পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মান নিয়ে সব সময় প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষাবিদসহ সবমহলই। হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলো সাইনবোর্ডসর্বস্ব ও সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক কিংবা গলি পথে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে। নিজস্ব জমি নেই, নেই পূর্ণকালীন শিক্ষক (প্রফেসর, সহযোগী অধ্যাপক), পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও গবেষণা খাতে ব্যয়। যেখানে আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই বেহলা দশা সেখানে প্রতিবছরই নতুন করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গত এক সপ্তাহেই নতুন করে ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়। এর মাধ্যমে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সেঞ্চুরিতে পূর্ণ হলো। দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০১টি। এছাড়াও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ গতকাল রাজশাহীতে ‘শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি’ এবং বান্দরবানে ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং। অন্যদিকে শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বি এম শামসুল হক। তিনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরআগে গত সপ্তাহে খুলনায় খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীতে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আছেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম। এই ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কেই ২৩টি করে শর্তে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকা; বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ২১ কিন্তু কমপক্ষে নয় সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, একদিকে নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যর্থ হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে এবং সরকারের বেধে দেওয়া শর্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়াসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে। জানা যায়, এই ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার আগে যে ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল সেগুলোই এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার ছয় দফা সময় দিলেও এখন পর্যন্ত ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সম্প্রতি সরকারের কাছে নতুন করে সময় চেয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদে আরও ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি জানান, বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ স্থাপনের আবেদন করেছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজা সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং শামসুল আলম ভূঁইয়া এমপি ‘অ্যাপোলা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ এবং ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মোশাররফ হুসাইন নামের একজন ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছেন। এছাড়া ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর বজ্রযোগিনী’ স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি সঙ্ঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে এক সময় হয়তো বাড়ি বাড়িই বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাবে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ¯œাতকদের শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত নয় বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন, আধুনিক গবেষণাগার, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিকুলামে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতির জন্য অবশ্যই অনুর্ধ্ব ২১ এবং অন্যূন্য ৯ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে। প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ২৫ হাজার বর্গফুট নিজস্ব অথবা ভাড়া ভবনে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, সেমিনার, অফিস, শিক্ষার্থীদের পৃথক কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকবে। অস্থায়ী ভবনে বা ভাড়কৃত ভবনে স্থাপিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার তারিখ হতে সাত বছরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এক একর এবং অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে দুই একর জমিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো স্থায়ীভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করতে হবে। অনুমোদন দেওয়ার সময় এসব শর্ত জুড়ে দেয়া হলেও বছরের পর বছর ধরে পুরনো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই তা মানছে না। প্রতিনিয়ত শর্ত ভঙ্গ করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেয়া হয়না কার্যকর কোন ব্যবস্থা। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ম ভাঙা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান যাই হোক না কেন প্রতিবছরই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ছে। তবে ব্যয়ের হিসাব বিপুল পরিমান দেখানো হলেও শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়ন, ভৌত কাঠামো, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির উন্নয়ন এবং গবেষণা খাতে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যয় করছেনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ আছে, আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাধ্যবাধকতা না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপ কমানোর জন্য বিএনপির সময় প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে অনুমোদন পেতে থাকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসার পর তারা বলেছিল নতুন করে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানো হবে না। কিন্তু তারাও একই ভাবে অনুমোদন দিচ্ছে। এতে শিক্ষার মান বাড়বে না বরং আরো খারাপে দিকে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।