পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সময় এসেছে তিস্তার পানি নিয়ে ইতিবাচক হবার। ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী ‘তিস্তা’র চুক্তির জন্য যে আশায় ছিল বাংলাদেশ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় বেড়েছে সেই আশার পারদ। অনেকে মনে করছেন, এবার ফলপ্রসূ হবে তিস্তা চুক্তি। দুই দেশের মধ্যে তিস্তা সমস্যার সমাধানে এতদিন যে বাধার দেয়াল ছিল, এবার তা ঘুঁচে যাবে। নবান্নে মমতার দ্বিতীয় মেয়াদেই দূর হয়ে যাবে তিস্তাচুক্তির সব বাধা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে রাজি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গররাজি রয়েছেন। তবে মমতা দ্বিতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। বিজয়ী হওয়ার পর মমতা যেহেতু অনেকক্ষেত্রে তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন, তিস্তার ক্ষেত্রেও তেমনটি হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আমরা ইতিবাচক হতেই পারি। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে, মমতা বাংলাদেশ এসে বলে গিয়েছেন আমার ওপর আস্থা রাখুন। আমরা আস্থা রেখেছি, এখন বাস্তবায়নের আশা করা সঙ্গত বৈকি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের আগে যে চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত ছিল, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তি স্বাক্ষরে বেঁকে বসেন। চার বছর পর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসে তিস্তা নিয়ে তার ওপর ‘আস্থা’ রাখতে বলেছিলেন মমতা। সেসময় তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, তিস্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, আমার ওপর ‘আস্থা’ রাখুন।
এ বছরের ২৭ মে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয়বারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াই ও ভারত উপমহাদেশে শান্তি রক্ষায় অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিতে চাই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা নিতে কলকাতা যান তবে তিস্তার সমাধানই হবে এ সফরের মূল বিষয়। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুৎসই পদক্ষেপ নিতে বলা উচিত। এক্ষেত্রে সফল হতে হলে, কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে আর একটি বিষয়ে স্মরণ করানো উচিত, ১৯৯৬ সালে পদ্মা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল সেখানে নয় নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু গঙ্গা নয়, যে কোনো নদীর পানি প্রত্যাহার বা অববাহিকায় কোনো কিছু করা যাবে না যেটা প্রতিবেশী বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হয়। একটি দেশের কোনো সরকার যখন একটা দলিলে স্বাক্ষর করে তা বাস্তবায়ন করা পরবর্তী সরকারগুলোর দায়িত্ব হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতবাদ কোনোভাবেই ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানি নিয়ে কথা চালিয়ে যেতে হবে। আর এটা রাজনীতিকদেরই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা চুক্তি হতে পারে তিস্তা চুক্তিও হবে বলে আশা করি। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্থিতিশীল, স্বাভাবিক, সত্যিকার অর্থে বন্ধুত্ব চাই। এটি যে আমাদের বাঁচা-মরার সমস্যা তা বোধ করি, ভারত ও পশ্চিমবঙ্গকে বোঝানো খুব একটা কঠিন বিষয় নয়।
ভারতের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে যে একটি তীব্র মাথাব্যথা ও উদ্বেগ ছিল তা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই দৃঢ় হস্তে, কঠিন সিদ্ধান্ত ও ঝুঁকি নিয়ে সমাধান করেছেন। এ জন্যই ভারতের তিস্তাচুক্তির ব্যাপারে মনোভাব ইতিবাচক থাকা উচিত বলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মনে করেন।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তা চুক্তি ও বাস্তবায়ন করে পানি নিয়ে আসার কাজ রাজনীতিকদের ওপরই বর্তায়। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পক্ষে বিপুল জনমত রয়েছে। রাজনীতিকদের কাজ হলো এই জনমত কাজে লাগিয়ে অধিকার আদায় করে নিয়ে আসা। তবে রাজনীতিকরা কীভাবে এগুবে তা বলা দুষ্কর।
তিনি বলেন, তিস্তা নদী যদি পানিশূন্য হয়ে যায় তাহলে তার ইকো-সিস্টেম নষ্ট হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মরে যাবে। এ নদীটি সত্যি-সত্যি মরেও যাচ্ছে। নদীকে কোরামিন দিয়ে হলেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নাই যে বাংলাদেশের জন্য তিস্তার পানির একটা ন্যায্য ভাগ রয়েছে। সকল নদীর মত তিস্তাকেও অববাহিকার দিক থেকে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করতে হবে। উজানের দেশ ও ভাটির দেশ মিলে এ পরিকল্পনা করতে হবে, এককভাবে নয়।
ড. আইনুন নিশাত আরও বলেন, গত বছর জাতিসংঘ প্রণীত ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর অন্যতম হলো পানির অধিকার নিয়ে ৬ নং অনুচ্ছেদটি। এ ৬নং অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ১২টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটির সদস্য শেখ হাসিনাও। এখন বাংলাদেশের জন্য সুযোগ রয়েছে পানির অধিকার নিয়ে কৌশল প্রণয়ন করার। ২০১৮ সালে এ কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, তিস্তাসহ অন্য সকল নদীর পানি ভারত নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো সরায়ে নিতে পারে না কোনো প্রকার চুক্তি ব্যতিরেকে। এ ব্যাপারে আমাদের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। পানি নিয়ে ভারত নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বর্তমানের বিশ্ব বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অভিন্ন নদীর পানি ইস্যু আমাদের মানবাধিকারের মধ্যেও পড়ে। ভারতে খরা চলছে তাদের ক্ষেত্রেও যেমন এটা মানবাধিকার তেমনি বাংলাদেশের জন্যও। এ অবস্থায়, গঙ্গা পানি চুক্তি যেভাবে হয়েছে, সেভাবে অন্য নদীগুলোর জন্য আশু চুক্তি ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা চুক্তি ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপগুলো রাজনীতিকদেরই নিতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা বাস্তবায়নে লেগে থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমরা জাতিসংঘেও যেতে পারি। তবে সেখানে গিয়ে বিশেষ কিছু কাজ হবে না। যা করতে হবে দুই দেশ মিলেই করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।