Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্পট কোটেশনের নামে বিদ্যুতের কোটি কোটি টাকা লোপাট

অনিয়মকেই নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে ডিপিডিসির কারিগরি বিভাগ

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিবব : স্পট কোটেশনের নামে নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অযাচিতভাবে কাজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিরুদ্ধে। সংস্থাটির কারিগরি ইউনিট থেকে মোট ৩৬টি বিভাগের জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন না থাকলেও ডিপিডিসির বিভাগগুলো থেকে এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চাহিদাপত্র পাঠানো হয় পরিচালক কারিগরির দফতরে। পদাধিকার বলে পরিচালক কারিগরি সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকার কাজের স্পট কোটেশনের ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষমতা রাখেন। আর এই ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে প্রয়োজনের বাইরেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন কাজ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, এধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এধরনে অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকলতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিপিডিসির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ৫ থেকে ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি ‘চক্র’ এসব কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন ডিপিডিসির পরিচালক (কারিগরি) প্রকৌশলী এটিএম হারুন-অর-রশীদের দুরসম্পর্কের শ্যালক পলাশ। পলাশের নিজের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স না থাকলেও ডিপিডিসির স্পট কোটেশনের কাজ তিনি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে করে যাচ্ছেন। ডিপিডিসির বিভাগগুলোর বেশ কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। চক্রটির দৌরাত্বের কারণে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও কোনো কাজ পাচ্ছে না। পলাশের নেতৃত্বে রহমান এন্টারপ্রাইজ, হায়দার আলী এ্যান্ড কোং, ছানাকোস্ট, আর এস এন্টারপ্রাইজ, ইউনিভার্সেল এন্টারপ্রাইজ ও রাজ ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরে ফিরে ৩৬টি ডিভিশনের যাবতীয় স্পট কোটেশনের কাজ দেয়া হচ্ছে। আর এসব কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে জুয়েল, এহসান নামে আরও দুজন ব্যক্তি যাদের নিজেদের নামে কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। আর এস এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আলী বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে জুয়েল ডিপিডিসির রমনা, রাজারবাগ, মতিঝিল বিভাগে ইনিফর্ম সরবরাহের কাজ করছে। তবে জুয়েলের সঙ্গে পলাশের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন হাসান আলী। এদিকে রহমান এন্টারপ্রাইজ স্পট কোটেশনের মাধ্যমে খিলগাঁও, কাকরাইল, বনশ্রী, তেজগাঁও, বাসাবো, রাজারবাগ, কমলাপুর, আদাবর, সেগুনবাগিচা ডিভিশনে সারঞ্জামাদি সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা আমিনুল ইসলামের নামে থাকলেও পলাশের নেতৃত্বেই এসব কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিডিসির বেশ কয়েকটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা জানান, সরাসরি প্রধান কার্যালয় থেকে চাহিদাপত্র দেয়ার জন্য তাদের জোর করা হয়। প্রয়োজন না থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের নামে এসব চাহিদাপত্র ডিপিডিসির পরিচালক অপারেশনের দফতরে পাঠাতে বলা হয়। আর যাবতীয় কাজ পলাশের নেতৃত্বে হয়ে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পরিচালক অপারেশন স্যারের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে পলাশ আমাদের কাছে কাজের তালিকা দেন। সেগুলো আমরা সরাসরি প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিই। সেখান থেকে স্পট কোটেশনের অনুমোদন নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। এতে প্রয়োজন না থাকলেও বিভিন্ন সারঞ্জামাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া যে ধরণের উন্নয়নের কাজ তাদের দেয়া হচ্ছে সেগুলোর গুণগতমানও ভালো হচ্ছে না। যে কারনে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রাহক আমাদের কাছে অভিযোগ দিচ্ছে।
পলাশ অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ডিপিডিসির পরিচালক কারিগরি আমার দুরসম্পর্কের দুলাভাই এটা সত্য। তবে তার মাধ্যমে আমি কোনো কাজ করি না। আমার নিজের নামে কোনো লাইসেন্স নাই। আমি গরীব মানুষ, একটা প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের চাকরি করি।
স্পট কোটেশনের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে ডিপিডিসির পরিচালক কারিগরি এটিএম হারুন-অর-রশীদর অভিযোগ অস্বীকার ইনকিলাবকে করে বলেন, আমার দফতর থেকে কোনো প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। বিভাগগুলো থেকে যে চাহিদাপত্র নির্বাহী প্রকৌশলীদের মাধ্যমে আসছে সেগুলোকে অনুমোদন দিচ্ছি। এখানে আমি কোনো কাজ করছি না। আলোচিত পলাশ তার আত্মীয় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পলাশ আমার শ^শুর বাড়ির দিক থেকে আত্মীয় হন। তবে তার কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কিনা আমার জানা নেই। ঘুরে ফিরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগে তিনি বলেন, আসলে কবে কাকে কি কাজ দেয়া হয় আমার স্মরণ থাকে না। আমি ঠিক বলতে পারবো না। কোনো প্রতিষ্ঠানের নামও আমি বলতে পারবো না।
স্পট কোটেশনের নামে অনিয়ম প্রসঙ্গে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. রমিজ উদ্দিন সরকার ইনকিলাবকে বলেন, স্পট কোটেশনের নামে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে আমরা শুনেছি। তবে এর সঙ্গে আমার কোনো সহকর্মী জড়িত কিনা আমি জানি না। বিদ্যুতের জরুরী কোনো কাজের জন্য স্পট কোটেশনের ব্যবস্থা থাকে। সেসব কাজের জন্য দুই তিন মাসের টেন্ডার প্রক্রিয়া করতে গেলে জনভোগান্তি বাড়তে পারে, ওইসব ক্ষেত্রে স্পট কোটেশন দেয়া হয়। এখন যদি বার্ষিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকার স্পট কোটেশন দেয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যাতে প্রশ্ন না ওঠে সে জন্য কয়েকটি কাজ এক সঙ্গে যুক্ত করে তারপর ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়াটাই উত্তম। দুই লাখ টাকার একটি কাজের স্পট কোটেশন না করে যদি চার-পাঁচটা কাজ এক করে ১০-১২ লাখ টাকার টেন্ডার করা হয় সেক্ষেত্রে অনিয়মের সুযোগ থাকবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লোপাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ