পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা থেকে : বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে কুমিল্লার কৃষকের স্বপ্ন। গত কয়েকদিনের হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাত্তয়া মাঠের ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অপরদিকে বোরো ধান কেটে বাড়ি আনতে তিনগুণ পরিশ্রমের পরও সোনালী ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার কৃষককে। এছাড়াও থেমে থেমে আসা বৃষ্টির কারণে আগে কেটে রাখা ধানও মাড়াই করে শুকাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কষ্ট করে সৃজিত হাজার হাজার একর জমির ধান। ফলে কৃষকের বুকে জমছে চাপা আর্তনাদ। চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ। কুমিল্লার কিছু কিছু এলাকায় অতি বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে, ঝড়ের আঘাতে ঝরে গেছে ধান, কোথাও ভারী বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পাকা ধান। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটাশেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে গন্ধ হয়ে গেছে ধানে। বৃষ্টি ভেজা ধান ও গাছে আক্রমণ করেছে ছত্রাক। শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর (অঙ্কুরোদগম)বেরিয়েছে। ফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আরকোনো কাজে আসছে না কৃষকের। এদিকে, বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুমিল্লায় এ বছর বোরোর আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৭হেক্টর জমিতে। যা ছিলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টরবেশি।তেমনিভাবে ফলনও ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্যমাত্রা। হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪.৯ টন। অথচ গত কয়েকদিনে মাঠ ঘুরে দেখাগেছে ভিন্ন চিত্র। ফলন ভালো হলেও গত ক’দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ জমির ধান মাটির সাথে শুয়ে গেছে। আর ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় অনেক জমির ফসলই তলিয়েগেছে। ফলে একদিকে যেমন ছড়া থেকে ধান ঝরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, তেমনি পানিতে তলিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকা এসব ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যেতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে-গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরকইট গ্রামের কৃষক মোমেন মিয়া জানান, এবার বোরো ধানের আবাদ খুব ভাল হয়েছিল। গত কয়েক দিনের ঝড়-বৃষ্টির কারণে জমির ধান মাটিতে পড়ে গেছে। জমি থেকে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। ধানের ক্ষেতে পানি থাকায় শ্রমিকরা ধান কাটতে মাঠে নামতে পারছে না। বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। কাদুটি গ্রামের কৃষক কামরুল জানান, জমিতে পানি জমে থাকায় ধানগাছ গুলো পানির নিচে।শেষমেশ কতটা ধান থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরবোরোক্ষেতের ধানের পাক ধরলে কয়েকদিনের ঝড়ো বৃষ্টিতেক্ষেতের ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে। এরপর আবার ভারী বর্ষন হওয়ায় সব ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতগুলোতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে পড়ে যাওয়া ধানথেকেই আবার কলিয়ে গাছবেরিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। বেড়ে যায় কৃষি শ্রমিকের মজুরী। ফলে কৃষকেরাক্ষেতের ধান নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। ক্ষেতে পড়া ধানে ফলন কমে যায়। অনেক কৃষক ধারদেনা করে মাঠে ধান চাষ করে খরচের টাকাও ঘরে উঠাতে পারেননি। যে কারনে এখন আকাশে মেঘ জমলে কৃষকদের সব সময় ভয় হচ্ছে কখন জানি কি হয়। দাউদকান্দি উপজেলার বায়নগর গ্রামেরবোরো চাষী বকুলহোসেন জানান, চলতি বছর প্রায় দুই একর জমিতেবোরো চাষ করেছিলেন। কষ্টার্জিত ফসল ঘরেতোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ডুবেগেছে তার জমির পাকা ধান। এতে ধানের সঙ্গে ডুবেছে এ কৃষকের স্বপ্নও। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। একই অবস্থাদেবিদ্বার, বরুড়া ও বুড়িচং উপজেলার কৃষক আমির হোসেন, জাকির হোসেন, মনির হোসেনসহ প্রায় তিন শতাধিক কৃষকের। ধারদেনা করেবোনা ফসল এভাবে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত ২৯ এপ্রিলথেকে ৯মে পর্যন্ত ভারী বর্ষণে এ কুমিল্লায় প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে বোরো ফসলের জমিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। একই চিত্র দেখাগেছে, বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ও বাকশিমুল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। অনেক গ্রামে এখনো অর্ধেকেরও বেশি ফসল রয়ে গেছে কাটা-মাড়াই ও শুকানোর বাকি। তারা চেয়ে আছেন প্রকৃতির উপর। যদি আকাশের মেঘ কেটে সোনালী সূর্য হাসে, তবে সামান্য হলেও ভোগান্তি কমবে তাদের। সৃজিত ফসলে লাভ না হোক, অন্তত হিসেবের খাতায় লসের অঙ্ক কষতে হবে না কুমিল্লার এসব প্রান্তিক কৃষককে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।