Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানামা পেপার্স ফাঁস নিয়ে রহস্য

প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা পানামা পেপারস ফাঁসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বিভিন্ন দেশের গোপন নথি ফাঁসকারী প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস এর দাবি, এই ফাঁসের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ। তালিকায় কোনও উল্লেখযোগ্য মার্কিনি না থাকার বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া ফাঁস হওয়া সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন উইকিলিকসসহ অনেকে। তবে স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কায় সব প্রকাশ করবে না বলে জানিয়েছে আইসিআইজি। বিতর্ক ওঠেছে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিয়েও। গত বুধবার মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে উইকিলিকস দাবি করেছে, রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে আক্রমণ করার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ তথ্য ফাঁস ঘটিয়েছে।
উইকিলিকসের দাবি, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-ই পানামা পেপারস ফাঁসের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে লক্ষ্য করেই এই ফাঁস করা হয়েছে। পুতিনকে লক্ষ্য করে চালানো এ ফাঁসের পেছনে অর্থের যোগান দিয়েছে ইউএসএইড (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট) ও যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জর্জ সরস। আরেকটি টুইটে উইকিলিকস আইসিআইজির উদ্দেশে বলেছে, যদি ৯৯ শতাংশ তথ্য গোপন রাখা হয় তাহলে সংজ্ঞা অনুসারে আপনারা মাত্র ১ শতাংশ সাংবাদিকতা করছেন।
রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম আরটি ডট কমের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সরসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়াতে অবাঞ্ছিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত বছর রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় সরুসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন এবং ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউ অ্যাসিস্ট্যান্স ফাউন্ডেশনকে দেশটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে রাশিয়ার নাগরিক ও সংস্থার অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জের প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস গত সোমবার টুইটারে একটি জরিপ শুরু করেছে। এতে জানতে চাওয়া হয়েছে, উইকিলিকসের মতো পানামা পেপারসের সব তথ্য প্রকাশ করা দরকার কিনা। তবে আইসিআইজির প্রধান গেরার্ড রাইল জানিয়েছেন, তারা সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করবেন না। এটা করা হলে বেসরকারি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদের স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা উইকিলিকস নই। আমরা দেখাতে চাইছি কিভাবে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করা যায়।
জার্মান সাংবাদিক ও লেখক আর্নেন্ট উলফ জানান, বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিন সরকারের। সেই অস্থিতিশীলতার জন্যই তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রচুর মানুষ তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আরও প্রচুর অর্থ ট্যাক্স হ্যাভেনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথে। যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা চায় বিশ্বের অর্থ যেন অন্য দেশের ভল্টে না থাকে, সব অর্থ যেন তাদের ভল্টে থাকে।
সোমবার ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজি) জানায়, পুতিনকে আক্রমণ করে পানামা পেপারস ফাঁস করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবে বিদেশে কর ফাঁকি দিয়ে গোপনে বিনিয়োগ করা হয় তা প্রকাশ করা। আইসিআইজি প্রধান গেরার্ড রাইল বলেছিলেন, এটা রাশিয়াকে নিয়ে কোনও ঘটনা নয়। এটা গোপনে অন্য দেশে বিনিয়োগের বিষয়। তবে তার এ বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়। পুতিন ও তার পরিবারের কোনও সদস্য বিদেশে গোপনে অর্থ বিনিয়োগে জড়িত না থাকলেও তার ছবি দিয়েই খবরটি প্রকাশ করে। এসব ফাঁসের ঘটনায় রাশিয়াবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনে মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পুতিনভীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাশিয়া সম্পর্কে ভালো কিছু অথবা সাফল্য সম্পর্কে বলা এখন অসম্ভব।
পানামা পেপারসকে সুযোগ নয় শতাব্দির ফ্লপ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন জার্মান সাংবাদিক জেনস বার্জার। তিনি লিখেছেন, পানামা পেপারসে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৮টি অফশোর কোম্পানির ১১.৫ মিলিয়ন তথ্য রয়েছে। এসব কোম্পানি পরিচালনায় রয়েছেন ১৪ হাজার মানুষ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এদের কাউকেই আদালতে হাজির হতে হবে না। এটার যথার্থ কারণও রয়েছে। কারণ প্রথমত মোসাক ফনসেকার সেবা বেআইনি নয়। ডয়চে ভেল, আরটি ডট কম, নেটটাইম ডট ওআরজি।

কেলেঙ্কারির ধাক্কা ফিফায়
ইনকিলাব ডেস্ক : পানামা পেপার্স কেলেংকারির ধাক্কায় নড়বড়ে হতে শুরু করেছে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা। যার সর্বশেষ নজির ফিফার নৈতিকতা কমিটি থেকে একজন কর্মকর্তার পদত্যাগ। এদিকে গত বুধবার ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার কার্যালয়ে হানা দিয়েছে সুইস পুলিশ। পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথিতে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি, এমনকি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ত্বদেরও নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর নামও এসেছে। ফিফা নিশ্চিত করেছে, হুয়ান পেদ্রো দামিয়ামি নামের এক কর্মকর্তা সংস্থার নিরপেক্ষ নৈতিকতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০০৬ সালে দু’জন ব্যবসায়ীকে টিভিস্বত্ব বিক্রি করেছিলেন উৎকোচের বিনিময়ে। ইনফান্তিনো তখন উয়েফার সভাপতি। বর্তমানে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এপি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানামা পেপার্স ফাঁস নিয়ে রহস্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ