দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
[আরবী ইসলাম শব্দটি সীন, লাম, মীম ধাতু হতে উৎপন্ন। এর বুৎপত্তিগত অর্থ শান্তি, আপোষ, বিরোধ পরিহার। আরবী ভাষার স্বরচিহ্নের তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন আকারে আল কোরআনে একই অর্থে এই ধাতু হতে নিস্পন্ন কয়েকটি পদের ব্যবহার পরিসৃষ্ট হয়। যথা:
১. সালমুন অর্থাৎ যুদ্ধ বিরতির জন্য শান্তির প্রস্তাব। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তার যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবে, ও আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবে, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আনফাল: আয়াত: ৬১)
২. সিলমুন অর্থাৎ ইসলামী বিধান। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ।’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২০৮১)
৩. সালাম অর্থাৎ যুদ্ধ পরিহারের প্রস্তাব আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘সুতরাং তারা যদি তোমাদের নিকট হতে সরে দাঁড়ায়, তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব পেশ করে তবে আল্রাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা অবলম্বনের পথ রাখেন নি।’ (সূরা নিসা: আয়াত ৯০)
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে ‘যদি তারা তোমাদের নিকট হতে চলে না যায়, তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব না করে এবং তাদের হস্ত সংবরণ না করে তবে তাদেরকে যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে, হত্যা করবে, এবং তোমাদেরকে এদের বিরুদ্ধাচরণের স্পষ্ট অধিকার দিয়েছি।’ (সূরা নিসা: আয়াত ৯১)
৪. সালামুন অর্থাৎ শান্তি। ‘আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহŸান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পতে পরিচালিত করেন।’ (সূরা ইউনুস: আয়াত ২৫)
অথবা সালামুন অর্থ শান্তি কামনামূলক মুসলিম অভিবাদন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যখন তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো সালাম। উত্তরে সে বললো-সালাম। তারা তো অপরিচিত লোক।’ (সূরা যারিয়াত: আয়াত ২৫)
অভিবাদন অর্থে তাসলীম শব্দের ব্যবহার আল কোরআনে লক্ষ্য করা যায়। ইরশাদ হয়েছে: ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না।’ (সূরা নূর: আয়াত ২৭)
এই সালমুন ধাতু হতে উৎপন্ন ক্রিয়াপদ ‘আসলামা’ এর অর্থ হলো, সে ইসলাম গ্রহণ করলো, এবং কর্তৃকারকে মুসলিম শব্দের অর্থ হলো ইসলাম গ্রহণকারী। এই দুই পদের ব্যবহার আল কোরআনে ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা যায়।
আল কোরআনে ‘ইসলাম’ শব্দটি মোট ৮ বার এসেছে। (১,২) সূরা আল ইমরানের ১৯ ও ৮৫ নং আয়াতে। (৩) সূরা মায়েদাহ এর ৩ নং আয়াতে। (৪) সূরা আনয়ামের ১২৫ নং আয়াতে। (৫) সূরা যুমার এর ২২ নং আয়াতে। (৬) সূরা সফ এর ৭ নং আয়াতে। (৭) সূরা হুযরাত এর ১৭ নং আয়াতে এবং (৮) সূরা তাওবাহ এর ৭৪ নং আয়াতে।
ইসলাম শব্দের ব্যবহারিক অর্থের দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে এক অদ্বিতীয় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে আত্মসমর্পণ করা। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
(ক) “হ্যা, যে কেউ আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে এবং সৎকর্ম পরায়ন হয়, তার ফল তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নাই ও তারা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১১২)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে: “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে যা কিছু চায়? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তার নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। এবং তার দিকেই তারা প্রত্যানীত হবে।” (সূরা আল ইমরা: আয়াত ৮৩)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে: “ তার অপেক্ষা দ্বীনে কে উত্তম যে সৎকর্ম পরায়ন হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে? এবং আল্লাহ পাক ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।” (সূরা নিসা: আয়াত ১২)।
(ঘ) ইরশাদ হয়েছে: “ বল, আমি কি আসমান ও জমীনের ¯্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করব? তিনিই জীবিকা দান করেন, কিন্তু তাকে কেউ জীবিকা দান করে না, এবং বল, আমি আদিষ্ট হয়েছি যেন আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম ব্যক্তি হই, আমাকে আরও আদেশ করা হয়েছে-তুমি মুশরিকদের অন্তভর্‚ক্ত হয়ো না।” (সূরা আনয়াম: আয়াত ১৪)
(ঙ) ইরশাদ হয়েছে: “আমাদের মধ্যে রয়েছে কতক আত্মসমর্পণকারী এবং কতক সীমালংঘনকারী, যারা আত্মসমর্পণ করে তার সুচিন্তিতভাবে সত্যপথ বেছে নেয়। অপর পক্ষে সীমালংঘনকারী তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।” (সূরা জিন: আয়াত ১৪-১৫)।
(চ) ইরশাদ হয়েছে: “যখন তারা উভয়ে (ইব্রাহীম ও ইসমাইল আ. আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল।” (সূরা সাফফাত: আয়াত ১০৩)।
(ছ) ইরশাদ হয়েছে: “তার প্রতিপালক যখন তাকে বলছিলেন আত্মসমর্পণ কর, সে বলেছিল জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৩১)।
(জ) ইরশাদ হয়েছে: “যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তবে তুমি বল, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসর্মণ করেছি এবং আমার অনুসারীগণও। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে ও নিরক্ষর মুশরিকদেরকে বল, তোমরাও কি আত্মসর্মণ করেছ? যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে নিশ্চয় তারা পথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য শুধু প্রচার করা। আল্লাহ পাক বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।” (সূরা আল ইমরান: আয়াত ২০)।
(ঝ) ইরশাদ হয়েছে: “তাকে বলা হল এই প্রাসাদে প্রবশ কর। যখন সে উহা দেখল তখন সে উহাকে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার উভয় সাক (পায়ের গির হতে হাটু পর্যন্ত অংশ) অনবৃত করল, সুলায়মান বলল, ইহাতো স্বচ্ছ স্ফটিকমÐিত প্রাসাদ। সেই নারী বললো, হে আমার প্রতিপাল, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম, আমি সুলায়মানের সাথে জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করছি।” (সূরা নামল: আয়াত ৪৪)
অনুরূপভাবে ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ করার বিষয়টি (১) সূরা আল ইমরানের ২০ নং আয়াতে, (২) সূরা হুযরাতের ১৪ নং আয়াতে, (৩) সূরা মায়েদাহ এর ৪৪ নং আয়াতে, (৫) সূরা গাফির বা মুমিনের ১৭ নং আয়াতে, (৬) সূরা নামলের ৮১ নং আয়াতে, (৭) সূর আনয়ামের ৭২ নং আয়াতে, (৮) সূরা লুকমানের ২২ নং আয়াতে, (৯) সূরা ফাত্হ এর ১৬ নং আয়াতে, (১০) সূরা বাকারাহ এর ১৩১ নং আয়াতে, (১১) সূরা হজ্জ এর ৩৪ নং আয়াতে এবং (১২) সূরা যুমারের ৫৪ নং আয়াতে বিবৃত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।