কুমিল্লায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মাধ্যমিকের চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং বাণিজ্যের চিত্র। স্কুল চলাকালীন সময়ে কুমিল্লা নগরীর কোচিং সেন্টারগুলোতে চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠদান। ফলে স্কুলগুলোতে উপস্থিতির হার কমছে। কুমিল্লার শতাধিক কোচিং সেন্টারের শিক্ষক বা পরিচালকরা চটকদার লেকচার আর বিজ্ঞাপন ও দালাল চক্রের প্রচারণার ফাঁদে ফেলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুল বিমুখ করে তুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউ সড়কে মর্ডাণ স্কুলের কাছে রয়েছে সাফল্য কোচিং সেন্টার। মিজানুর রহমান নামে এক শিক্ষক এটি পরিচালনা করেন। তার কোচিং সেন্টারের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুলের ক্লাসে যেতে হয়না। কারণ তিনি স্কুলের ক্লাস চলাকালীন সময়ে পড়ান। স্কুল সময়ের দুই শিফটে মিজানের সাফল্য কোচিংয়ে পড়ছে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোচিং করানো হয়। চতুর্থ শ্রেণির জন্য প্রতিমাসে তিন হাজার এবং পঞ্চম শ্রেণি চার হাজার নেয়া হয়। এমনিভাবে নগরীর নানুয়াদিঘীর দক্ষিণপাড়ে লার্নাস নামে একটি কোচিং সেন্টারে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির কোচিং করানো হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কয়েক ব্যাচে চলে কোচিং। পঞ্চম শ্রেণির জন্য আড়াই হাজার, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম তিন হাজার এবং নবম-দশম সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রতিমাসে দিতে হয়। এখানে আবার ভর্তি হতে হলে ফরম ও নাম নিবন্ধনের জন্য সাড়ে তিনশো টাকা এবং একমাসের বেতন অগ্রিম জমা দিতে হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল বিমুখ করে তুলছে বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার। স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব কোচিং সেন্টার স্বঘোষিত স্কুলে পরিণত হয়েছে। নগরীর হাউজিং এষ্ট্রেট, সরকারি মহিলা কলেজ সড়ক এলাকা, ভিক্টোরিয়া কলেজের রাণীর দিঘি এলাকা, উজির দিঘিপাড়, বাগিচাগাঁও, ঝাউতলা, পুলিশ লাইন, মনোহরপুর সোনালী মসজিদ গলি, তালপুকুরপাড়, বাগিচাগাও, ফরিদা বিদ্যায়াতনের গলি, ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ রোড, ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়, মোগলটুলি ও ধর্মপুর ডিগ্রি কলেজ এলাকায় অন্তত শতাধিক কোচিং সেন্টারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে। কেউ নিজের বাড়িতেও কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করছেন।
নগরীর বেশিরভাগ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বেশ কজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে- অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে পড়ালেখা করান কোচিংয়ে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোচিং সেন্টারগুলো খোলা থাকায় স্কুলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত থাকে।