Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোঁড়াখুঁড়ি ও বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তি

ঢাকায় ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের কাজে ধীরগতি

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বৃষ্টির কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ না হওয়ায় কোনো পানি নিস্কাশন হতে না পারছে না। এতে করে রাস্তাসহ অলিতে-গলিতে জমে আছে পানি। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তার উপর রাখা হয়েছে ড্রেনেজের মাটি ও ময়লা-আবর্জনা। আবার কোথাওবা রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে ড্রেনেজের বড় বড় পাইপ। সবমিলে বর্ষার আগেই রাজধানীবাসীকে চর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পুরোপুরি বর্ষা শুরু হলে কী অবস্থা হবে তা ভেবে এখনই অনেকের ঘুম হারা হয়ে গেছে। গত বছরের পানিবদ্ধতার তিক্ত অভিজ্ঞতা রাজধানীবাসী এখনো ভোলেনি। গত বছর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ বছর পানিবদ্ধতা থাকবে না। অথচ পানিবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি এখনো শেষ হয়নি। বরং দুই সংস্থার কাজের ধীর গতি নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
গত বছর রাজধানীতে পানিবদ্ধতার ভয়াবহতা দেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, সামনের বছর থেকে আর এসব (পানিবদ্ধতা) দেখবেন না। কিছুদিনের মধ্যেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায়নি ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে। ঢাকা ওয়াসা গত মার্চ মাসেও পানিবদ্ধতা নিরসনে কোনো কার্যক্রম শুরু করেনি। কোনো নালা পরিষ্কার করেনি, পুনঃখনন করেনি কোনো খাল। তবে গত ২ এপ্রিল সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছিলেন, পানিজট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রামচন্দ্রপুর খাল, রূপনগর খাল, বাউনিয়া খাল, দেব-ধোলাই খাল, সেগুনবাগিচা খাল ও মান্ডা খাল ( মোট ৩০ কিলোমিটার) পুনঃখনন, ২৪৯ কিলোমিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা পরিষ্কার, নালা মেরামত, সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের ময়লা অপসারণ, চারটি স্থায়ী পাম্প স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্প স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এগুলো বর্ষার আগে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে মোট ভূমির ১২ শতাংশ জলাধার থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকায় আছে মাত্র ২ শতাংশ। তাই বৃষ্টির সময় অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার জায়গা নেই। অন্যদিকে ঢাকা শহরের ৮০-৯০ ভাগ কংক্রিটে ঢাকা। এতে মাটির নিচে পানি যাওয়ার পথও বন্ধ। আর ঢাকার চারপাশের নিম্নাঞ্চল ভরাট করায় এর ভেতর থেকে পানি স্বাভাবিকভাবে বের হয় না।
গত বছর রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পানিবদ্ধতা হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে মৌচাক, মালিবাগ, মুগদা, শান্তিনগর, নাজিমুদ্দিন রোড, উমেশ দত্ত রোড, বংশাল রোড, মতিঝিল, বঙ্গভবন এলাকা, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, খিলগাঁও, মান্ডা, বাসাবো, রামপুরা, সবুজবাগ, জুরাইন, কদমতলী থানা প্রায় পুরো এলাকা, দনিয়া, রসুলপুর, গোবিন্দপুর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ছিল অন্যতম। এর মধ্যে কিছু এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় নালা নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও বর্ষা মৌসুমের আগে তা শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এতে করে এবারের বর্ষায় পানিবদ্ধতার পাশাপাশি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চলাচলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার মাত্র এক দিনের থেমে থেমে হওয়া বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানিবদ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব এলাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ধানমন্ডিস্থ রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি-৮/এ স্টাফ কোয়ার্টার মোড়, কাঁঠালবাগান, গ্যাস্ট্রোলিভার গলি, কলাবাগান ডলফিন গলি, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, ধোলাইখাল, আজিমপুর, হাজারীবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, সার্কিট হাউজ রোড, রাজারবাগ, শান্তিবাগ, আরামবাগ, মতিঝিল, দিলকুশা, বঙ্গভবন এলাকা, কমলাপুর, মানিক নগর, বাসাবো, মুগদা, নিউমার্কেট পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের বটতলা, নাজিমুদ্দিন রোড, হোসেনি দালান, চকবাজার, লালবাগ, কাজী আলাউদ্দিন রোড, বংশাল, জুরাইন, পোস্তগোলা, মুরাদপুর, শ্যামপুর, দনিয়া, নূরপুর, কদমতলা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, শেখদী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইপাড় এলাকা অন্যতম। এসব এলাকার অধিকাংশে রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দনিয়া এলাকায় প্রায় এক বছর ধরে ড্রেনেজের কাজ শেষ না হওয়ায় পানি নিস্কাশন হতে না পারায় পুরো এলাকা ডুবে গেছে। বিশেষ করে বর্ণমালা স্কুলের সামনের রাস্তা গত দুদিন ধরেই পানির নিচে।
জানা যায়, রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ বছর সড়ক, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন নির্মাণে ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে ডিএসসিসি। ইতিমধ্যে প্রায় সব টাকা খরচ করেছে এই সংস্থা। কিন্তু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসাও নিজস্ব ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে ব্যয় করে বড় অঙ্কের টাকা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয় না।একই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়। গত রোববার মিরপুরের কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ার সড়কে হাঁটু পানি জমে ছিল। এসব এলাকার শত শত মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন, ব্যাঘাত ঘটেছে যানবাহন চলাচলে। মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বরেও পানিবদ্ধতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এ ছাড়া কল্যাণপুর, কাঁটাসুর, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুর হাউজিং, নবোদয় হাউজিংসহ ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।নগরবাসীর অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই পানি থই থই করে ঢাকার রাজপথ থেকে অলিগলিতে। এবার ড্রেনেজের কাজের ধীর গতির কারনে বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই ভোগান্তি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, ড্রেনেজের কাজের জন্য বড় বড় পাইপ ফেলে রাজধানীর জুরাইন, মুরাদপুর, দনিয়া, নূরপুর, জিয়া স্মরণী, পলাশপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের কোনো প্রকার প্রস্তুতির আগেই রাস্তা বন্ধ করে এসব বড় বড় কংক্রিটের পাইপ রাস্তার উপর রাখায় কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে করে একজন রোগিকেও সময়মতো হাসপাতালে নেয়ার উপায় নেই। ভুক্তভোগিদের প্রশ্ন, কাজ শুরু করতে দেরি হলে দেড় মাস আগেই এসব রাস্তা বন্ধ করা হলো কেনো? ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ