পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব
মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবিহ
মদিনা তায়্যিবায় হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবিহই পড়া হতো। আজো মদিনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবিহই পড়া হয়। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করতেন। তিনিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ফরমান বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের মাঝে বেদআত বের করবে, তার কাজটি পরিত্যাজ্য। যদি বিশ রাকাত তারাবিহের নামাজ বিদআত ও নাজায়েজ হতো, তাহলে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বছরের পর বছর এর ওপর চুপ করে বসে থাকতেন না। হযরত জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুও মদিনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি ঐ হাদিসের রাবী। যাতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি বিদআত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী।
অথচ তারই সামনে অর্ধ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবিহ জামাতের সাথে পড়া হচ্ছিল, অথচ তিনি এর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এটা হতে পারে না।
বাইতুল্লাহ শরীফে বিশ রাকাত তারাবিহ
হযরত আতা ইবন আবী রাবাহ রহমাতুল্লাহ : মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা ইবন আবী রাবাহ রহমাতুল্লাহ (মৃ. ১১৪ হি.) বলেন, আমি লোকদের (সাহাবা ও তাবেয়ীগণ) বেতের নামাজসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, খÐ ২, পৃ. ৩৯৩)
ইমাম ইবন আবী মুলাইকা
ইমাম ইবন আবী মুলাইকা (মৃ. ১১৭ হি.) লোকদের মক্কায় বিশ রাকাত তারাবিহ পড়াতেন।
ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ২০৪ হি.) বলেন, আমি স্বীয় শহর মক্কায় লোকদের বিশ রাকাত তারাবিহ পড়া অবস্থায়ই পেয়েছি। (আল জামেউস সহীহ সুনানে তিরমিযি, খÐ ১, পৃ. ১৬৬)
কুফায় বিশ রাকাত তারাবিহ
ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃ. ৯৬ হি.) বলেন, লোকেরা (সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ) রমজান মাসে পাঁচ তারাবিহ (বিশ রাকাত) পড়তেন। (কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ, পৃ. ৪১)
বসরায় বিশ রাকাত তারাবিহ
হযরত ইউনুস রহমাতুল্লাহি আলাইহি
হযরত ইউনুস রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমি আবুল আশআস (মৃত্যু ৮৩ হিজরী)-এর ফেতনার পূর্বে জামে মসজিদ বসরাতে দেখেছি যে, হযরত আব্দুর রহমান ইবন আবী বাকরা (মৃত্যু ৯১ হিজরী) হযরত সাঈদ বিন আবীল হাসান (মৃত্যু ১০০ হিজরী) এবং হযরত ইমরানুল আব্দী লোকদের পাঁচ তারাবিহ [বিশ রাকাত] পড়াতেন। (কিয়ামূল লাইল, খÐ ১৫৮)
মোটকথা, পুরো খাইরুল কুরুনের মাঝে বিশ রাকাত তারাবিহকে অস্বীকারকারী একজনও ছিল না। কোনো ইসলামী রাজত্বে এটাকে অস্বীকার করা হয়নি। এটাকে অস্বীকার করে সর্বপ্রথম ইংরেজরা উপমহাদেশে আসার পর কতিপয় নামধারী আহলে হাদিস গায়রে মুকাল্লিদ গ্রæপ।
চার ইমাম রাহিমাহুমুল্লাহ-এর বক্তব্য
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ১৫০ হিজরী)ও বিশ রাকাআত তারাবীহের প্রবক্তা। (ফাতাওয়া কাজীখান, খÐ ১, পৃ. ১১২)
ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। (যাতে বিশ তারাবিহ আর ১৬ রাকাত নফল)। (হেদায়াতুল মুজতাহিদ, খÐ ১, পৃ. ১৬৭)
ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিশ রাকাতের প্রবক্তা। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের পক্ষে। (আলমুগনী, খÐ ২, পৃ. ১৬৭)
চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোনো একটি ইবারতেও শুধু আট রাকাত তারাবিহকে সুন্নত আর বিশ রাকাতে বিদআত বলা হয়নি।
সাহাবায়ে কিরাম নিরবচ্ছিন্ন আমল ও ইজমার আলোকে
তারাবিহ নামাজ বিশ রাকাত। সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এ আমলই সারা পৃথিবীতে চালু হয়েছে, যা আজো সারা পৃথিবীতে আমল হয়ে আসছে। নব্য ফিতনা কতিপয় আহলে হাদিস নামধারী ছাড়া মসজিদে নববী এবং বাইতুল্লাহসহ সারা পৃথিবীতে তা সকল মুসলমাগণ আমল করে আসছেন। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে আমলী ইজমা হয়েছিল।
ইবন কুদামা হাম্বলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ৫৯৫ হিজরী) আলমুগনী গ্রন্থের ২য় খÐের ১৬৭ নং পৃষ্ঠায়, আল্লামা কাসতালানী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ৯২৩ হিজরী) ‘ইরশাদুস সারী’ এর ৩য় খÐের ৫১৫ নং পৃষ্ঠা বিশ রাকাতের ওপর সাহাবাগণের ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন।
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ১০১৪ হিজরী) ‘শরহুন নিকাইয়া’-এর ২য় খÐের ২৪১ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা সাইয়্যেদ মুরতাজা জুবাইদী (মৃত্যু ১২০৫ হিজরী) সাহেব ‘ইতহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন’ কিতাবের ৩য় খÐের ৭০০ নং পৃষ্ঠায় সাহাবাগণের এ ইজমাকে নকল করেছেন।
উম্মতে মুসলিমার ইজমা
১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে পৃথিবীর কোনো মসজিদে রমজানের পুরো মাস মসজিদে আট রাকাত তারাবিহ জামাতের সাথে পড়ার কোনো নজির নেই। একটি মসজিদের নাম কোনো কথিত আহলে হাদিস দেখাতে পারবে না। না মসজিদে নববীতে কোনো দিন আট রাকাত তারাবিহ পড়া হয়েছে, না বাইতুল্লায়, না পৃথিবীর কোনো মুসলিম পল্লীতে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।
এর আগে সমগ্র উম্মতে মুসলিমা ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়ে আসছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবি নামাজ বিশ রাকাত।
কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবির ফতোয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন।
কিন্তু কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবির ফতোয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও শায়েখ নাসীর উদ্দীন আলবানী সাহেব সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবির মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবির আমলকে অব্যাহত রাখেন, যা আজো অব্যাহত রয়েছে।
সুতরাং আট রাকাত তারাবি পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হলো, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা। সুন্নাতে নববী, সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন, সুন্নাতে ছাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
৮ রাকাত তারবিহের জবাব
৮ রাকাত তারাবিহের পক্ষে দলিল
হযরত আবু সালমা ইবন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে জানতে চান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ কেমন হতো রামাযান মাসে? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য মাসে ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেও না। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেও না, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বেতের পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন, হে আয়েশা! নিশ্চয়ই আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায় না। (আল জামেউস সহিহুল মুখতাসার, খÐ ১, পৃ. ৩৮৫)
জবাব
১। এই হাদিসে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী, খÐ ৩, পৃ. ১৭)
২। আসল কথা হলো এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবিহের কথা বর্ণিত নয়। নি¤েœ এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো।
হাদিসটিতে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে এ কথার দলিল
১। হাদিসের শব্দ ‘মা কানা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইয়াযিদু ফি রমাদানা ওলা ফি গায়রিহি’ (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইজি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়ান না) এটাই বোঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামাজ নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কি না? এই প্রশ্নটি এ জন্য করা হয়েছে যেহেতু বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামাজ পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামাযান ছাড়া কি তারাবিহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবিহ আর বেতের মিলিয়ে ১১ রাকাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বোঝা যায় তারাবিহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামাজ রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কি না? এর জবাবে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না তাহাজ্জুদ নামাজ।
২। মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবিহর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার প্রণীত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নি¤œবর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন,
(ক) বেতের অধ্যায়
(খ) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে (নামাজের উদ্দেশ্যে) দÐায়মান তা রামযানে ও রামযান ছাড়া অধ্যায়ে।
৩। আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয়ই তাহাজ্জুদ ও বেতেরের নামাজ রাতের নামাজের সাথে খাস। আর দিনের ফরজ যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরিব হলো ৩ রাকাত, যা দিনের বেতের। সুতরাং সমন্বয় হলো, রাতের নামাজ দিনের নামাজের মতোই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হলো, ফজরের নামাজ মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাজই তার পরবর্তী নামাজের জন্য। (ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী, খÐ ৩, পৃ. ১৭)
ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছে না এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবিহ নামাজ নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
এক কথায় বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও দীর্ঘ চৌদ্দশত বছরের সকল ফকিহ ও মুফতিগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হলো তারাবিহ ২০ রাকাত, ২০ রাকাত, ২০ রাকাত। এর বাইরে কোনো দলিল নেই। তাহাজ্জুদের হাদিসকে টেনে এনে তারাবিতে লাগিয়ে দেয়া হাদিসের অপব্যাখ্যার শামিল। যারা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মানেন না, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ফতোয়াকে তোয়াক্কা করেন না এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমার সিদ্ধান্তকে না মেনে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে আল্লাহর ইবাদত থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় তারা যে মুসলমানদের শত্রæ ও অনৈক্য সৃষ্টিকারী এতে সন্দেহ নেই। তাই মুসলমানদের উচিত এই অপশক্তির কথায় কান না দিয়ে মাহে রমাদানে বিশ রাকাত তারাবিহ আদায় করা। প্রতিদিন ২০ রাকাত হিসেবে ২৭ দিন তারাবিহ আদায় করলে প্রতি রাকাতে ১ রুকু করে ৫৪০ রুকু হয় কুরআনুল কারীমকে তাই ৫৪০ রুকুতে ভাগ করা হয়েছে। কারণ শবে কদরেই কুরআন খতম করা হতো, বাকি ৩ দিন ভিন্নভাবে আদায় করা হতো। এ জন্যই ফতোয়ায়ে আলমগীরী, কাজীখান, বাহরুর রায়েক, দররূল মুখতার, শরহে বেকায়াহ, কুদুরী, কানযুদ দাকায়েক, ফতোয়ায়ে রযবিয়্যাহ, জা আল হক্ব, বাহরে শরীয়তসহ শত শত ফতোয়ার কিতাবে তারাবিহ ২০ রাকাত হিসেবেই ফতোয়া প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন বি হুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন।
লেখক : বিশিষ্ট আলেম ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।