মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত এক বছর ধরে গণমাধ্যমের সংবাদে যে বিয়েটির খুঁটিনাটি গুরুত্ব পেয়েছিল সেই বহু আকাঙ্খিত বিয়ে আজ শনিবার। ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন টিভি সিরিয়াল ‘স্যুইটস’ এর অভিনেত্রী মেগান মার্কল আজ বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছেন।
হ্যারি এবং মেগানের বিয়ে হবে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। এটি সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে ২০ মাইল দূরে সবচেয়ে পুরোনো ও বড় দূর্গ। প্রাচীনতম এই দুর্গেই খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে হবে মেগান ও হ্যারির। উইন্ডসর হ্যারির দাদি ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাসস্থান। সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় তিনি এখানেই থাকেন।
বিয়ের আগের রাতে একসঙ্গে কাটাননি হ্যারি ও মেগান। উইন্ডসর ক্যাসেলের কাছাকাছি বিলাসবহুল কোওয়ার্থ পার্ক হোটেলে থাকেন প্রিন্স হ্যারি। জীবনের শেষ ব্যাচেলর নাইটটি তিনি ভাই প্রিন্স উইলিয়াম আর কাছের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কাটান। কোওয়ার্থ পার্ক হোটেল থেকে উইন্ডসর যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট। পার্কল্যান্ডের এক একর জায়গার ওপর এই হোটেল। আর মেগান থাকেন তার মায়ের সঙ্গে ক্লিভডেন হাউস হোটেলে।
প্রিন্স হ্যারি ও মার্কল আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বিয়ের শপথ নেবেন। এক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা। উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠ থেকে ১ হাজার ২০০ জন সাধারণ মানুষ এই রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী হতে পারেন। আর লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টার মধ্যে তাদের উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় হ্যারি ও মেগানের রিসেপশন অনুষ্ঠিত হবে।
হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়ের ভেন্যু ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছেন লন্ডনের ফুল ব্যবসায়ী ফিলিপ্পা ক্র্যাডোক। থাকছে সাদা গোলাপ, পিওনি ও ফক্সগ্লোভস। ফুলের পাশাপাশি ভেন্যু সাজাতে কয়েক ধরনের সুন্দর পাতাও ব্যবহার করা হবে। আর বিয়ের পর সেই ফুলগুলো সব দান করে দেওয়া হবে স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। বিয়েতে ব্যবহূত অনেক ফুল আর পাতা সংগ্রহ করা হবে রাজপরিবারের নিজস্ব ক্রাউন এস্টেট আর উইন্ডসর গ্রেট পার্কের বাগান থেকে।
রাজপরিবারের সদস্য বলে প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কলের বিয়ের অনুষ্ঠান বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই সরাসরি দেখা যাবে। বিয়ের অনুষ্ঠান পাবলিক হয়ে গেলেও মধুচন্দ্রিমা যথাসম্ভব গোপনেই সারবেন হ্যারি- মেগান। তবে রাজপ্রাসাদের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ের পর শিগগিরই হানিমুনে যাচ্ছেন না এই হবু দম্পতি। জর্জেস চ্যাপেলে হওয়া প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়ে দেখার জন্য উইন্ডসর ও শহরটির অন্যত্র বড় স্ক্রিন লাগানো হবে। এ ছাড়া গির্জা ও অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখাতে বড় স্ক্রিন লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
যতক্ষন না পর্যন্ত মেগান মার্কল সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার পোশাক সম্পর্কে নিশ্চিত করে জানা যাবে না। তবে ব্র্যান্ড রাফ অ্যান্ড রুশো তার পোশাকের ডিজাইন করতে পারেন। এছাড়া এই তালিকায় বারবেরি, এরডেম, স্টেলা ম্যাককার্টনি এবং রোলান্ড মৌরেত নামের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
চ্যাপেলের করিডর ধরে হাঁটার কথা ছিল মার্কলের বাবা টমাস মার্কলের। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস এবং ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামেলা, প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই উইলিয়াম এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হওয়ারও কথা ছিল তার। কিন্তু সব এখন বন্ধ। মেগানের মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড হাঁটবেন মেয়ের সঙ্গে। তিনি গতকাল শুক্রবার রানি এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ক্লিভডেন হোটেলে যান। হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লসও হাঁটবেন তাদের সঙ্গে। টমাসের পরিবার তার হার্ট অ্যাটাকের খবর জানালেও ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। সমপ্রতি পাপারাজিদের সামনে পোজ দিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে চটিয়েছেন টমাস। তিনি অবশ্য বলেছিলেন, কাউকে ছবি তুলতে দেননি। তারপর স্বীকার করেন পোজ দেওয়ার কথা। পরে বলেন, এর বিনিময়ে কোনো অর্থ নেননি। কিন্তু আবার বলেন, সামান্য অর্থ পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই টমাসের পরিবারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কথা জানানো হয়। রানির স্বামী প্রিন্স ফিলিপ (৯২) বিয়েতে অংশ নেবেন।
বিয়েতে যোগ দেওয়ার জন্যে ৬০০ জন অতিথির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে রাজপরিবার। আরো ২০০ অতিথি উপস্থিত থাকবেন সন্ধ্যায় নবরাজদম্পতিকে দেওয়া রিসেপশনে। আরো আছেন ১২০০ সাধারণ অতিথি, তারা উপস্থিত থাকবেন উইন্ডসর কাসেলের মাঠে। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত দুইশজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের বিয়েতে রাজপরিবারের ৫০ জন সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। এবারও তেমনটিই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতিথির পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বিয়েতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ এর আগে প্রিন্স উইলিয়ামের বিয়েতে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। হ্যরির সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ায় এবার ওবামার উপস্থিতির কথা বলা হলেও পরে জানানো হয় ওবামা বিয়েতে অংশ নিচ্ছেন না। বিয়েতে চলচ্চিত্র জগতের তারকাসহ খেলোয়াড়রা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কত খরচ হবে
বিয়ের কেক, ফুল, কুশন কভার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকাটা ইতোমধ্যেই পত্রিকার পাতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিয়েকে কেন্দ্র করে এক লাখের মতো মানুষ উইন্ডসরে গিয়ে হাজির হতে পারে। এতো অতিথির দেখাশোনার জন্যে প্রয়োজন বড় রকমের পরিকল্পনা। নিরাপত্তার খরচ তো আছেই। সম্ভবত নিরাপত্তা খাতে খরচ হবে সবচেয়ে বেশি। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই হিসেব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে ডিউক এন্ড ডাচেস অফ কেমব্রিজের বিয়েতে (প্রিন্স চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন) নিরাপত্তা বাবদ মেট্রোপলিটন পুলিশ (জনগণের করের অর্থ) প্রায় ৬৪ লাখ পাউন্ড খরচ করেছিল। তথ্য অধিকার আইনে এই হিসেব প্রেস এসোসিয়েশনের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান বাবদ ঠিক কতো খরচ হবে কেনসিংটন প্যালেস থেকে সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যুক্তরাজ্যে ব্রাইডবুক নামে একটি ওয়েবসাইটের হিসেব হচ্ছে- বিয়েতে খরচ হতে পারে প্রায় সোয়া তিনশো কোটি পাউন্ড যার মধ্যে নিরাপত্তার খরচ রয়েছে। তারা বলছে, কেকের পেছনে খরচ হবে ৫০ হাজার পাউন্ড, ফুলের পেছনে এক লাখ ১০ হাজার পাউন্ড, খাওয়া-দাওয়া বাবদ প্রায় তিন লাখ পাউন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি। কাগজটি আরো লিখেছে, বিয়ে হবে যেখানে সেই হল ভাডড় হিসেবে খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড। খাওয়া দাওয়ায় আরো প্রায় তিন লাখ। পানীয়ের পেছনে দুই লাখ। পোশাকে তিন লাখ। ফুলের জন্যে এক লাখের বেশি। কেকের পেছনে ৫০ হাজার। গানবাজনার জন্যে আরো তিন লাখ। চুল সাজানো ও মেকাপ ১০ হাজার। এবং বিয়ের আংটি ৬ হাজার পাউন্ড। তবে মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু শুধুই অনুমান। এই হিসেবে কীভাবে করা হলো- জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান বলেছেন, বিয়ে উপলক্ষে রাজপরিবার যেসব জিনিস কেনাকাটা করেছে, সেগুলোর বাজারদর ধরে এই অর্থ হিসেব করা হয়েছে। তাতে খরচ দাঁড়িয়েছে সোয়া তিন কোটি পাউন্ড। ব্রিটিশ সংবাদপত্র মেট্রো বলছে, এদেশে গড়ে একটি বিয়ের পেছনে খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার ডলার। নিরাপত্তার পেছনে যে খরচ হবে সেটা আসবে জনগণের দেওয়া কর থেকে। আপাতত টেমস ভ্যালি পুলিশকে এই খরচ বহন করতে হবে। তবে বিয়ের পরে অনুদান চেয়ে তারা আবেদন করতে পারবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে। বাদবাকি খরচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে।
রাজকীয় এই বিয়ের জন্য বিশেষ এক কেক নিয়েও চলছে মাতামাতি। নবদম্পতিকে সম্মান জানাতে তাদের সমান আকারের বিশেষ একটি কেক তৈরি করেছেন লারা মেশন। লারা তার ফেসবুক পেজে কেকের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের সমান কেকটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রিন্স হ্যারি ও মার্কলের সম্পর্কের কথাটি প্রকাশের পর তাদের যে ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল তার আদলেই তৈরি হয়েছে কেকটি।
উল্লেখ্য, পরস্পরের বন্ধুদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মার্কিন অভিনেত্রী মার্কলের সঙ্গে ব্রিটিশ সিংহাসনের পঞ্চম উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারি পরিচয় হয়। মার্কিন টিভি সিরিজ ফ্রিঞ্জ’ ও ‘স্যুইটস’ অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়া মেগানের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। গত বছরের নভেম্বরের শুরুতেই তাদের মধ্যে বাগদান সম্পন্ন হয়। পরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কেনসিংটন প্যালেসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ১৯ মে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।