সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
ফজলে রাব্বী দ্বীন
আমাদের ফড়িং ফুটবল ক্লাবের আমরণ অধিনায়ক হচ্ছে নসু ভাই। খটখটে লম্বা আর রহস্যময় চেহারার জাদুতে যে কাউকে কাবু করতে মিনিটখানেক ব্যাপার তার। সেদিন সকালবেলা নসু ভাই টিমের সদস্যদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলছে, ‘তোরা কি জানিস, পূব পাড়ার কড়কড়ি ফুলবল ক্লাব আমাদের নিয়ে কি উপহাস করছে? আমরা নাকি তাদের বুড়ো আঙ্গুলেরও যোগ্য নই। কথাটা শুনেতো এখন পর্যন্ত আমার মাথার ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।’
ক্লাবের সর্বকনিষ্ঠ টমেটো আকৃতির গদাই এ কথা শুনামাত্রই ফস করে দাঁড়িয়ে পড়ল। ‘চিন্তা করো না নসু ভাই, তোমার মাথা ঠা-া করার জন্য যত বস্তা বরফের আমদানি করা লাগুক না কেন যথাসম্ভব তা করার চেষ্টা চালাব।’
গদাইয়ের কথা শুনেতো রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেল নসু ভাই। চোখ পাকিয়ে দিয়ে বলল, ‘তুই কি এখন থামবি নাকি ক্লাব থেকে সত্তর বছরের জন্য সাসপেন্ড করার কথাটা মুখ ফসকে বের করে দিব?’
মিটমিট করে মুখ ঘুরিয়ে কতক্ষণ হেসে নিয়ে বললাম, ‘আহ্, মিছিমিছি কেন এত ক্ষেপে যাচ্ছ গো নসু ভাই। এবার একটু কাজের কথা বলনা। তোমার আসলে প্ল্যানটা ঠিক কি?’
চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে ভিলেনের মত কতক্ষণ হুঙ্কার ছেড়ে দিয়ে নসু ভাই বলল, ‘তা তো বলবই। কিন্তু তার আগে তোরা জানিস কি আমি আসলে কার বংশধর?’
লাফ দিয়ে গদাই বলল, ‘রাজা শশাঙ্কের হলেও হতে পারে।’
‘আরে নারে ব্যাটা আহাম্মক। বহুকাল আগে এ বাংলায় ছিল বিশ্ব কাঁপানো সেরা একজন ফুটবলার ইমরান খান। ইমরান খান ছিল আমার নিজের দাদুর আপন দাদুর বড় কাকুর নিজের খালার বড় ছেলে। সেই সূত্রে উনার তেজি রক্ত আমার শরীরেও ¯্রােতের মত বইছে রে। তার পরেও আমাকে কিনা কড়কড়ি ক্লাবের সেই শুঁটকি পোলাপানরা হারানোর হুমকি দেখায়! এত বড় স্পর্ধা ওদের!’
নসু ভাইয়ের কথায় ক্লাবের সকল সদস্যরা রাগে-ক্ষোভে লাফাতে শুরু করল। শুধু রাগল না ক্লাবের নরম প্রকৃতির সদস্য বেবলা চাদু। আস্তে করে আমায় বলল, ‘অংকেতে যে এত কাঁচা তার মুখে এত হিসাবের লিষ্টি দেখেতো মনে হচ্ছে গোবরের ভেতর পদ্মফুল ফুটেছে রে!’
কথাটা কি করে যেন শুনে ফেলল নসু ভাই। বেবলা চাদুর কপালের শনি আর মুছা গেল না কোনভাবে। অপরাধের শাস্তিস্বরূপ চার ঘণ্টা সোজা কান ধরে দাঁড়িয়ে রইল। অবশেষে অজ্ঞানের বান ধরে রেহায় পায়।
সামনে আড়ছে বিশাল এক চ্যালেন্স জিতার দিন। আগামী শুক্রবার বরইপুর হাইস্কুল মাঠে কড়কড়ি ফুটবল ক্লাবের সাথে আমাদের ক্লাবের ফাইনাল খেলা শুরু হবে। এক সপ্তাহজুড়ে তুমুল প্র্যাকটিসের মধ্যে কাটিয়ে অবশেষে শুক্রবার এসে গেলে স্কুল মাঠে গিয়ে দেখি আমাদের প্রত্যেকেরই বাঘের সামনে বিড়ালের বেশ ধরার মত অবস্থা!
নসু ভাই ভ্রু কুচকে ধমক দিয়ে আমাদেরকে বলল, ‘বিড়ালের বেশ ধরে আর কতকাল কাটাবি রে তোরা। তোদের জন্যইতো আজ পর্যন্ত একটা খেলাও জিততে পারলাম না। হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবার ভয়ে এভাবে যদি কাপড়ের পট্টি হাত পায়ে বাঁধতে থাকিস তাহলে খেলার বল শট দিবি কি করে? গতবারতো সাতজনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম এবারতো দেখছি একজনও আর বাদ পড়বি না।’
সবাই মাথা নিচু করে নসু ভাইয়ের ক্ষ্যাপানো বক্তব্য শুনতে না শুনতেই রেফারি বাঁশিতে ফুঁক দিল। একসঙ্গে সবার হুড়মুড়ি দৌড়ানি দেখে ভুল করে হঠাৎ বল ভেবে রেফারির পায়েই বসিয়ে দিয়েছি বিশাল বড় এক কিক। বেহুশের পাল্লায় পড়ে যা হবার তাই ঘটল। লাল কাট খেয়ে সোজা চলে এলাম নির্বাসনে। ঐ দিকে মাঠের ভিতর সর্বনাশা গদাই আমাদের গোলপোস্টেই ঢুকিয়ে দিয়েছে বল। রাগের মাথায় গদাইকে মারতে গিয়ে পিছল পড়ে পা মচকালো নসু ভাই। ষোল মিনিটের মধ্যেই এমন উত্তেজনা আর আজব খেলায় আমাদের গোল খাওয়ার মাত্রাটা যখন উনিশ ছেড়ে বিশের কোঠায় গিয়ে পৌঁছাবার মত অবস্থা তখনি আচমকায় মাঠের ভিতর কিভাবে যেন কয়েকটা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গেল। ভয় আর আতঙ্কে যে যার মত দৌড়ে পালাতে লাগল সবাই। প্রাণের ঝুঁকি কমিয়ে অবশেষে আমরা যখন সবাই আমাদের ক্লাবের সামনে এসে উপস্থিত হলাম তখন নিতাইয়ের মুখ থেকে শুনি ঘটনাটা নাকি আসলে সে ঘটিয়েছে। ক্লাবের শেষ সম্মানটুকু রক্ষা করার জন্য কতকগুলো চকলেট বোমা মেলা থেকে সে আগেই কিনে রেখেছিল। তারপর উপর্যুক্ত সময়ে সেগুলো ফাটিয়ে দিয়েছে।
স্বাদেই কি আমরা নিতাইকে প্রতিদিন আধ আনার চকলেট কিনে খাওয়াই। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে কাজটা করতে পেরেছিল নইলে ফড়িং ক্লাবের গোল খাওয়ার শততম সেঞ্চুরির উৎসবটা আজকেই পালন করতে হত!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।