পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
০ সম্ভাবনাময় শিল্প খাতটির দিকে নজর দিলে রফতানিও করা যাবে
০ প্রাকৃতিকভাবে রেণু আহরণ কমেছে নদ-নদীর পানিশূন্যতায়
মিজানুর রহমান তোতা : পানির মধ্যে সোনা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। ওরা পানি নেড়েচেড়ে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সক্ষম হয়েছেন বিস্ময়কর সাফল্য আনতে। কোন তত্ত¡ বা প্রযুক্তি জ্ঞান নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওরা বিরাট অর্জন করেছেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্থনীতির চিত্র বদলে দিয়েছেন। ওরা যশোরের মাছপাড়া চাঁচড়ার রেণু পোনা উৎপাদনকারী। প্রতিদিন পানি থেকে সোনার দামের রেণু পোনা তুলছেন। চালান করছেন দেশের বিভিন্নস্থানে। আয় করছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। দ্রæত ভাগ্যের চাকা ঘুরাচ্ছেন। চলছে বিশাল এক কর্মকান্ড। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা হবে কঠিন। পানি নেড়েচেড়ে মাছের রেণু পোনা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে যশোর। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পোনা উৎপাদন করছে যশোরের ছোট একটি এলাকা। এলাকাটির নাম চাঁচড়া। যশোরের রেণুপোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারীগুলো জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভুমিকা রাখছে। মাছ উৎপাদনেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরার জানান,,নদ-নদীতে পানি যখন থৈ থৈ করতো তখন প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত মাছের রেণুপোনা উৎপাদন হতো। নার্সারী ও হ্যাচারীর প্রয়োজন হতো না। বর্তমানে নদ-নদীতে পানি নেই। একসময় দেশে কমপক্ষে ৩০হাজার কেজি প্রাকৃিতকভাবে রেণুপোনা আহরণ হতো। এখন বড়জোর আহরণ হয় মাত্র ১২শ’কেজি। অথচ দেশে মোট চাহিদা প্রায় ৪লাখ কেজি রেণুপোনা। প্রায় পুরোটাই সরবরাহ করে নার্সারী ও হ্যাচারী। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি কেজি রেণু পোনা থেকে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৫ লাখ মাছ। রেণুপোনা হ্যাচারীর মালিকরা জানান, স্ত্রী মাছ থেকে ডিম বের হবার পর ওই ডিমের মিগ্রপিলার ছিদ্রে মুরগীর পাখনা দিয়ে পুরুষ শুক্রানু ছোঁয়ায়ে জারে রাখার পর ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা ফোঁটে। পরে উৎপাদিত হয় মাছের রেণু পোনা। যশোর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছের রেণু পোনা উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত মাছের রেণু পোনা খুবই উন্নতমানের। রেণুপোনা উৎপাদনে যে খরচ তাতে বড় মাছ রফতানী করা না গেলে খাতটি মুখ থুবড়ে পড়বে। রফতানীর সুযোগ রয়েছে কিন্তু কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই। যশোর জেলা মৎস হ্যাচারী মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে। সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যাও আছে। মাছের খাদ্য ও মেডিসিনসহ উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবদ্ধি, সিন্ডিকেট করে খাদ্যের মূল্য বদ্ধি করা, উৎপাদন খরচ ও বাজার মূল্যের বিরাট ফারাক, শিল্প হিসেবে বিন্দুমাত্র সুযোগ সুবিধা নেই, হ্যাচারী ও নার্সারীতে বিদ্যুৎ বিল কৃষি রেটে না করাসহ নানা সংকট ও সমস্যা সম্ভাবনাময় শিল্পটিতে ধ্বনিত হচ্ছে অশনী সংকেত।
সুত্র জানায়, রেণু পোনা উৎপাদনের বিরাট সাফল্যের কারণেই যশোরে একটি মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। কিন্তু ওই ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম এখনো জোরদার হয়নি। ল্যাবরেটরী আছে কিন্তু নেই ইকুইপমেন্টস। মাছের রোগ-বালাই চিহ্নিত করা কিংবা চিকিৎসার জন্য একটি মৎস্য হাসপাতালের দাবী বহুদিনের। বাজারজাতকরণের সমস্যার সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। পোনা পরিবহনে নানা হয়রানী, মাছের খাবারের দাম বেশী, বিল, নদী, খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম তৈরী না করা ও মাছচাষীদের প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবসহ বেশকিছূ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে রেকর্ড সৃষ্টির এই খাতকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে।
সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ৩বছর আগে হ্যাচারীর সংখ্যা ছিল ৮২ টি। বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৬২টি। আর নার্সারির সংখ্যা রয়েছে ১শ’৬০টি। যশোর শহরতলীর চাঁচড়া ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন পানি থেকে সোনার দামের মাছের রেণু পোনা উৎপাদন হচ্ছে। একসময় দেশে মাছের রেণু পোনা আমদানী করা হতো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে। এখন বিদেশে রফতানীর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার উদ্যোগী হলে মাছের রেণু পোনা রফতানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ‘মাছের পোনা-দেশের সোনা’Ñএই শ্লোগানকে সামনে রেখে যশোরের মাছ চাষীরা হারিয়ে যাওয়া কালবাউসসহ বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা উৎপাদনে দেশের মধ্যে এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড স্থাপন করেছেন। শাক-সবজির মতো রেণু পোনাও দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ উৎপাদিত হচ্ছে যশোরে। সুত্র জানায়, নদ-নদী, খাল-বিলে পানি শূণ্যতায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের রেণুপোনা আহরণ হচ্ছে না বললেই চলে। মাছের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য বিকল্পপন্থায় শূন্যস্থান পুরণ করে থাকে হ্যাচারী ও নার্সারী। রেণুপোনা উৎপাদনের সূতিকাগার যশোরে সারাদেশের মোট চাহিদার ৭০ভাগ উৎপাদন হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।