Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারল না বুলবুলি

বিরল (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও চিকিৎসা নিতে পারলো না বিরলের গৃহবধু বুলবুলি। ইউপি চেয়ারম্যানের সহয়তায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও মাদকসেবী পাষন্ড স্বামী তাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে গেছে। আহত গৃহবধু উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মাদক সেবী মামুনের স্ত্রী বুলবুলি (২০)।
জানা গেছে, প্রায় ১ বছর আগে উপজেলার মঙ্গলপুর ইউপির আব্দুল খালেকের মাদক সেবী পুত্র মামুন (২৫) এর সাথে কাহারোল উপজেলার পখোরিয়া গ্রামের হতদরিদ্র ছপ্পর আলীর কন্যা বুলবুলি (২০) এর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মামুন যৌতুকের টাকার জন্য বুলবুলিকে প্রায় মারপিট করতো। প্রায় ২ মাস আগে রাতের বেলা গৃহবধু বুলবুলির শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয় মামুন। এসময় বুলবুলি চিৎকার দিলে পাশের লোকজন ছুটে এসে বুলবুলিকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করে। দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মামা রবিউলের নিকট থেকে ইতিমধ্যে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এসে মাদক সেবী স্বামী মামুনের হাতে তুলে দেয় বুলবুলি।
গৃহবধূ বুলবুলি বিরল হাসপাতালে স্বামীর নির্যাতনের বর্নণা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মাদবসেবী এবং যৌতুক লোভী মামুন তার শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে নির্যাতন করেনি। আগুনে পুড়িয়ে দেয়াসহ খাটের সাথে হাত-পা বেধে একাধিক বার বেদম প্রহার করেছে মামুন। শুধু তাই নয়, স্বামী মামুনের নিকট মাদক কেনার টাকা না থাকলে সে বুলবুলিকে অন্য পুরুষের হাতে জোর পূর্বক তুলে দিত। তাকে দিয়ে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো মামুন। এভাবে সে অনেক বার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বেশির ভাগ সময় বুলবুলিকে হাত-পা ও মূখ বেঁধে রাতে নির্য়াতন করা হত। তারপরেও সে লোক লজ্জার ভয় ও স্বামীর সংসার টিকানোর জন্য সকল নির্যাতন সহ্য করেছে। গত শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বাশুরী সুফিয়া বেগমের সহযোগীতায় স্বামী মামুন খাটের পায়ার সাথে বুলবুলির হাত পা বেঁধে বেদম প্রহার করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে। আমাকে ঠিকমত খাওয়া দেয়া হয় না। কোন কোন দিন দিনে মাত্র একবার খাবার দেয়া হয় আমাকে। তার এই লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্নণা শুনতে গিয়ে উপস্থিত রোগীসহ রোগীর স্বজনদের চোখে জল চলে আসে।
এদিকে মঙ্গলপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম ঘটনা জানার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় গৃহবধু বুলবুলিকে গুরুত্বর অবস্থায় উদ্ধার করে বিরল হাসপাতালে চিকিৎস্যার জন্য ভর্তি করে দেন। বুলবুলি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত রোববার দুপুরে স্বামী মামুন হাসপাতালে এসে কৌশলে অসুস্থ্য বুলবুলিকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম জানান, মামুন আহত বুলবুলিকে জোর পূর্বক হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়ীতে তুলে নিয়ে এসেছে। আমি বিষয়টি ইতিমধ্যে থানায় অবগত করেছি।
বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: আলম জানান, বুলবুলিকে হাতপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। সে এখনো হাসপাতালে কাগজে ভর্তি আছে । হাসপাতাল কতৃপক্ষকে না জানিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
বিরল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুনা পারভীন জানান, আমি ঘটনার বিষয় জেনেছি। ভিকটিম বুলবুলিকে উদ্ধার পূর্বক ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বিরল থানার এসআই দিপেন্দ্র নাথ জানান, আমি ঘটনার বিষয় জেনেছি। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ