Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষকদের মধ্যে কেবলই হাহাকার ধানের মূল্য থেকে খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা: জেলার মান্দা উপজেলার উথরাইল বিলে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে কৃষকদের চলতি বোরো মওসুমের ধান ঘরে তোলা দুরুহ হয়ে উঠেছে। অনেক কৃষক ধান না কেটে জমিতেই রেখে দিয়েছেন। তার কারন এত খরচ করে এই ধান কেটে ঘরে তুলে কোনলাভ নাই বরং ক্ষতি। খুবই ঝুঁকি নিয়ে যারা ধান কেটে ঘরে আনার চেষ্টা করছেন তাতে এত বেশী খরচ হচ্ছেযে উৎপাদিত ধানের মুল্যের থেকে অনেক বেশী অর্থ খরচ হচ্ছে। এর ফলে ঐ বিলেবোরো ধান চাষকৃত কৃষকদের মধ্যে দারুন হতাশা নেমে এসেছে। কেবলই কৃষকদের আহাজারি আর কান্না ছাড়া কিছুই নাই।
উপজেলার ভারশো ইউনিয়নে অবিস্থত এই বিশাল বিল এলাকা এই উথরাইল বিল। কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমি। মুলত এই বিলের জমিগুলোতে বোরো মওসুৃমের ধান চাণ করেন কৃষকরা। এ বছরও চাষ করেছেন। ধান পেকেও গেছে। কেবল কাটার অপেক্ষা। কেউ কেউ ধান কাটতে শুরু করেছেন। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিকের অভাবে সবাই ধান কাটতে পারেন নি। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে বিলের অধিকাংশ ধান পানিতে তলিয়ে যায়। পাকা ধান বেশীদিন পানিতে থাকলে ধান পচে যেতে শুরু করে। ধানের গাছ জন্মাতে শুরু করে। হয়েছেও তাই।
এই অবস্থায় ধান কাটতে প্রচুর খরচ হচ্ছে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে স্বাভাবিক অবস্থায় লাগতো ৩ জন শ্রমিক। বর্তমানে লাগছে ৮ জন শ্রমিক। এই ৮ জন শ্রমিকের মজুরী লাগছে জনপ্রতি ৬শ টকা হারে ৪ হাজার ৮শ টাকা। ধান জমি থেকে নৌকায় আনতে প্রতি বিঘা ভাড়া নিচ্ছে ২ হাজার টাকা। যেখানে নৌকা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে যেতে লাগছে ২০০ টাকা। মাড়াই খরচ লাগছে ১ হাজার টাকা। আর চাষ করতে শুরুতেই লেগেছে বীজ ,সার, সেচ বাবদ মোট ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমির ধান এরখন ঘরে তুলতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ মন।সেই ধান আবার ভেজা এবং নি¤œমানের। এই ধানের বর্তমান বাজার মুল্য সর্বোচ্চ সড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। এই পর্যায়েে কৃষকদের নীট লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এই অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে মারাত্মক হতাশা কাজ করছে। বাড়িতে বাড়িতে চলছে হাহাকার। যাঁরা বর্গাচাষ করেছেন তাঁদের অবস্থা আরও করুন। তাদের জমি থেকে ধানতোলার ক্ষেত্রে শুধু কেটে এনে ঘরে তুলে দিতে প্রথমেই জমির অর্ধেক ধান ঐ শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে। বাঁকী ধানে অর্ধেক জমির মালিককে এবং বাঁকী অর্ধেক নিজে নিচ্ছে। এতে বর্গদার একত চতুর্থাংশ ধানের মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ মন ধান পাচ্ছে। যাার মুল্য ২৫০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা। বর্গদারদের নীট লোকসান হচ্ছে আরো অনেক বেশী। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পাকুরিয়া গ্রামের বর্গাচাষী সেফাতুল্যা, মোসলেম উদ্দিন ও মালা বেগম তাঁদের তাঁদের এই করুন পরিস্থিতি বর্ননা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন এই বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত শিব নদীর সাথে সংযুক্ত খালটি খুলে দিলে সহজেই পানি নিষ্কাশিত হতে পারতো। পানি নিষ্কাশিত হতে পারলে মাত্র ৪/৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরর স্বাভাবিকভাবে তাঁদের কাংখিত ধান ঘুরে তুলতে পারতেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ