Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুসহ সাধারন মানুষ

রূপগঞ্জে ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের ব্যবসা

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো: খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে মেয়াদউত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত পণ্য খেয়ে বাড়ছে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এক দল অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন জুস ও ফুড কারখানা থেকে এসব মেয়াদউত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত পণ্য অল্প মুল্যে ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিশুরা। রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের কইরাবো এলাকায় এমনই একটি ভাঙ্গারীর প্রতিষ্ঠানে এসব মেয়াদউত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত পণ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কৈরাবো এলাকার লোকমান হোসেন ও শাহীন মিয়া ওই এলাকায় ভাঙ্গারী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এই ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে তারা বিভিন্ন খাবার জাতীয় কারখানা থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত লিচু, ম্যাকারনি, হলুদ ও মরিচসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্য অল্প দামে কিনে নিয়ে আসে। পরে এগুলোকে বাছাই করে এবং নতুন করে প্যাকেটিং করে বাজারে বিক্রি করে দেয়। এ সকল ময়াদ উত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে ক্যান্সার, পেট ব্যাথাসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
কৈরাবো এলাকার ভাঙ্গারি কারখানায় সরেজমিনের ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে মাছি ভঁন ভঁন করছে এ যেন এক ময়লার ভাগার। চারপাশে যেন এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কারখানার ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে একপাশে চোখ পড়লো। চোখ পড়তেই দেখা মিললো দুই তিন জন নারী শ্রমিকের। তারা পরিত্যাক্ত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ লিচু মাটিতে ঢেলে বাছাই করে করে একটি বস্তাতে ভেতরে ভরতে থাকে। নারী শ্রমিকদেরকে এসকল পরিত্যাক্ত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ লিচু বস্তায় ভরার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, এডা মালিক কইতে পারবো, আমরা এই ব্যাপারে আমরা কিছু কইতে পারি না। আমাগো টাহা দেয় এডি বস্তায় ভরার লাইগা। ভাঙ্গার কারখানার আর একটু সামনে যেতেই চোখে পড়লো আরো কয়েকজন মহিলা শ্রমিক পরিত্যাক্ত, মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ময়লাযুক্ত কুলসন ম্যাকারনি ও হলুদ মরিচ ঝেড়ে পরিস্কার করে বস্তায় ভরতে শুরু করছে। তাদেরকেও জিজ্ঞাসা করা হলো এগুলো কেন বস্তায় ভরা হচ্ছে। উত্তরে তারা বলেন, এগুলো মাছের খামারে মাছকে খাওয়ানোর জন্য বস্তায় ভরা হচ্ছে। কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো ও মরিচ গুড়ো মাছকে খাওয়ানো হয় এটাও কি সম্ভব? এসময় দেখা গেলো এক স্কুল ছোট শিশু বস্তা থেকে কয়েকটি লিচু নিয়ে খাাচ্ছে কিন্ত তাকে কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। সিয়াম নামে ওই স্কুলগামী শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিয়ামসহ তার বন্ধুরা প্রায় সময়ই স্কুল থেকে আসা যাওয়ার পথে এই জায়গা থেকে লিচু নিয়ে খেয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, লোকমান ও শাহীন দীর্ঘ দিন ধরে তাদের ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়োসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্য কিনে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে আসছে। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা তাদের এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসকল মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো মরিচসহ এ সকল ভোগ্য পন্য খেয়ে মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। লোকমান ও শাহীন এসকল মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি থাকে।
স্থানীয়রা আরো জানান, বাংলাদেশ সরকার ভেজাল খাদ্য বন্ধে ব্যাপক ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু লোকমান ও শাহীনদের মতো কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ভেজাল মুক্ত খাদ্য সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কাছ থেকে লোকমান ও শাহীন এসকল পণ্য কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। লোকমান ও শাহীনের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে লোকমান ও শাহীন তাকে মারধরসহ বিভিনভাবে হয়রানী করে থাকে। লোকমানের ওই ভাঙ্গারী কারখানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দূর্গন্ধে মুখ চেপে ধরতে হয়। এসকল মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, গুড়ো মরিচ খোলাভাবে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক কারখানার এক শ্রমিক জানান, রাতের আধারে খাবার জাতীয় বিভিন্ন কারখানা থেকে ট্রাক ভর্তি করে এসকল মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো নিয়ে আসা হয়। তারা পণ্যগুলো বাছাইয়ের পর পরিস্কার করে বস্তায় ভরে রাখে। পরে এসকল মেয়াদউত্তীর্ণ লিচু, কুলসন ম্যাকারনি, হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এগুলো পরিস্কার ও বাছাই করার সময় পারপাশে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরে।
অভিযুক্ত লোকমান ও শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এসব মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্য বাজারে বিক্রির বিষয়টি মিথ্যা। খোসা ছাড়িয়ে কেজী হিসেবে বিক্রি করা হয় প্লাষ্টিক গুলো। এছাড়া খাবার জাতীয় পণ্য মাছের খামারে ব্যবহার করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গারীর ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন খাবার জাতীয় কারখানা থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পরিত্যাক্ত পণ্যে বিক্রির বিষয়টি জানা ছিলো না। যেহেতু জেনেছি, ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ