Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগে নিজের ঘর পরিষ্কার করুন -প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল

৯ বছরেও তিস্তাসহ কোনো নদীর নায্য হিস্যার চুক্তি হয়নি কেন?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

৯ বছরে তিস্তা নদীর এক ফোটা পানির ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের চুক্তি করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসাথে মাদক বিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকে শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছিলো তখনই তারা বলেছিলো যে, এখন এটা (তিস্তা চুক্তি) শুধু সময়ের ব্যাপার। আমরা তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি করতে পারবো। অথচ দীর্ঘ ৯ বছর হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর এক ফোঁটা পানির ব্যাপারেও কোনো চুক্তি হয়নি। গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের ইমান্যুয়েলস কনভেশন সেন্টারে রাজনীতিবিদদের সন্মানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আয়োজিত ইফতার মাহফিলের তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের সাথে পানির নায্য হিস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোরালো দাবি তোলার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে পশ্চিমবঙ্গে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মান করেছে- অত্যন্ত ভালো কথা। সেই সঙ্গে আমাদের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন আমাদের যে পাওনাগুলো রয়েছে, সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলছেন কিনা। আমরা ভারতকে ট্রানজিট, বন্দর নির্মান, সামরিক চুক্তি সবকিছু দিচ্ছি কিন্তু পানির নায্য হিস্যাটুকু পাচ্ছি না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন যে ১৫৮ টি নদী রয়েছে সেই নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, সামরিক চুক্তি হচ্ছে। সীমান্তে যে মানুষদের হত্যা করা হয় সেটাকে বাদ দিয়ে ট্রানজিট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বন্দর নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই কানেকটিভিটির পক্ষে, আমরা অবশ্যই একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সংযোগ স্থাপন হবে তার পক্ষে। একই সঙ্গে তার বিনিময় আমরা কী পাচ্ছি সেটাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা বার বার বলছি, এভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে, জনগণের সাথে প্রতারণা করে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন।
মাদক বিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকে শুরু করুন: মাদক বিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকে শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকবছর ধরে সরকার বিভিন্ন অভিযানের নামে এদেশের নিরহ মানুষদের হত্যা করছে। আজকে আবার নতুন যে অভিযান শুরু করেছেন হঠাৎ করেই রোজার মাসে নির্বাচনের বছরে আপনারা মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। আগে নিজের ঘরটা পরিস্কার করুন। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) ঘরের মধ্যে কত জন আছেন যারা মাদকের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত তাদেরকে আগে নিয়ে আসুন। তাদেরকে নিয়ে আসার পরে হতদরিদ্র মানুষগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। যারা সত্যিকার অর্থে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কিনা বা তাদের যে ভয়াবহ পরিণতি বন্দুক যুদ্ধের নাম করে হত্যা করা, ক্রসফায়ার করা, বিচারবর্হিভুত হত্যা করা- সেটা আইনসম্মত হচ্ছে কিনা, মানবতার বিরুদ্ধে যাচ্ছে কিনা। আজকে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলের কাছে এই অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চালানো হচ্ছে। এটা শুধু মাত্র বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য আরেকটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নির্বাচনী বিধি সংশোধন থেকে বিরত থাকার আহ্বান: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারণায় অংশ নেবার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সংশোধন এনেছে তা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে তারা সংসদ সদস্যদেরকে নির্বাচনের প্রচারণায় নামার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। আমরা খুব স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই বিধি ইসির এই পদক্ষেপ নিসন্দেহে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি সংসদ সদস্যদেরকে প্রচারণায় নামতে দেয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুতেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। সেই কারণে আমরা এটার বিরোধিতা করেছি। আমরা মনে করি যে, এটা এখনো আইন হয়নি। এটা থেকে তারা (ইসি) রিবত থাকবেন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবার কাজ তারা করবেন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসি তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠনের দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়ার কারাগারে রেখে সরকার একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই তাকে বাদ দিয়ে কখনো কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যারা বিএনপি ও ২০ দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছেন তারা অলীক চিন্তা করছেন। এদেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।
এর আগে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড.টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার। ইফতারে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, আনোয়ারা বেগম, মাওলানা রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারোয়ার, আবদুল হালিম, এলডিপি‘র রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, বিজেপির আবদুল মতিন সাউদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শেখ গোলাম আজগর, জাগপা‘র খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, এনপিপি‘র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মো. ফরিদউদ্দিন, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির দুই অংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদি, মাহমুদ খান, ন্যাপের মোস্তফা ভুঁইয়া, মো. শহীদন্নবী ডাবলু, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমূখ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ইফতার করেন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীকে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ