পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। গত বছর বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কের যে ক্ষতি হয়েছিল সেগুলোই মেরামত করা হয়নি। আবার নতুন করে বর্ষা আসন্ন প্রায়। এরই মধ্যে দেশের চারটি প্রধান মহাসড়কসহ বেশিরভাগ সড়ক-মহাসড়কের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখান্দের। কোনো কোনো সড়ক-মহাসড়ক যান চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। গাড়ির ধীরগতির কারনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে ভোগান্তি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে প্রয়োজন ছিল তিন হাজার ২৯ কোটি টাকা।
এজন্য প্রায় তিন মাস আগে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তখন এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র এক হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। এরপর সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবারও চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সওজ সূত্র জানায়, সেই বরাদ্দের পুরোটা মেলেনি। এতে করে সামনের বর্ষায় সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগি করা দুরুহ হয়ে পড়বে। এমনকি এবার সড়কপথে ভোগান্তি অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে কিছু বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সেগুলো দিয়ে মেরামতের কাজ যতটুকু পারা যায় ততটুকু করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, গতবারে বর্ষা গেছে দেরিতে, এবার আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি। এতে করে আমাদের কাজের সময় কমে গেছে। চ্যালেঞ্জটাও বেড়ে গেছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সারাদেশেই মেরামতের কাজ চলছে। একই সাথে এডিবি’র কাজও চলছে। আশা করছি সামনের বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না।
গত বছর সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আরও কয়েক কিলোমিটার। বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ দেশের কয়েকটি স্থানের মহাসড়ক। একই সাথে দেশের প্রধান চারটি মহাসড়কের ১০৬০ কিলোমিটারের অর্ধেকই নষ্ট হয়ে যায়। ভাঙাচোরা সেই সব সড়ক-মহাসড়ক অস্থায়ী মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। মেরামতের নামে চলেছে লুটপাট। এতে করে মেরামতের কয়েকদিনের মধ্যেই অনেক সড়ক-মহাসড়ক ভেঙে একাকার হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কোনো কোনো সড়ক আবার মেরামতই করা যায়নি বর্ষার কারনে। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। চিঠিতে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের জন্য প্রায় তিন হাজার ২৯ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানানো হয়। তবে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় এক হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। বরাদ্দকৃত এই টাকায় সঙ্কুলান না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে কিছু বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সেই টাকায় এখনও চলছে জোড়াতালির কাজ। পরবর্তী সময়ে বন্যা ও অতিবৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক স্বল্পমেয়াদি মেরামতে আরও অতিরিক্ত ১৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় অর্থ বিভাগে। তবে এক্ষেত্রেও চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে এ ব্যয় নির্বাহের পরামর্শ দেয় অর্থ বিভাগ। সর্বশেষ ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি মেরামতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৯৪৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়। তবে অর্থ বিভাগ এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করে। সওজ সূত্র জানায়, প্রায় এক হাজার কোটি টাকার স্থলে মাত্র ১০০ কোটি টাকায় কি কাজ হবে তা সহজেই অনুমেয়। সে হিসাবে এবার সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তি অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আলাপকালে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাস চালক ও যাত্রীরা একই শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের বর্ষার পর থেকে দেশের চারটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে খানাখন্দ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অব্যবস্থাপনায় স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়ে আসছে। ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব প্রায় ৩০৭ কিলোমিটার। অথচ ঢাকা থেকে রংপুরের দিকে যাত্রা করলে ২১৫ কিলোমিটার পথই দুর্ভোগের যাত্রা। প্রায় তিন বছর ধরে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ভাঙাগড়ার খেলায় এই মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের নলকা থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলায় পড়েছে ৯৭ কিলোমিটার। এর পুরোটাই খানাখন্দে ভরা। বিশেষ করে গাইবান্ধা অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। দূরপাল্লার বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অংশে মাঝেমধ্যে চলে জোড়াতালির মেরামত। একই অবস্থা মহাসড়কের রংপুর অংশের ২৩ কিলোমিটার মহাসড়ক।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে এক বছর আগে। এরই মধ্যে ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এই মহাসড়কের প্রায় এক তৃতীয়াংশের পিচ উঠে গেছে। কোনো কোনো স্থানে খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। এই মহাসড়কে যন্ত্রণার নাম মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতু। এই তিনটি সেতুর মধ্যে অব্যবস্থানায় মেঘনা ও গোমতী সেতুর যানজট দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দূরত্ব ২৭১ কিলোমিটার। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া পর্যন্ত সড়ক কিছুটা চলনসই। কিন্তু দৌলতদিয়া থেকে খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। এর মধ্যে যশোর-খুলনা অংশের ৩৩ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। রাজবাড়ী ও মাগুরা অংশ গত বর্ষার পর নামমাত্র মেরামত করা হয়েছিল। এখন আবার আগের মতোই পিচ ও আস্তরণ উঠে গেছে।
ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার বেশিরভাগ অংশই বেহাল। এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় জোড়াতালির মেরামত দিয়ে চলছে দুই বছর ধরে। এই মহাসড়কের আরেকটি অংশ টঙ্গী থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা।
সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু মেরামত ও নির্মাণে গত আট বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও সড়কের বেহাল অবস্থা বদলায়নি। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কের স্থানে স্থানে খানাখন্দ, পিচ ও সুরকি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সড়কপথে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলা ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। বর্ষা এলেই জোড়াতালির মেরামত, পরক্ষণেই গর্ত-এই চক্রেই চলছে গত আট বছর।
সওজের হাইওয়ে ডিজাইন ম্যানুয়াল (এইচডিএম) বিভাগের ২০১৬ সালের আগস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ৩৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। ৩৯ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভালো। আর সাড়ে ২৩ শতাংশ চলনসই। দেড় বছর আগের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সড়ক-মহাসড়কের অর্ধেকই খারাপের পর্যায়ে চলে গেছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের সড়কের অবস্থাও খারাপ। জানা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের এই বেহাল দশার জন্য লুটপাট, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি অনেকটাই দায়ী। সওজের মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বাইরে এবং প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠজন ছাড়া সড়ক বিভাগে কেউ ঠিকাদারী করতে পারে না। রাজনৈতিক পরিচয়ে ঠিকাদাররা তাদের প্রভাব খাটিয়ে খেয়াল খুশিমতো কাজ করেন। সাথে দুর্নীতি-অনিয়ম তো আছেই।
সূত্র জানায়, গত বছর বরাদ্দের টাকা থেকে সড়ক-মহাসড়কের দীর্ঘমেয়াদী তেমন কোনো কাজই হয়নি। যা হয়েছে সবই স্বল্পমেয়াদী মেরামতের কাজ। তড়িঘড়ি করে এই মেরামতের কাজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করার কয়েকদিন পরেই সড়ক-মহাসড়ক আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। বরাবরই বর্ষার আগে এই ধরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সওজের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের জবাব, মেরামত করা হয়েছিল ঠিকই। তবে তা বর্ষার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আর বর্ষার পর কয়েকদিনের মধ্যে সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তারা বলেন, তড়িঘড়ি করে কোনো মতে সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগি করা হয়েছে। আগামীতে এগুলো স্থায়ী মেরামত করা হবে। সওজের একজন কর্মকর্তা জানান, এবার আগেভাগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তড়িঘড়ি করে মেরামতের সময়ও পাওয়া যাবে না। এ কারনে ভোগান্তি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।