পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার, নোয়াখালী থেকে : সমালোচকের ভাষায়, চাঁদেও নাকি নোয়াখালীর মানুষ আছে। অর্থাৎ শুধু বাংলাদেশ নয় - বরং দেশের সীমানা পেরিয়ে একমাত্র ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি জনপদে নোয়াখালীবাসীর সরব উপস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রবাদটি সাজানো হয়েছে। তেমনিভাবে বাংলদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতির মধ্যে অনেকের জন্মস্থান নোয়াখালী জেলায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃহৎ শিল্প সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নোয়াখালীর কৃতি সন্তানরা দেশ বিদেশে সূখ্যাতি অর্জন করেন। তেমনিভাবে লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের সূযোগ সৃষ্টি ছাড়াও জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান অব্যাহত রাখছে। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, নোয়াখালীতে জন্মগ্রহনকারী কয়েক ডজন শিল্পপতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সূ-পরিচিত। তন্মধ্যে কয়েকটি শিল্পগ্রুপ হচ্ছে, আবুল খায়ের গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, গ্লোব গ্রুপ, সানমুন গ্রুপ, আজিম গ্রুপ, এস এ গ্রুপ, এজি গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, সানজি গ্রুপ, ইফাদ গ্রুপ, তমা গ্রুপ, জেএমএস গ্রুপ, স¤্রাট গ্রপ, এন জামান এন্ড কোং অন্যতম। এছাড়া পারটেক্স ও গ্লোব গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি শিল্পগ্রুপর একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যেমন পারটেক্স গ্রুপ, আম্বার গ্রুপ, স্টার পার্টিকেল গ্রুপ ইত্যাদি। অপরদিকে আবুল খায়ের গ্রুপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, শাহ সিমেন্ট, ঢেউটিন, একেএস স্টীল, কনডেন্স মিল্ক ও শিলং চা ইত্যাদি। উপরোন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য কোটিপতি ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের জন্মস্থান নোয়াখালীতে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা। এসব শিল্প সা¤্রাজ্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০/৬০ লক্ষাধিক লোক জড়িত রয়েছে। এক কথায় নোয়াখালীতে জন্মগ্রহনকারী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় নোয়াখালীর শিল্পপতিদের শিল্প সা¤্রাজ্য চোখে পড়ার মত। দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মেডিকেল কলেজ, প্রাইভেট হাসপাতাল, ট্রাভেল এজেন্ট, ক্লিয়ারিং ফরোয়াডিং ও হাউজিং ব্যবসাসহ শত শত প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নোয়াখালীর অধিবাসী।
কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, নোয়াখালীতে জন্মগ্রহনকারী এসব শিল্পপতি নিজ জেলার প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণের প্রেক্ষিতে এজেলা শিল্পায়নে অনেকদূর পিছিয়ে আছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে ৫৬১ তাঁত বিশিষ্ট দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারী পাটকল ডেল্টা জুট মিল প্রতিষ্ঠা করেন দেশখ্যাত বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব আবদুর রব। স্বাধীনতার পর নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদীতে বৃহৎ আকারের অত্যাধুনিক বিস্কুট ফ্যাক্টরী আল-আমিন ব্রেড এন্ড বিস্কুটস লি. চালু হয়। পরবর্তীতে আল আমিন গ্রুপ যুক্ত হয় হাবিব ভেজিটেবল প্রোডাক্টস, বেভারেজ ডাবল কোলা, চিপস ও সিলভা ফার্মাসিটিউক্যালস্ লিঃ। এরপর গ্লোব শিল্প গোষ্ঠী বেগমগঞ্জে গ্লোব ফার্মাসিটিউক্যালস ও গ্লোব বিস্কুট এন্ড ডেইরীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে গ্লোব শিল্পগোষ্ঠী গ্লোব বেভারেজ, গ্লোব বিস্কুটস এন্ড ডেইরী এবং গ্লোব এগ্রো প্রতিষ্ঠা করে। দেড় দশক পূর্বে সানমুন গ্রæপের কর্ণধার মেজর (অবঃ) আবদুল মন্নান নোয়াখালী সদরের মন্নান নগরে মাঝারি আকারের একটি ফুটবল ফ্যাক্টরী ও সূবর্ণচরে সুয়েটার ফ্যাক্টরী স্থাপন করেন। এছাড়া বিগত চার দশকে নোয়াখালীতে আর কোন বৃহৎ কিংবা মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি। জানা গেছে, নোয়াখালীর শিল্পপতিদের মধ্যে অধিকাংশ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়নগঞ্জে শিল্প সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেন। সে ক্ষেত্রে নোয়াখালীর কয়েকজন গর্বিত শিল্পপতি এখানে শিল্প কারখানা স্থাপনের পরিবর্তে শুধুমাত্র তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র চালু করে দায়িত্ব এড়াতে চাইছে ।
নোয়াখালীতে শিল্পকারখানা স্থাপনে নানাবিধ সূযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে শিল্পকারখানা স্থাপনের লক্ষে এখানে কয়েক হাজার একর সরকারী খাস ভূমি রয়েছে। এছাড়া উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ এবং অনুকুল পরিবেশ শিল্পায়নের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। নোয়াখালী থেকে সড়ক পথে বন্দরী নগরী চট্রগ্রামে যেতে চৌমুহনী-ফেনী-চট্টগ্রাম সড়ক রয়েছে। এছাড়া সোনাপুর-জোরালগঞ্জ-চট্টগ্রাম সড়ক ২০২০ সালে চালু হবে। নোয়াখালী সদরের দক্ষিণে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনা নৌ-পথে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী জাহাজ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। ফলে নোয়াখালীতে শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে এখানকার উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পরিবহনে দ্রুতততম ও স্বল্পব্যয়ে সড়ক ও নৌ-পথের মাধ্যমে সম্ভব।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীতে শিক্ষিত ও নিরক্ষরসহ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক বেকার রয়েছে। পর্যাপ্ত সূযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও এজেলায় শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারী চাকুরীতে বিভিন্ন কোটা প্রথা বিদ্যমান থাকায় এখানকার হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে পারিবাবিক অবস্থাপন্ন কেউ কেউ জমিজমা ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ জমালেও অবশিষ্ট বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী মানসিক যন্ত্রণায় ভূগছে। তাই এখানকার সচেতন মহলের অভিমত হচ্ছে, নোয়াখালীতে জন্মগ্রহনকারী দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিদের মধ্যে অন্তত কয়েকজন শিল্পপতি নিজ জন্মস্থানে একটি করে শিল্প কারখানা স্থাপন করলে শুধু নোয়াখালী নয় বরং বৃহত্তর বেকার সমস্যা নিরসন হবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।