Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেফাজত কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা কাউকে সমর্থন করবে না -আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

খুলনা ও গাজীপুরে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আসন্ন। বড় দু’টি দল লড়ছে বলে নির্বাচন জমবে ভালো। কোনো কোনো প্রার্থী নিজেকে হেফাজতের ক্যান্ডিডেট বলে দাবী করছেন। তার দলটি ইসলামী হওয়ায় এবং হেফাজতের সাথে অতীতে সম্পর্ক থাকায় অঘোষিত একপ্রকার প্রচারণা চলছে যে, তিনি হেফাজতের প্রার্থী। এ ব্যাপারে গাজীপুরের বিশিষ্ট নাগরিক সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বর্তমানে শিল্পপতি মোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হেফাজতের প্রার্থী বলে কথিত যিনিই হোন তিনি হেফাজতের সমর্থকদের ভোট পাবেন না। কারণ, বড় দুই প্রার্থীর বহু সমর্থকও সেসময় ঈমানী আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন। তাছাড়া, স্থানীয় নির্বাচন হলেও এখানে দলীয় পরিচয়ে ও মার্কায় নির্বাচন হচ্ছে। দেশ-জাতি, দীন-ধর্ম, মুসলিম ও পৌত্তলিক সংস্কৃতি, ঈমান ও মূর্তিপূজা এসব ভিত্তিতেই ভোটাররা প্রার্থী বাছাই করবেন। যতই কৌশল ও দীনের কথা বলা হোক কে কোন ধারার সহায়ক সেটাও তারা বিবেচনা করবেন। চরমোনাইসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন আলাদাভাবে নির্বাচন করে যদি পাশ করতে পারে তাহলে কথা নেই, কিন্তু তাদের ভোট কাটার ফলে যদি হেফাজতের ১৩ দফার বিপক্ষের প্রার্থীরা এগিয়ে যায়, তাহলে এর ব্যখ্যা এসব দলকেই দিতে হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়াই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া, ইসলামী ও সমামনাদের নিয়ে ভিন্ন জোট করাসহ নানা জনবিরোধী ও সরকার সহায়ক পথ ও পদ্ধতি নিয়ে অনেকে বহুদূর অগ্রসর হয়ে পড়েছেন। সুযোগ সুবিধা ও আর্থিক লেনদেনের জালেও অনেকেই আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন, যা ইসলামী চেতনা ও নাগরিক ঈমানী আন্দোলনের আবহমান ধারাকে শুধু কলুষিত নয় ক্ষেত্রবিশেষে ধ্বংস করে দিতে পারে। স্থানীয় এক জামে মসজিদের খতিব মুফতী আব্দুস সালাম বলেন, হেফাজত একটি দল নয়। এটি দলমত নির্বিশেষে ঈমানী আন্দোলন। একে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা অনৈতিক। এছাড়া হেফাজতের কোনো নেতা নিজের দল থেকে নির্বাচন করে একথা দাবী করতে পারেন না যে, তিনি হেফাজতের প্রার্থী। এসব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় সম্প্রতি মিডিয়াকে দেওয়া হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর একটি সাক্ষাৎকারে। যেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বা দলীয় আদর্শভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে না । একই সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল হিসেবে হেফাজতে ইসলামের নিবন্ধনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। সাক্ষাৎকারে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনমুখী সংগঠন নয়। এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আক্বিদাভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন। তাই হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ইসলামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা যদি নিজস্ব দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সেটা তাদের দলীয় ব্যাপার। এটার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিলও না। সবসময় আমি নিজেকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার চেষ্টা করি। হেফাজতে ইসলামও একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।’ ধারণা রয়েছে অন্য অনেক হেফাজত নেতার সরকারের সাথে বেশ সুসম্পর্ক থাকলেও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে সরকারের মানসিক ও আদর্শগত অমিল রয়েছে । এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব নেই, আবার শত্রæতাও নেই। আমি সরকারের বিরোধী নই। তবে নাস্তিক ও বাতিল অপশক্তির বিরোধী। নাস্তিক মুরতাদ ও শিরক বিস্তারকারী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বলে আমি তাদের বিরোধিতা করি। স্বভাবতই তাদের দোসরদের সঙ্গে আমার সখ্য হয় না।’ হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আদায় আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৩ দফা আদায় আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে এখন আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। ভবিষ্যতে দাবি আদায় আন্দোলনের জন্য আমরা কর্মসূচি দেব।’
জানা গেছে, আগামী সাত মে হাটহাজারীতে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসছেন। সেখানে একপক্ষ কেবল ঈমানী আন্দোলন নিয়ে থাকার কথা বলবেন। অপর পক্ষ আগামী নির্বাচনগুলোতে হেফাজতকে একটি স্বতন্ত্র শক্তি হিসাবে দাঁড় করানোর পক্ষে থাকবেন। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতের ভ‚মিকা যেন সরকারের বিপক্ষে না যায়, এবং খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনেও কৌশলে সরকারদলীয় প্রার্থীর হাতকেই শক্তিশালী করা যায় এমন মিশন নিয়েও কোনো কোনো নেতা বৈঠকে যোগ দিবেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেফাজত নেতা বলেন, সরকারের আস্থাভাজন নেতাদের অজ্ঞাত উৎস থেকে খরচপাতি ও বিমানের টিকেটও দেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাদের মাঝে মন কষাকষি চলছে বলেও জানা গেছে। এদিকে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, গাজীপুরের ২০ দলীয় প্রার্থী ভন্ড পীরের মুরিদ। এপ্রসঙ্গে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নির্দিষ্ট কোনো পীরের মুরিদ নই। বংশানুক্রমে আমরা হাক্কানী আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখের ভক্ত। গাজীপুরের সব আলেম আমাদের শ্রদ্ধাভাজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে হেফাজতের আন্দোলনের সময় কী ভ‚মিকা রেখেছি তা গাজীপুরের আলেম সমাজ জানেন। এমনিতে আমি হযরত হাফেজ্জী হুজুরের বেশি ভক্ত ছিলাম। যারা অপবাদ দিচ্ছেন, তারা আল্লাহর কাছে জবাব দিবেন। আমি কোনো আলেমের বিপক্ষে একটি কথাও বলব না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজত

১ নভেম্বর, ২০২২
৩১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ