পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নাছিম উল আলম : ‘গরীবের খাদ্য’ হিসেবে অধিক ক্যালরি উৎপন্নকারী মিষ্টি আলু দেশের অনগ্রসর মানুষের স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টির ভাল যোগানদাতা হতে পারে। এ পুষ্টিকর খাবার সাধারণ মানুষের জন্য সারাদিনের পুষ্টির যোগানদাতা। কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙ্গিন শাঁসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পুরণে সক্ষম। যা শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি স্বল্পতার আশঙ্কা থেকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক।
আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উন্নত জাতের, উচ্চফনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। এমনকি এসব মিষ্টি আলু থেকে জেলী, জ্যাম, চিপস, হালুয়া ও মিষ্টি পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব।
মিষ্টি আলুর সনাতন দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টিআলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টিআলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টিআলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৬, বারি মিষ্টি আলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩০-৪০ টন পর্যন্ত।
এমনকি দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টন পর্যন্ত মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান বর্তমানে চতুর্থ। তবে সুদূর অতীতকালের এ খাদ্য ফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো স¤প্রসারণ লাভ করেনি। এমনকি উৎপাদন এলাকার বাইরেও এ ফসলের তেমন প্রচলন নেই। এখনো দেশে মোট উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় অর্ধেকই দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে। পটুয়াখালী ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। তবে এখনো কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক পর্যায়ে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ মাঠ পর্যায়ে কৃষিকদের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে, সেসব জমিতে উন্নত প্রযুক্তির উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে এ অঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।
অথচ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ফিলিপাইন থেকে ১৯৮১ সালে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্মপ্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষণা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’ নামে অনুমোদন প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করে। এ জাতে মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ভিটামিন এ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তাইওয়ানের এশীয় সবজি গবেষনা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টি আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ভিটামিন-এ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চর অঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য যথেষ্ঠ উৎকৃষ্ট। তবে চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত মিষ্টি আলুর আবাদ সম্ভব ।
বারি উদ্ভাবিত ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-৪’ ও ‘বারি মিষ্টি আলুÑ৫’এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটিমিন-এ’র একটি ভাল উৎস। এসব জাতের মিষ্টি আলু দিয়ে অতি সহজেই চিপস, জ্যাম, জেলি ও সস পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বারি’র বিজ্ঞানীগন। যা গ্রামের মেয়েদের ঘরে বসে একটি বিকল্প আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে।
চলতি মৌসুমে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ৮ লাখ টনের মত মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রনালয়সহ ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের জেলাগুলোতেই প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টন।
ইতোমধ্যেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতেও শুরু করেছে। প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা দরে এসব আলু বিক্রি হচ্ছে। তবে এবারো মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা গড়ে প্রতি কেজি মিষ্টি আলু ১০ টাকার বেশী দাম পাচ্ছেন না। যা গোল আলুর চেয়ে কিছুটা ভাল দাম হলেও তা অন্তত কুড়ি টাকা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন মনে করছেন কৃষকগন। এবার ভরা মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রি করেছে মাত্র ৫-৭ টাকা কেজি দরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।