Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

তানোরে অর্ধেক ধান দিয়েও মিলছে না শ্রমিক

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মোমিনুল ইসলাম মুন তানোর (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর তানোরে গত সোমবারে ভয়াবহ কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টি ও শিলা এবং গত বুধবারের বৃষ্টি বোরো চাষিদের কপালে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের জীবনে মহামারি আকার ধারন করেছে। দেখতে দেখতে ঢুবে যাচ্ছে পাকা ধান।
কষ্ট করে চাষাবাদ করা বিল কুমারী বিলের পাকা ধান এতই দ্রæত ঢুবছে এক জমির ধান কাটা না হতে উঠে যাচ্ছে আরেক জমিতে পানি। কোন উপায় নেই অর্ধেক বা তিন ভাগের দু ভাগ দিয়ে পাচ্ছেনা শ্রমিক।
আবার অনেকে শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোন রকমে ধানের উপরি ভাগ কেটে নৌকায় করে শত কষ্ট মেনে রাস্তায় নিয়ে আসছে ধান । এতে করে বোরো ধান কাটা নিয়ে মহা দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে কৃষকরা। সেই সাথে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট।
জানা গেছে উপজেলায় আর এক সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে যেত প্রায়। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে গত শনিবারে সন্ধ্যার দিকে হয় বৃষ্টি । তবে ওই রাত থেকেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে পড়ে । গত রোববারে আবহাওয়া ছিল অনুকুলে । কিন্তুগত সোমবার সকালে কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টি শিলা হয় প্রচুর । বোরো চাষিদের সব স্বপ্ন মাটিতে মিষে যায় নিমিষেই। এতই পরিমাণ ঝড় বৃষ্টি শিলা হয় যে বিদ্যুতের ১৭টি খুটি উপড়ে পড়ে । অপরদিকে চারদিক করা উজান থেকে আসা পানির স্রোত নামতে থাকে বিল কুমারী বিলে। পরে গত বুধবারের বৃষ্টি চাষি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের মাঝে মহামারি নামিয়ে দেয়।
সরেজমিন দেখা যায় বিলের মুল অংশ কুঠিপাড়ার নিচ থেকে গুবিরপাড় ধানতৈড় গোকুলগ্রামের সামনের অংশ। এছাড়াও তালন্দ পার হয়ে লবিয়াতলা ব্রীজের পূর্ব পশ্চিম দিকের হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান ডুবে গেছে । এদিকে কামারগা শ্রীখÐা বাতাসপুর পাড়িশো মাদারিপুর জমসেদপুর মালশিরা গ্রামের শতশত কৃষকের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গুবিরপাড়া গ্রামের সাহেবের ৫বিঘা শাওনের ৩বিঘা লতিফের ২বিঘা জিল্লুর ২বিঘা মতির ২বিঘা আছানের ২বিঘা সামাদের ১বিঘা জমির পাকা ধান পানির নিচেসহ অনেক কৃষকের পাকা ধান পানির নিচে। তাঁরা জানান বিলের পানি হুহু করে বাড়ছে । উত্তর দক্ষিন দিক থেকে নামছে স্রোত যার কারনে দ্রæত পানি বাড়ছে । পানিতে এখন বিলের মুল অংশ থৈথৈ করছে ।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামারগা শ্রীখÐা গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, গত সপ্তাহের কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ উজান থেকে আসা পানির কারনে বিলের পানি প্রচুর বৃদ্ধি পায়। যার কারনে কৃষকের পাকা ধান ডুবেছেন। এমন কি যাদের ধানের মাথা জেগে আছে তাঁরা বিঘায় যা ফলন হবে তার অর্ধেক দিতে চেয়েও পাচ্ছেনা শ্রমিক । বোরো পাকা ধান নিয়ে মহা দুর্যোগে পড়েছে কৃষকরা। ভূমিহীন চাষি বাবু সরদার জানান, বিলের খাস জমি লাগিয়েছিলাম। দুই দিন পর কাটা পড়ত। কিন্তু সর্বনাশা বন্যা সব কেড়ে নিয়েছে। এক টুকরো ধান নিয়ে আসতে পারিনি ।
এ বিষয়ে বোরো চাষি কৃষক বাবুর বলেন, কৃষি অফিসের এমন রিপোর্ট সাথে একমত হতে পারিচ্ছিনা। কেননা ধান ডুবে যাওয়া শিলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক । যদি সরেজমিনে গিয়ে দেখলে কর্তা বাবু ঠিকই বুঝতে পারত কি পরিমাণ কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। ঝড় শিলে ও বিল সংলগ্ন হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবলেও রিপোর্ট তৈরী করেছেন মাত্র ২১৫ হেক্টর জমির। এটা কৃষি অফিসারের মনগড়া রিপোর্ট বলে অভিযোগ এ কৃষকের। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, অকাল বন্যার পানিতে মাত্র ২১৫ হেক্টর জমির ধান ডুবেছে । আর ঝড় শিলে ক্ষতি ৪৮৫ হেক্টর জমির ধান । তিনি অবশ্য শ্রমিক সঙ্কটের কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে পাঁচহাজার হেক্টর পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যায় তিনি। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাঃ শওকাত আলী জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরী করতে কৃষি অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা চুড়ান্ত হলেই উর্ধতন কর্তিপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ