পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. হেদায়েত উল্লাহ, গাজীপুর থেকে : একটি উৎসবমুখর, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে আমেরিকা। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলর বিল মোলার এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গাজীপুর সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষনের অংশ হিসেবে ২০ দলীয় জোট মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার ও ১৪ দলীয় জোট মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে প্রতিনিধি দলটি টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে আসেন। সেখানে ২০ দলীয় জোট মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ফজলুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন প্রমুখ বিএনপি নেতারা। প্রতিনিধিদলটি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী হাসান সরকারের সাথে কথা বলেন।
বিএনপির নির্বাচনী মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মাজহারুল আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিরা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে হাসান উদ্দিন সরকারের সাথে দেখা করেছেন। এসময় হাসান সরকারের কাছে তারা নির্বাচনী সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর জানতে চান। প্রতিনিধি দলের প্রধান বিল মোলার বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অংশিদার। তারা কোন রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করেন না। তবে বাংলাদেশে চলে আসা গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা অক্ষুন্ন এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চান তারা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিনিধি দলের প্রধান বিল মোলার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমরা প্রত্যাশা করি। তারা মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ^দরবারে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন বলেও জানান।
হাসান সরকার প্রতিনিধিদলকে জানান, গাজীপুর একটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। তিনি তরুণ বয়স থেকেই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। তিনি টঙ্গী শিল্প এলাকায় একসময় শ্রমিক রাজনীতির নেতৃত্ব দিতেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তিনি টঙ্গী পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকাকালে এলাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে শ্রমিকদের সন্তানেরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। এমনকি বৃহৎ শিল্প কারখানাগুলোতেও আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। এবার নির্বাচিত হলে তিনি শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য আধুনিক মানের উন্নত একটি হাসপাতাল করতে চান। শ্রমিকদের জীবন মান উন্নত করতে যান। তিনি প্রতিনিধি দলকে জানান, উচ্চ ভিত্তরা অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে চলে যান। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের সেই সামর্থ নেই। তাই আমি শ্রমিকদের জন্য সব ধরণের উন্নত চিকিৎসার সুবিধা সম্পন্ন সর্বাধুনিক একটি হাসপাতাল করতে চাই। যেখানে নিম্ম আয়ের নাগরিকরা স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। এব্যাপারে তিনি তাদের সহযোগিতা চান। জল ও যানজট নিরসনে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রশস্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। হাসান সরকারের উন্নত চিন্তা চেতনাকে সম্মান জানিয়ে এসময় প্রতিনিধি দলটি জানায়, তারা শ্রমিকদের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।
এর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছয়দানা এলাকায় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাস ভবনে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে যান মার্কিন প্রতিনিধি দল। এসময় প্রতিনিধি দলটি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিদ্যমান পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি মার্কিন প্রতিনিধি দলকে বলেছি, সাধারণ ভোটার, প্রার্থী, বিরোধী দলসহ সকলের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি সকলকে নিয়ে এখানে গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। আগামী ১৫ মে ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক করতে চাই। নির্বাচনে কোন মারামারি, কাদা ছোড়াছোড়ি বা বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। আমরা গরিব দেশ, অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হবার জন্য আমি সিটি কর্পোরেশনে গার্মেন্টস শিল্প আরো আধুনিকীকরণ ও পরিবেশ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যোগাযোগসহ সকল বিষয়ে মাস্টার প্ল্যান করেছি। তা বাস্তবায়নের লক্ষে আমি তাদের সহযোগিতা চেয়েছি যাতে এর মাধ্যমে সকলে মিলে একটি আধুনিক রাস্ট্র এবং এই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক শহর করতে চাই। সেই জন্য আমি তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। লোকাল সকলের মতামত, সহযোগিতা এবং ভোট চাই। সেই হিসাবে সকলকে আমি দাওয়াত দিচ্ছি।
কাউন্সেলর মোলার বলেন, আমি গাজীপুরে আসতে পেরে আনন্দিত। বাংলাদেশে ঢাকার বাহিরে গাজীপুর একটি গুরত্বপূর্ণ নগর। আমি এখানে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন। এখানে সব দলের প্রার্থীদের কথা শুনেছি। সব প্রার্থীই নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সুন্দর মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যা আশাব্যঞ্জক। আমি দেখতে পেয়েছি গাজীপুরে বৃহৎ আকারে সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। এটা খুবই ভাল বাংলােেদশের জন্য। যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ভাল হবে। আমাদের প্রধান বার্তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সাপোর্ট করে। আমরা প্রত্যাশা করি এখানে মুক্তভাবে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
হাসান উদ্দিন সরকারের গণসংযোগে জনতার ঢল
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, টঙ্গীর এরশাদ নগর, আউচপাড়া মোক্তার বাড়ি রোড, দেওড়া, মুদাফা পূর্ব পাড়া, ভাদাম, তিলরাগাতি, গুটিয়া মেডিক্যাল মার্কেট, সাতাইশ চৌরাস্তা, খরতৈল মনসুর আলী মাতবর স্কুল মাঠ, গাজীপুরা ও খাঁপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার ব্যাপক গণসংযোগ করেন ২০ দলীয় মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। এসব গণসংযোগে হাসান সরকারের সাথে ছিলেন, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, সাবেক টঙ্গী পৌর সভার প্যানেল মেয়র আবুল হোসেন, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন এবং সঙশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা। এসব গণসংযোগে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার লক্ষ করা গেছে। মানুষের ভিড় ঠেলে হাসান সরকারকে সামনে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। এসময় হাসান সরকার টঙ্গী পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকাকালে বিগত দিনে এলাকাবাসীর জন্য কি কি কাজ করেছেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোট চান। এলাকার প্রবীণরা হাসান সরকারকে কাছে পেয়ে অনেকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলেন। প্রতিটি এলাকায়ই জনসংযোগকালে এমন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হাসান সরকারও অনেক দিন পর অনেকের সাথে তৃপ্তিভরে সাক্ষাত করেন। আবেগপূর্ণ সাক্ষাতকালে তিনি ভোট চাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে এলাকার মুরব্বীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।