমতা ব্যানার্জীকে পাশে রেখে শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদীর তিস্তা চুক্তির ‘কথা দেয়ার’ এক বছর পার হয়েছে। কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি নরেন্দ্র মোদী ২৫ মে শান্তিনিকেতনে শেখ হাসিনার সামনে মমতার উপস্থিতিতে ‘তিস্তা চুক্তি’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। এর নেপথ্যের রহস্য কি? অথচ তিনি প্রচার করেছেন মমতা রাজী না হওয়ায় তিস্তা চুক্তি ঝুলে গেছে। শান্তিনিকেতনে শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জীকে একসঙ্গে পেয়ে কেন তিস্তা ইস্যুর ব্যাপারে কোনো শব্দ করলেন না মোদী? এটা কি তার নিছক ভুলে যাওয়া না রাজনৈতিক কপটতা? নরেন্দ্র মোদী কী রাজনৈতিক হিপোক্রেট? আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, শান্তিনিকেতনে ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা, রোহিঙ্গা কোনো ইস্যু নিয়েই কথা বলেননি। তিনি বলেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য শেখ হাসিনার। এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা করবে ভারত।’ চমৎকার! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছেন। এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল যখন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে তখন মোদী মিয়ানমার সফর করে সুচির সেনাবাহিনীর পাশে থাকার অঙ্গিকার করেছে।
কোলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বর্তমান ‘হাসিনা-মমতা বৈঠকে কি তিস্তা প্রসঙ্গ, এড়িয়ে গেলেন দু’পক্ষই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে ‘চলতি বছরের শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবী ইস্যু হয়ে উঠেছে ‘তিস্তার পানি চুক্তি’। সেই চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে একমাত্র মমতাই যে সহায়ক শক্তি, তা উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু হাসিনা-মমতা বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। কোলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার ‘বাংলাদেশে আসুন, ঢাকার বিমান ধরার আগে মমতাকে ডাক হাসিনার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিস্তা নিয়ে একটা ঐকমত্য হতে পারে, এমন একটা আশা বাংলাদেশের মানুষের ছিল। তবে কোনও চুক্তির সম্ভাবনা যে নেই, ঢাকা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। তারপরও হাসিনা-মমতা বৈঠক নিয়ে ও-বাংলায় (বাংলাদেশে) কৌতূহল ছিল। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অবশ্য এ দিন কলকাতা ছাড়ার আগে বৈঠকের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে গোটা সফরে তিস্তা শব্দটি প্রকাশ্যে একবারও উচ্চারণ করেননি তিনি। এর আগে স্থলচুক্তি নিয়ে সব পক্ষ সহমত হওয়ার পরেও ঠিক হয়েছিল, বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনও কথা বলবেন না। বৈঠক উপস্থিত কূটনীতিকরা স্পষ্ট করে সাংবাদিকদের জানান, শেখ হাসিনা ও মমতা বৈঠকে ‘তিস্তা নিয়ে কোনও কথা হয়নি।’
শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠানের সরাসরি টিভিতে প্রচার করা হয়। খবরে দেখা গেল পবিত্র সরকার নামের শান্তিনিকেতনের এক বুদ্ধিজীবী স্পষ্ট ভাবে বললেন, ভারতের উচিত তিস্তা চুক্তি করা। ৪৪ বছরে বাংলাদেশ যা দিয়েছে ভারতকে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখন ভারতের উচিত তিস্তার পানি দেয়া’। কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা ‘প্রতিদান চান শেখ হাসিনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে,‘দিয়েছেন অনেক, প্রতিদানে এবার ভারতের সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানেই মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চায়। আনন্দবাজার আরও লিখেছে, ‘মোদির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী বলবেন উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা সেরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর দপ্তরের এক সূত্র জানান, হাসিনার বার্তা মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পুবে দুই দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।’ দেশের জনসমর্থন কমে যাওয়ায় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ৫ জানুয়ারী মার্কা নির্বাচনের জন্য দিল্লীর সহায়তা প্রত্যাশা করতেই পারে। কিন্তু তিস্তা চুক্তির যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল মোদী সে ব্যাপারে ‘লা-জবাব’ কেন? তবে কি তিস্তা চুক্তি না হওয়ার দায় মমতার ওপর চাপিয়ে মোদী নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার নেতা ভাবতে শুরু করেছেন? মহত্মা গান্ধীর মতো নেতার দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন চাতুরি কি শোভা পায়? ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।