আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। তিনি
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩৭ বছর হয়ে গেছে, এই দলের সভাপতি হিসেবে এতগুলো বছর থাকাটা বোধ হয় সমীচীন নয়। আওয়ামী লীগকে মনে হয় ধীরে ধীরে চিন্তা করতে হবে তার নতুন নেতৃত্বের কথা।’ তিনি সততার সঙ্গে রাজনীতি করার এবং পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব না মেলাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু করবো সেটাই বড় কথা।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, সংগঠন যদি শক্তিশালী হয়, সংগঠনে যদি ঐক্য থাকে আর এই সংগঠন যদি জনগণের পাশে থেকে জনমত সৃষ্টি করতে পারে, তখনই যেকোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়। যা আমরা বার বার প্রমাণ করেছি।’
গণভবনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আজ সকালে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর
শেখ হাসিনা প্রবাসে দীর্ঘদিন রিফিউজি হিসেবে কাটাতে বাধ্য হবার পর আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচন করলে ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, দলের
সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং ডা. দিপু মনিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর একে একে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং মহিলা শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন তার ভাষণে দেশে ফেরা থেকে শুরু করে তার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন এবং তার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব খোঁজার জন্যও দলীয় নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন ।
প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর আগের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এই দিনে তার স্বদেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থনে বার বারই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই দিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই তাকে বরণ করে নেয়ার জন্য মানুষের যে ঢল দেখেছেন, মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন তা তাকে এখনও আপ্লুত করে।
মা-বাবা ভাই, পরিজনদের হারিয়ে বাংলার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাই তাকে চলার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের আশ্রয়েই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছে তা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এবং দেশের গণতন্ত্রায়ন ও নিরন্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার রাজনীতির লক্ষ্য।
ছাত্র রাজনীতি করলেও আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের দায়িত্ব নেয়াটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক কঠিন সময়ে তিনি দেশে ফেরেন। জাতির পিতার খুনিরা তখন পুরস্কৃত হয়ে বহাল তবিয়তে, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স থাকায় পিতা হত্যার বিচার চাইতে পারছেন না, জিয়া তখন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। আর ভাঙার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, ১৯টি ক্যু করে সেনাবাহিনীর বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার-সৈনিকদের হত্যা এবং বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে জানে না (ষড়যন্ত্রের বিষয়ে) ছুটিতে বাড়িতে ছিল তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে ফায়ারিং স্কোয়াডে দিয়ে মারা হয়েছে।’
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যার ষড়যন্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জিয়া তার দলের ভেতরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চট্টগ্রামে নিহত হন।’
‘জিয়া নিহত হবার পর বিচারের নামে প্রহসন করে ১২ জন তরুণ অফিসারকে মারা হলো, অনেকে কিছুই জানে না ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছে তাকেও ফাঁসি দেয়া হয়েছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতির পিতা হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার জন্যও দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা হত্যার বিচার করেছি, কিন্তু ষড়যন্ত্রের বিচার তো আর হয়নি, তদন্ত হয়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করছি এবং এই যুদ্ধাপরাদীদের বিচার করতে গিয়ে যারা সাক্ষী দিয়েছে তাদের ওপরও কিন্তু অনেক সময় অত্যাচার হয়েছে। কাজেই যার যার এলাকায় এটাও আমাদের একটু নজরে রাখতে হবে যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদের ওপর কেউ যেন অত্যাচার করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কেউ সাক্ষীদের নির্যাতন বা অত্যাচার করেন তাহলে তারাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হবে এবং তাদেরও একেবারে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে।’ প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি যারা দেশের গণতন্ত্র দেখতে পান না, তাদের কঠোর সমালোচনা করে এদেরকে সামরিক সরকারগুলোর পদলেহনকারী ও সুবিধাভোগী বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে দল গঠনের মধ্যে তারা গণতন্ত্র পায়।’ প্রধানমন্ত্রীর আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এদিন বিদায়ের রাগিনী ধ্বনিত হলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ করে ওঠেন। সূত্র: বাসস।