Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের কান্না

গলার কাটা ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম ও মো. ওমর ফারুক, ফেনী : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম, ফেনী ও বারইয়ারহাটসহ ৪৫ কিলোমিটার সড়ক এখন যাত্রী ও চালকদের কান্নার স্থান। এটি যেন দেখার কেউ নেই। ঘন্টার পর ঘন্টার যানজটে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ির যাত্রীদের। এ যানজট নিরসনের কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশাখের ঝড় বৃষ্টি আর যানজট যেন মানুষের দুঃখে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২৫ মিনিটের সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১০-১২ ঘন্টা। উপায়ন্তর না দেখে অনেকে পায়ে হেঁটে মাইলের পরম মাইল অতিক্রম করছেন। দেশের লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রতিদিনের যানজট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ফেনীর ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে নির্মিত রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে সৃষ্ট যানজটে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মাইলের পর মাইল ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে একদিকে যেমন যাত্রীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না মালবাহী গাড়িগুলো। দুরদুরান্তের গাড়িগুলো মহাসড়কের ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও বন্দরে পৌঁছাতে হয়। বন্দরের মালবাহী গাড়িগুলো ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে যাতায়াতের একমাত্র মিডেল পয়েন্ট হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশ। এ বিশাল এলাকার মালবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ির চাপ পড়ে মহাসড়কের উপর। যান চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখতে ফেনী রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তা গলার কাঁটা হয়ে ঝুলে আছে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে যানজটের কারণে বন্দরমুখী হাজার হাজার মালবাহী কাভার্ডভ্যান, লরি ও ট্রাক ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে আছে। নির্ধারিত সময়ে মালামাল বন্দরে না পৌঁছায় বিদেশে শিপমেন্ট দিতে পারছে না গার্মেন্টসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী পণ্যের মালিকরা। এ যানজটের কারণে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায় গিয়ে যানজটের নিত্যকার ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
রেললাইন পার হতে এমনিতেই গাড়ি ধীরে চালাতে হয় বলে জানালেন গ্রীনলাইন পরিবহনের চালক মমতাজ মিয়া। তার উপর সরু রাস্তায় একাধিক গাড়ি পার হতে অনেক সময় লেগে যায়। স্থানীয়রা জানান,রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণে পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যথাযথ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেনি। বাইপাস সড়কসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন না করেই কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড (পিবিএল)। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুরে ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি কাজের অনুমতি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড(পিবিএল)।
একসাথে কুমিল্লা, ফেনী ও ইলিয়টগঞ্জ ওভারপাস নির্মাণ কাজ শুরু করে তারা। ফেনীর মূল ওভারপাসের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৮৬.৭৯ মিটার। দু‘দিকের ঢালু অংশ মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৭৫৫ মিটার। ঢাকার অংশের দৈর্ঘ্য ৩৪৭ মিটার আর চট্টগ্রাম অংশের দৈর্ঘ্য ৪০৮ মিটার। পিবিএল কাজ পাবার পর থেকে নান টালবাহানা শুরু করে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে কাজ করার পর ফেনী রেলওয়ে ওভারপাসের অগ্রগতি মাত্র ৫০ ভাগ।
২০১৬ সালে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। ঐ বছরের সেপ্টম্বরে চাঁদার দাবীতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের উপর হামলা চালায় বলে থানায় অভিযোগ আনা হয়। পিবিএল‘র ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান ফেনী মডেল থানায় ৬ সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তখন ফতেহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজন নামে একজনকে বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের সদস্যরা। এ ঘটনার পর ১ বছর ধরে কাজ বন্ধ থাকে। লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
এদিকে জনদুর্ভোগ দেখে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় মেট্রো গ্রæপের প্রতিষ্ঠান আল আমিন কন্সট্রাকশন। অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে তারাও। এ প্রতিষ্ঠানকে ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাস সময় দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সময়সীমা পার হয়ে ২০১৮ সালের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ১০ ভাগ। এভাবে চলতে থাকলে এ বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
গত ৬ এপ্রিল ফতেহপুরের রেলওয়ে ওভারপাসের অগ্রগতি দেখতে ফেনী এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মে মাসের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান। কিন্তু কাজের গতি এমন হলে চলতি বছর তা শেষ হবে না বলে ফেনীর বিশেষজ্ঞ মহল ও সাধারণ জনগণের অভিমত।
এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ধুলিঝড় আর বর্ষা মৌসুমে কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলে ওভারপাসের বাইপাস সড়কটিতে। বর্ষায় কাদা আর পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়কটি। ফলে জ্যাম হয় নিত্যকার সঙ্গী। নির্মাণ কাজটির কারণে প্রতিদিন ৫/৬ ঘন্টা করে নষ্ট হচ্ছে মহাসড়কে চলাচলকারীদের।
ফেনী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বাইপাস সড়ক নিয়ে আর কোন পরিকল্পনা নেই। তবে শহরে প্রবেশের অ্যাপ্রোচ সড়কটির সংস্কার করা হবে। এতে জনদুর্ভোগ অনেকটা কমবে বলে তার মন্তব্য। এদিকে ফেনীর ফতেহপুরের রেলওয়ে ওভারপাস নিয়ে মন্তব্য জানার জন্য প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সংশিষ্টদের সাথে কথা বলতে চাইলে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে কেউ রাজি হননি। সাংবাদিকদের তথ্য দিতে উর্ধ্বতন মহলে নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানান কর্তব্যরত এক প্রকৌশলী। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার মতো কেউ ফেনীতে নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
হাইওয়ে পুলিশ ফেনীর অফিসার ইনচার্জ আবদুল আউয়াল জানান, ফেনীর পুরাতন সড়ক মেরামত ও রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণ কাজ চলতে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা নিরসলভাবে যানজট নিরসনের জন্য কাজ করছি। অপরদিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক শনিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বলেন, দিন-রাত পরিশ্রম করে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশের যানজট নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

 



 

Show all comments
  • তপন ৬ মে, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
    মন্ত্রী মহোদয় কী এগুলো দেখেন না ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা-চট্টগ্রাম

২৯ জানুয়ারি, ২০২২
১৯ অক্টোবর, ২০২১
১৮ এপ্রিল, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ