Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগ নেতা অনিকের নারী পেটানোর ভিডিও ভাইরাল, কমিটি স্থগিত

ছাত্রলীগ নেতা অনিকের নারী পেটানোর ভিডিও ভাইরাল, কমিটি স্থগিত | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১১:০৩ এএম

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির কোচিং ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক ছাত্রলীগ নেতা মুজিবুর রহমান অনিকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।



এতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা অনিক ও সাদেক প্রধানিয়া মিলে দুই তরুণীকে বেদম পেটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিকটিম তরুণীদের একজন শুভ্র মাহমুদ ওরফে আসমতআরা সুলতানা ওরফে জ্যোতি। তিনি মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আরেকজন তারই পরিচিত এবং রুমমেট।

পেটানোর ভূমিকায় অনিক মিরপুর বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাদেক প্রধানিয়া একই শাখার পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক।

 

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে কমিটি স্থগিত করলেও থেমে নেই সমালোচনা। অনেকেই ফেসবুকে ভিডিওটি আপলোড করে নানা মন্তব্য করছেন।

ইশরাত ইভা নামের এক সংবাদকর্মী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা আবার আরেক ছাত্রলীগ নেত্রীকে এভাবে মারছে? একজন নয় দু’জন নারীকে মেরেছে তারা। টেনে-হিঁচড়ে নিচে ফেলে জুতা দিয়ে পেটাচ্ছে। আহা! এ কেমন দৃশ্য! এ কেমন ছাত্রলীগ? এইসব মুখোশধারী পশুরা কিভাবে ছাত্রলীগে পদ পায়? ছাত্রলীগকে শেষ করে দিচ্ছে এইসব মুখোশধারী নরপশুরা। নামে ছাত্রলীগ কাজে পশু। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন এসব মুখোশধারী নেতাদের।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, দু’জন তরুণী খাটের ওপর বসে আছেন। পাশ থেকে দু’জন যুবক তাদের সমানে পেটাচ্ছেন। একজনের হাতে কাঠ সদৃশ, আরেকজনের হাতে জুতা।

 

মেয়ে দুটিকে যুবক দু’জন পেটাতে পেটাতে খাট থেকে নিচে ফেলে দেন। এরপর উল্টো করে ফের পেটাতে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ অক্টোবর দুপুরে দারুস সালাম রোডের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরের দিন ভোরে দারুস সালাম থানায় একটি মামলাও করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।

নির্যাতনের শিকার বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শুভ্র মাহমুদ জানিয়েছেন, অনিক ছাড়াও ওই শাখা ছাত্রলীগের নেতা হাফিজ হাওলাদার, নিজু, রাশেদ, জিলনসহ অন্তত ১৫ জন তাদের মারধর করেছিলেন। এদের মধ্যে অনিকের অনুসারী ৮ জনকে তারা চিনতে পেরেছিলেন। বাকিরাও অনিকের বহিরাগত অনুসারী ছিলেন।

রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে তাদের পেটানো হয় বলেও দাবি করেন ছাত্রলীগ নেত্রী শুভ্র মাহমুদ।

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক লম্বা বিরোধের অংশ হিসেবে আমাদের ওপর ওইদিন অনিক দলবল নিয়ে হামলা করেছিল। আগেও একবার তিনি কুপিয়ে আমার হাত কেটে দিয়েছিলেন।’

শুভ্রার ভাষ্যে, দারুস সালাম রোডের বাসায় ওইদিনের মারধরে তার কানের পর্দা ফেটে যায় এবং পা ভেঙে যায়। অস্ত্রোপচারের পর কান কিছুটা ঠিক হলেও এখনো তিনি পা টেনে হাঁটেন।

তিনি দাবি করেন, ‘এতদিন সবাই তার বিরুদ্ধে ঘটা এসবের প্রমাণ চেয়েছে। কিন্তু, আমি দিতে পারিনি। এবার এই প্রমাণ পাইছি, দিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন, ছাত্রলীগ নেতৃত্ব কী বলবেন? এটাই আমার প্রশ্ন।’

অভিযুক্ত মিরপুর বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিক বলেন, ‘ঘটনাটি বেশ আগের। যেভাবেই হোক ঘটেছে। এটা আমি করি নাই, পোলাপান করেছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘শুভ্রা একটা বাজে মেয়ে। বিভিন্ন জনের নামে মিথ্যা মামলা করে টাকা আদায় করে। আমার কাছ থেকে একটি মামলার আপস হিসেবে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। ছাত্রলীগের মধ্যে মেয়েটি একটি আতঙ্ক।’

গতবছরের ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক মুজিবুর রহমান অনিককে বহিষ্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে ফেরানো হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ নেতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ