Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমে মেশানো হচ্ছে কার্বাইড ও হরমোন

সাতক্ষীরায় অপরিপক্ক আমে সয়লাব

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজার অপরিপক্ক আমে সয়লাব। মেশানো হচ্ছে কার্বাইড ও হরমোন। এসব দিয়ে আমের রং সুন্দর করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে পাকানো হচ্ছে আম। এমনিভাবে প্রতিদিন শত শত মন অপরিপক্ক আম বিক্রি করে সাধারণ ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এধরনের কাজ প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। গতকাল রোববার সকালে সুলতানপুর বড় বাজর ঘুরে দেখা দেখা গেছে, বাজারে মজুত রয়েছে শত শত মণ অপরিপক্ক হিমসাগর ও গোপালভোগ আম। প্রতি মণ আম ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছেঁ। খরিদদারের নজর কাড়তে ঝুড়ির উপর রাখা হয়েছে অল্প কিছু পরিপক্ক আম। আর ঝুড়ির তলার দিকে রয়েছে অপরিপক্ক আম। খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার আগেই এসব আম বাজারজাত করা হচ্ছে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশায় এমনটি জানিয়েছেন কয়েকজন আম ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, শুধু বেশি মুনাফা নয়, এবার ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ায় গাছে আম রাখাটা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। যে কারণে একটু আগেই তা বাজারে তোলা হচ্ছে। তাদের দাবী হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম খাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন না হলেও গোবিন্দভোগ আম খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সকল ব্যবসায়ীর বদনাম হচ্ছে বলেও তার্ াদাবী করেন। উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার আমের সুখ্যাতি রয়েছে সারা দেশে। এমনকি বিদেশেও। গত চার বছর হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সাতক্ষীরা কৃষি অধিদপ্তর প্রতিবছর আম চাষীদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরাসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। চলতি বছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় চার হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আমের বাগান রয়েছে সাতক্ষীরা সদরে ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, আমের বাগান রয়েছে। দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি। আম চাষ হয়েছে সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে। এদিকে, গত ৯ মে জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে আম ব্যবসায়ী, আমচাষি ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছিলেন ১৫ মে হিমসাগর ও ২৫ মে ন্যাংড়া আম বাজারজাত করতে। অথচ সে নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না। কার্বাইড ও হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে অপরিপক্ক আম। যা স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত শুক্রবার রাতে তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের নাংলা গ্রাম থেকে ১০০ মণ আম জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার দুপুরে তালা থানা চত্বরে এসব আম বিনষ্ট করা করা হয়। রাসায়নিক হরমোন দিয়ে পাকানো এসব আম বিনষ্ট করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সুনাম ক্ষুন্ন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তার অধিকার ক্ষুন্ন করে আম পাকাতে কেউ কার্বাইডের আশ্রয় নিলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করা হবে। সাতক্ষীরা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। গত চার বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য।
কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ বাজারে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ীরা অপরিপক্ক আম বাজারজাত করছে। কালিগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ অপরিপক্ক আম কালিগঞ্জ বাজারে বাজারজাত হচ্ছে এবং তা ফরমালিন দিয়ে পাকিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। গতকাল রোববার কালিগঞ্জ নাজিমগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে অপরিপক্ক হিমসাগর আমে সয়লাব। ঝুঁড়ির উপর কিছু পরিপক্ক আম দিয়ে তলায় সব অপরিপক্ক আম। প্রশাসনের নজরদারি না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগিরা। কালিগঞ্জ বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আবু সালেহ জানান, অপরিপক্ক আম বাজারজাত মোটেও কাম্য নয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ