পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জুমা বারের খুতবা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের পর আরো একটি অভিনব-চমক সৃষ্টি করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সাহেব। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের ভুল সংশোধন করছেন। এ কাজ করার জন্য নাকি প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজি সাহেব আরো বলেছেন, বাজারে প্রচলিত প্রায় শ’ খানিক অনুবাদেই ভুল রয়েছে।
ইমলামিক ফাউন্ডেশন প্রধানের পরিবেশিত এ তথ্য অভিনব নজীরবিহীন। তিনি শ’ খানিক বাংলায় অনূদিত কোরআনে ভুল উদ্ধার করতে পেরেছেন। এটি তাঁর অসাধারণ সাফল্য(!) হিসেবে মুসলিম দুনিয়ার কাছে বিবেচিত হওয়ার মত। এ বিপুল সংখ্যক কোরআনের বাংলা অনুবাদে কোথায় কোথায়, কি কি ভুল তিনি দেখতে পেয়েছেন এবং কিভাবে ভুল নির্র্ণয় করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি কোন তালিকা বিবরণী প্রদান করলে তার অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেত। প্রধানমন্ত্রী তাকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন নাকি লিখিত নির্দেশ প্রদান করেছেন, প্রকাশিত খবরে তারও উল্লেখ নেই। প্রশ্নে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কে ডিজি সাহেব কি তার কথিত ভুলগুলোর তালিকা বিবরণী প্রকাশ করেছেন, যা দেখে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন? আর এটা কি সম্ভব, ভুলের যথার্থ প্রমাণাদি না দেখে প্রধানমন্ত্রী কথিত নির্দেশ দিতে পারেন?
বর্ণিত সংখ্যক কোরআনের বঙ্গানুবাদের কত সংখ্যক কোরআন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সম্পাদিত প্রকাশিত সে সংখ্যাও বলা হয়নি। ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে যত গুলোই প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোতে ভুল। সে ভুলগুলো সংশোধনের দায়িত্ব ফাউন্ডেশনেরই, সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হবে কেন? প্রকাশের সময় কি তাঁর নির্দেশ ছিল? আর যে সব কোরআনের অনুবাদ ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত সেগুলোর অনুবাদে ভুল থাকলে, তা সংশোধনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলের। তাতে নাক গলানোর অধিকার কি ডিজি সাহেবের আছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি মাত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ রয়েছে। ডিজি সাহেবের বয়ানে এ কোরআনের কথা উল্লেখ নেই। এর অনুবাদে ভুল থেকে থাকলে তা যদি বর্তমান ফাউন্ডেশন প্রধানের দৃষ্টি এড়িয়ে না যায় তা সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ চাওয়া হলে তা একেবারে অযৌক্তিক নয়। কেননা, এ ফাউন্ডেশন সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি প্রকাশনা ও গবেষণাধর্মী ইসলামী প্রতিষ্ঠান। বিশে^ সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ধর্ম গ্রন্থ আল-কোরআনের বঙ্গানুবাদে কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করা অবশ্যই ফাউন্ডেশনের জরুরী দায়িত্ব। একথা অস্বীকার করা যায় না।
বাংলা, আরবী, উর্দু, ইংরেজি এবং ফার্সি - এগুলোর প্রত্যেক ভাষায় বিশেষজ্ঞ গণের ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিরাট দল কর্তৃক কয়েক বছরের সাধনা-গবেষণার মাধ্যমে বাংলায় অনূদিত ‘আল-কুরআনুল করীম’ নামে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার চার বছর পূর্বে। এখন আমাদের সামনে ‘দ্বাবিংশ মুদ্রণের’ কপি রয়েছে। বাংলাভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত এবং অতিজনপ্রিয় এ কোরআনের এতগুলো সংস্করণে কেউ ভুল ধরতে পারেনি। প্রথম মুদ্রণটি পুন: পুন: অবিকল মুদ্রিত হয়ে আসছে। বিগত অর্ধ শতাব্দী যাবত নির্ভুল অনুবাদ হিসাবে যার অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অর্থ ও মর্মের দিক থেকে ছিদ্র অনুসন্ধান বা ভুল উদঘাটনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি এবং সেই তথা কথিত ভুল সংশোধনের যে কোন উদ্যোগ ব্যুমেরাং হতে বাধ্য একথা ডিজি সাহেবের স্মরণে না থাকার কথা নয়।
মূল আরবী কোরআনের অনুবাদ দুনিয়ার নানা ভাষায় হয়েছে এবং অহরহ হচ্ছে। আমাদের দেশে বাংলায় অধিকাংশ উর্দু থেকে অনুবাদ হয়েছে। অর্থাৎ অনুবাদের অনুবাদ। অতএব যে ভুল সংশোধনকারী ও অনুবাদকের আরবী, উর্দু ও ফার্সি ভাষা জ্ঞানের অভাব, তার পক্ষে এ পথে পা বাড়ানো কোরআন নিয়ে তামাশা করা তথা কোরআনের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।