Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সালথায় কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম: অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের (ইজিপিপি) ২য় পর্যায়ের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কম শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করিয়ে শতভাগ শ্রমিক খাতা-কলমে দেখিয়ে এবং কোনো কোনো প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালি ভরাট করে ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ করে অর্থ আত্মসাৎ এর পায়তারা চলছে বলে জানা গেছে।
সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্পে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২১০ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। একজন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে পাবেন ২শ’ টাকা, অর্থাৎ মোট ৪০ দিন কাজ করে পারিশ্রমিক পাবেন ৮ হাজার টাকা। এ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে ৭ এপ্রিল।
সরেজমিনে ভাওয়াল ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে মোট ২১০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ করছে মাত্র ৪০ জন শ্রমিক। বারখাদিয়া পশ্চিম পাড়া নতুন মসজিদের সামনে থেকে পশ্চিম পাশের মাঠ অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ কাজ প্রকল্পে ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দে ৩৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করা থাকলেও কাজ করছে মাত্র ১৬ জন। এ প্রকল্পের পিআইসি ও ইউপি সদস্য আমির মোল্যা বলেন, শুরু থেকেই ১৬ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিক কম থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বলেছেন ১৬ জন শ্রমিক নিয়েই কাজ করো। বাকি সব আমি দেখবো। পুরুরা গলিয়াপাড়া ছালাম মুন্সির বাড়ি হতে আক্কাস মুন্সির বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দে ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও প্রকল্পের কোনো শ্রমিককেই কাজ করতে দেখা যায়নি। এ প্রকল্পের পিআইসি ও ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) রুমানা বেগম এর স্বামী মামুন সরদার বলেন, আমার স্ত্রী এ প্রকল্পের পিআইসি থাকলেও বাস্তবায়ন করছি আমি। এ প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে, আমি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি। শিহিপুর নতুন বাড়ির সামনে থেকে জিলু মাতুব্বরের ভিটা হয়ে নইলার বিল পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দে ৮৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করা থাকলেও কাজ করছে মাত্র ২৪ জন। এ প্রকল্পের কাজে উপস্থিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরু থেকেই তারা ২৪ জন শ্রমিক কাজ করছে। এর আগের (১ম পর্যায়) প্রকল্পেও তারা ২৪ জন কাজ করেছে। এ প্রকল্পের পিআইসি ও ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের কাছে বারবার ফোন করা হলেও বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ভাওয়াল আমির খার বাড়ি হতে কিরাম খার জমির সিমানা পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দে ৪৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করা থাকলেও কোনো শ্রমিককেই কাজ করতে দেখা যায়নি। জানা গেছে, আগের কোনো প্রকল্পের অর্থায়নে এখানে ড্রেজার দিয়ে বালি ভরাট করা হয়েছে। কম শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হচ্ছে এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, আমি একটি প্রকল্পের কাজ ড্রেজার দিয়ে সম্পন্ন করেছি এবং আরেকটি প্রকল্পের কাজ চুক্তি দিয়ে করাচ্ছি।
সালথা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজী মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, ড্রেজার দিয়ে, চুক্তি ভিক্তিক কোন প্রকল্পের কাজ করানো সম্পূর্ন অনিয়ম। বিষয়টি সম্পর্কেখোজ নিয়ে যথাযত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশে^র হাসান বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পে যে কয়জন শ্রমিক কাজ করবে, শুধু সে কয়জন শ্রমিকের টাকা দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ