সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
সোহেল রানা
গরিবদের ইচ্ছা ধনী হওয়া। ধনীদের যে কি ইচ্ছা জাগে ধনীরাই বলতে পারে। রহিম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। কোনোরকম ডাল-ভাত খেয়ে জীবন চলে তার। লেখাপড়া মোটামুটি করেছে। নিজের গাফিলতির জন্য সে বেশিদূর পড়াশুনা করতে পারেনি। রহিমের বাবা মুদি দোকানদার, ব্যবসা একেবারে খারাপ নয়। বাবুহালে না থাকলেও একেবারে দরিদ্রভাবে তাদের থাকতে হয় না। রহিমের বাবার ইচ্ছা ছিল রহিম বড় হয়ে অফিসার হবে। কিন্তু ছেলের জন্য তার সে আশা পূরণ হয়নি। একটা ছেলে কিছু বললে যদি রাগ করে চলে যায় এই ভয়ে তিনি রহিমকে কিছুই বলতেন না।
রহিম গল্পের বই পড়ত। তেমন মজাদার কিছু পেলে সেই বিষয়টাকে নিয়ে কল্পনা করত। মনে করত গল্পের প্রধান ভূমিকায় সে নিজেই আছে। একদিন সে চাষি বউ গল্প পড়ছিল। গল্পে চাষির স্বর্ণের হাঁড়ি পাওয়ার ঘটনা পড়ে সে মনে করল আমিও যদি এরকম কিছু পাই তাহলে তো ভালই হয়। রহিমের ইচ্ছা সে অনেক বড় ধনী হবে কিন্তু বিনা পরিশ্রমে। যাতে বাবা-মায়ের মুখ কালো দেখতে না হয়।
রহিমের তিন বন্ধু। হাবু, বাবু আর সাবু। হাবু কানে কম শোনে, বাবু বেশি কথা বলে আর সাবু মাশাল্লাহ্। আল্লাহ্ মনে হয় ওকে মেয়েদের ফ্রেম দিয়ে তৈরি করেছে। তার হালচাল ও কথাবার্তা মেয়েদেরও হার মানাবে। রহিম ও তার বন্ধুরা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত, খেলা করত আর আনন্দ করত। এরই ফাঁকে রহিমের উদ্দেশ্য ছিল অন্যরকম। ধনী হওয়ার বাসনা সে কোনোদিন মন থেকে দূর করতে পারেনি।
গ্রামের পাশে বিশাল বন। তারা সাহস করে বনের ভিতরে যেতে পারত না। গ্রামের মুরুব্বীরা বলে বনে জন্তু জানোয়ার আছে, মানুষ পেলে খেয়ে ফেলবে। সবাই বিশ্বাস করলেও রহিম একথাটি বিশ্বাস করত না। তার উদ্দেশ্য ছিল বনের ভিতরে সে যাবে। রহিমের ধারণা, বনের ভিতরে কোন গুপ্তধন আছে। তাই মুরুব্বীরা তাদের যেতে নিষেধ করে। অন্য বন্ধুরা তার কথায় সম্মতি না দিয়ে বলল- ‘যদি গুপ্তধনই থাকত তাহলে গ্রামের প্রধানরাও সেগুলো নিয়ে আসতে পারত।’
রহিমের একই কথা, ওসব তোরা বুঝবি না। আমি বাবার কাছ থেকে শুনেছি। দেশ ভাগাভাগির সময় হিন্দুরা এই বনের ভিতর দিয়ে গেছে। কেউ কেউ তাদের সম্পদ নিয়ে যেতে পেরেছে, আবার কেউ ফেলেও গেছে। গ্রামের অনেকেই নাকি গুপ্তধন পেয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের কপালেও আছে।
রহিম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল- ‘কে কে যাবি আমার সঙ্গে তাড়াতাড়ি বলে দে, আমার আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। আগামীকালই আমাদের মিশন শুরু হবে। রহিমের কথা শুনে সাবু (মেয়েলিভাবে) না, না রহিম, আমি যেতে পারব না ভাই। আমার বড্ড ভয় লাগে, তোরা গেলে যা। রহিম সাবুর কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল- ‘আল্লাহ্ তোকে শুধু মেয়েদের ফ্রেম দিয়েই বানাইনি, জানটাও দিয়েছে, কা-মহিলা কোথাকার।’ রহিমের কথা শুনে সাবু বলল- ‘তুই যাই বলিস না রহিম, আমি কিন্তু যাচ্ছি না।’ রহিম তখন হাবু ও বাবুর মতামত জানতে চাইলে তারা দুইজনই রহিমের সাথে যেতে রাজি হয়।
রহিমের গ্রাম থেকে প্রায় ২/৩ মাইল দূরে বন। সবাই ঠিক করল খুব ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে সন্ধ্যার আগে ফিরবে। রহিম, হাবু এবং বাবু যাত্রা শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে বনের কাছে এসে পৌঁছাল তারা। অনেক পথ হেঁটে এসেছে তাই বিশ্রামের জন্য একটি টিলার উপর বসল সবাই।
বিশাল বন। মনে হয় কয়েক হাজার একর জমির উপর এই বনটি অবস্থিত। বড় বড় গাছ, বাইরে থেকে মনে হয় বনের ভিতরে তিল পরিমাণ ফাঁকা নাই। সূর্যের আলো ঠিকমত দেখা যায় না ভিতরে। বাবু অবশ্য সঙ্গে করে একটি টর্চ লাইট নিয়ে এসেছে, ফিরতে যদি রাত হয় এই ভেবে। রহিম ও হাবু কিছুই আনেনি, তবে একেবারে খালে হাতেও আসেনি তারা। হাতে কয়েকটি লাঠি আর সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর তিনজন উঠে দাঁড়াল এবং যুক্তি করে তাদের মিশন শুরু করার প্রস্তুতি নিল। রহিম মিশনের নাম দিল ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’।
বেকায়দা প্রস্তুতি। বাবুর হাতে টর্চ, রহিম ও হাবুর একটি করে লাঠি। তিন বন্ধু হনহন করে ঢুকে পড়ল বনের ভিতর। ভয়ভীতি তাদের কাছে হার মেনেছে আজ। মানুষ যদি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হয়, তার শেষ দেখা না পর্যন্ত নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। ওদেরও হয়েছে তাই। কোন ভীতি তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। তাদের একটাই লক্ষ্য গুপ্তধন।
অন্যদিকে রহিমের অপমান সাবুটা ঠিক হজম করতে পারছে না। সে ভীষণ রেগে আছে। আমাকে মেয়ে মনে করে, আমি মেয়ে না পুরুষ তাদের দেখিয়েই ছাড়বো। এই কথা বলে আর দাঁতের সঙ্গে দাঁত ভাঙ্গে। সাবুর মা বৃদ্ধ মানুষ। কিছু জিজ্ঞাসা করলেও সাবু কোন উত্তর দেয় না। শুধু একই কথা। আমাকে অপমান। বলে কিনা মেয়ে মানুষ। দেখাচ্ছি তোদের মেয়ে মানুষী। আবার বলে কিনা কা-মহিলা। সাবু বাম্পারহিট রেগে গেছে। গোখরা সাপও হার মানবে তার কাছে। সাবুর মা অনেক বুঝিয়েও তাকে শান্ত করতে পারছে না। সাবুর মামা মদনমোহন যাত্রা দলের হিরোইন। ভাবভঙ্গি সাবুর মতই। সাবুর গঠনটাও মামার মত হয়েছে। মামা সাবুদের দুই এক ঘর পরেই থাকে। সাবুর চিৎকারে মামা বাড়িতে এসে হাজির। মামাকে দেখেই সাবু বলে উঠল-
মামা ওরা শুধু আমাকেই নয় তোমাকেও অপমান করেছে।
- (মেয়েলিভাবে) কি বলছিস সাবু।
আমার গঠনটা কি তোমার মত?
- এতে কোনো সন্দেহ নাই।
তাহলে আমাকে যদি কা-মহিলা বলে, তাহলে তুমিও...
- (ইতস্ততভাবে) কি বলছিস তুই?
জ্বী, মামা। আমার বন্ধুরা আমাকে কা-মহিলা বলেছে।
সাবুর মামা এর একটি বিহিত করার আশ্বাস দিয়ে অনেক কষ্টে থামাল তাকে।
এদিকে রহিম, বাবু ও হাবু একসঙ্গে বনের ভিতর প্রবেশ করেছে। ভিতর দিয়ে চিকন রাস্তা। সূর্য দেখা যায় না বললেই চলে। রাস্তার উপর দিয়ে গাছের শুকনা পাতা পড়ে আছে। তার উপর দিয়ে হাঁটলে খসমস শব্দ হচ্ছে। রহিম ও বাবু মাঝেমধ্যে চমকিয়ে উঠছে কিন্তু হাবু কিছুই করছে না। হাবুর সাহস দেখে রহিম বলেই ফেলল- ‘কিরে হাবু, তোর এত সাহস, আগে বলিসনি তো।’
হাবু : আমার আবার সাহসের কি দেখলি তোরা?
রহিম : আমরা শব্দ শুনে ভয় পাচ্ছি আর তুই...
হাবু : আরে পাগল, আমি তো কিছুই শুনতে পায়নি।
হাবু যে কানে কম শোনে রহিম ও বাবু ভুলেই গেছে। হাবুর কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেলল। ঠিক সেই মুহূর্তে বনের ভিতর থেকে কি একটা শব্দ শোনা গেল। মনে হয় মিনি রয়েল (বনবিড়াল)। এবার হাবু শুনেছে, শুনেই চিৎকার। রহিম আর বাবু তাকে ঠেকাতে পারছে না। কথায় আছে না- ‘যারা কানে কম শোনে, আস্তে কথা বললে শুনতে পায় না। আবার যদি জোরে বলা যায় তাহলে বলে, ‘আমি কি কানে কম শুনি আস্তে কথা বলতে পারো না।’ হাবুরও হয়েছে তাই। অবশেষে অনেক চিৎকারের পর হাবু থামল কিন্তু সে আর সামনে এগুতে চায় না। বাড়ি যাবে। রহিম ও বাবু অনেক বোঝানোর পর হাবু রাজি হল তারপরও মাঝেমধ্যে পিছুটান মারতে থাকল।
অন্যদিকে সাবু কিভাবে রহিমদের শায়েস্তা করবে সেই কাজে ব্যস্ত। তার একই কথা- আমাকে অপমান, খুব সাহসী তারা। গুপ্তধন নিয়ে আসবে। দেখাচ্ছি মজা। আমাকে বলে কিনা কা-মহিলা। সাবু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে জবরদস্ত বুদ্ধি আটতে থাকল।
বেলা প্রায় ২টা। রহিমের হাতে ঘড়ি আছে। ঘড়ি না থাকলে সন্ধ্যা মনে হত। বাবুর হাতে লাইট, হাবু ও রহিম একটি করে লাঠি হাতে নিয়েছে। বনে তারা কোন গুপ্তধন খুঁজে না পাওয়াই চিন্তিত। মাঝেমধ্যে এক আধটা বানর দেখা যাচ্ছে। বাবু ও রহিম লাঠি দিয়ে এদিক সেদিক খোঁচাতে থাকে। যদি আনাচে- কানাচে কিছু পড়ে থাকে কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় না। ক্ষুধাও লেগেছে তাদের, সঙ্গে কিছু বিস্কুট আর কলা। ঐ খেয়ে তো আর পেট ভরে না। যা হোক ক্ষুধাতো মেটানো যাবে। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরির পর যখন কোনো লাভ হলো না তখন সবাই ঠিক করল কি আর করার গুপ্তধন যখন পেলাম না তখন বাড়ি ফিরে যায়।
তিনজন একত্রিত হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। যে পথ দিয়ে তারা ঢুকেছিল ঠিক সেই পথ দিয়েই ফিরছে তিনজন। রাস্তার আশেপাশে গর্ত। কিছু কিছু গর্ত আছে পাতা দিয়ে ঢাকা। বোঝাই যাচ্ছে না যে এগুলো গর্ত। সামনে বাবু, তারপর রহিম এবং সবার পিছনে হাবু। তিনজন সারিবদ্ধভাবে হাঁটছে। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হাবুর আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। বাবু ও রহিম হাবুকে বলে কিরে কোনো কথা বলছিস না ক্যান? একেবারে বোবা হয়ে গেলি দেখছি। এরপরও কোন শব্দ নাই। দুজনা পিছন ফিরতেই দেখে হাবু নাই। রহিম ও বাবু অবাক। হাবুটা আমার গেল কোথায়? দুজনা উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করল। কিছুক্ষণ পর হাবুর কণ্ঠ শোনা গেল পাশের একটা গর্ত থেকে। দুজনা ছুটে গেল গর্তের দিকে এবং টেনে হেঁচড়ে তুলল তাকে। পাতা দিয়ে গর্তটা ঢাকা ছিল, সে বুঝে উঠতে পারেনি। গর্তের ভিতর পড়ে হাবুর শরীরের কিছু অংশ ছিলে গেছে। কিন্তু কি আর করার, রহিম ও সাবু তাকে সান্ত¦না দিয়ে একসঙ্গে রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে। বন থেকে বের হবে ঠিক সেই মুহূর্তে হাবুর চোখ পড়ল পাশের একটি গর্তের দিকে।
হাবু : এই তোরা গর্তের দিক দ্যাখ, কী যেন একটা আছে। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।