পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
শুধু ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো এলসির মাধ্যমে দেশে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে-এমন বিধান রেখে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয় সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, স্বর্ণ আমদানির নীতি সহজ করা হচ্ছে বলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি উল্লেখ করেছিলাম। নানা জটিলতার কারণে এখনো নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে, আশা করছি আগামী বাজেটের আগেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। জুয়েলারি শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই সেক্টরের ব্যবসায়ী সমিতি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এখন সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আবহমান বাংলার ইতিহাসে জুয়েলারি শিল্প প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতির অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন কোনো বিকাশ হয়নি। এ শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থেই স্বর্ণ আমদানি নীতি প্রণয়ন করতে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের স্বর্ণবাজারের জন্য কোনো নীতিমালা হয়নি। এই শিরোনামে ফাদার অব দ্যা ন্যাশন গোল্ড কয়েন প্রজেক্ট-এর প্রেসিডেন্ট এবং সিইও এমএস আলম এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামের সিইও মাশুরা হোসেন বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এক নোটে বলেন, স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেছি। ইতোমধ্যে এ কাজের অগ্রগতি জানানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুয়েলারি শিল্প ব্যবসাবান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি পরিস্থিতি পত্র দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে এলসির মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নেওয়ার যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটি তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিথিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি পত্রে বলা হয়েছে, শুধু ভ্যাট নিবন্ধিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানই উপরোক্ত প্রস্তাবের আওতায় স্বর্ণবার আমদানি করতে পারবে বলে বিধান করা যেতে পারে। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বাস্তবায়ন হলে স্বর্ণ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর আরোপিত হবে বিধায় এর ওপর প্রয়োজনে স্পেসিফিক ডিউটি প্রত্যাহার করা যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী নোট দেন, শুধু জুয়েলারি সমিতিই তাদের মতামত জানিয়েছে। আমি চাই, স্বর্ণ রৌপ্য আমদানি নিয়মিত কায়দায় চলবে। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র নিয়ে হবে না। শুধু এলসির মাধ্যমেই আমদানি হবে এবং ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানই তা করতে পারবে। নিয়মিত হারে মূসক আদায় হবে এবং আমদানিকারকরা রিফান্ড পাবেন-এবারের বাজেট প্রস্তাবেই এই নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে গত বছর ২৫ মে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশে একটি যুগোপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা করার দাবি জানিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছরে বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে বিদেশ থেকে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। এমনকি শুল্ক পরিশোধ করে ব্যাগেজ রুলে আনা স্বর্ণের পরিমাণও একেবারেই নগণ্য। অর্থাৎ কোনো নীতিমালা না থাকায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাপথে দেশে ঢুকছে। যার খুব নগণ্য পরিমাণই শুল্ক এবং অন্যান্য সংস্থার হাতে ধরা পড়ে। জানা গেছে, দেশে ছোট-বড় প্রায় ৪০ হাজারের বেশি স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ বেচাকেনা করছেন। নীতিমালা না থাকার অজুহাতে স্বর্ণ আমদানি করা যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করলেও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণ দিয়েই এই চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন প্রতি ভরিতে তিন হাজার টাকা ট্যাক্স আর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হলে কীভাবে স্বর্ণ বিক্রি হবে, আর ক্রেতারাই বা যাবে কোথায়? স্বর্ণ আমদানির জন্য বেশ কয়েকবার সরকারের সঙ্গে বসেও এ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।