পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফতানিমুখী ২৫টি কারখানায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান : আরো ৪৫ কারখানা নির্মাণাধীন : বাড়ছে রফতানি আয় : স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান
কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড। শিল্পখাতে বাংলাদেশে একক বৃহৎ বিনিয়োগকারী বিদেশী কোম্পানি কোরীয় ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শিল্পপতি কিহাক সান-এর স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন। বন্দরনগরীর অদূরে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর অনগ্রসর ও পরিত্যাক্ত ন্যাড়া পাহাড়ি ঢিবি এলাকায় এর অবস্থান। সরকারের বরাদ্দকৃত ২ হাজার ৪৯২ একর ভূমিকে সবুজায়ন, উঁচু-নিচু জায়গা ও হ্রদসহ পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে বহুমুখী ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে নজরকাড়া শিল্প-পল্লী। কেইপিজেডে বর্তমানে ২৫টি শিল্প-কারখানায় রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি লোকের। আরও ৪৫টি কারখানার নির্মাণ কাজ চলছে। কেইপিজেডের গার্মেন্টস, সুজ, কম্পোজিট টেক্সটাইল কারখানাসমূহে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের অনেক দেশেই ক্রেতাদের কদর পেয়েছে। বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং রাজস্ব জোগান আসছে। স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শনকালে কেইপিজেড লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোঃ শাহজাহান সাংবাদিকদের জানান, সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব কেইপিজেড পরিণত হতে যাচ্ছে এশিয়ায় মডেল ইপিজেড। প্রতিটি কারখানায় অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের শর্তাবলী পরিপূরণ করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই ইপিজেড পরিদর্শন করতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন অনেক দেশের শিল্পোদ্যোক্তাগণ। এক সময় নির্জন পরিত্যক্ত এলাকাটি কেমন ছিল, আর এখন পাহাড়-টিলা-হ্রদসহ পরিবেশ-প্রকৃতি অটুট রেখে কিভাবে এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে- এহেন ঈশ্বনীয় সাফল্যের বিষয়টি দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের বিস্মিত করছে। তারা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত কেইপিজেড। পরিবেশবান্ধব আদর্শ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে এটি বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ইং সালের ৩০ অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেইপিজেড মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন করেন। এরপর বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। শিল্প স্থাপনের উপযোগী করে অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। একে একে শিল্প-কারখানা স্থাপনের পর এ পর্যন্ত উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রফতানি বাবদ আয় সোয়া ৩ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০১৭ সালে রফতানি আয় প্রায় ১৭শ’ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮ সালে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কেইপিজেডের মহাপরিকল্পনার শুরুতেই মোট এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং বার্ষিক ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রফতানির টার্গেট ধরা হয়। গার্মেন্টস, সুজ, কম্পোজিট টেক্সটাইল ছাড়াও সেখানে কৃষি-খামারভিত্তিক কারখানা, আইটি ভিলেজসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, কেইপিজেড পরিপূর্ণতা পেলে সরাসরি এক লাখ ও পরোক্ষভাবে আরো ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এরমধ্যে ২০২০-২১ সাল নাগাদ নতুন ৪৫টি শিল্প-কারখানায় উৎপাদন শুরু হলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৬০ হাজার কর্মীর। আর এটি হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ইপিজেড বা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পাঞ্চল।
জানা গেছে, বরাদ্দ পাওয়া ২ হাজার ৪৯২ একর জমির মধ্যে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৯০ একরে অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্তানুসারে মোট জমির ৩৩ ভাগ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সবুজায়ন, ১৯ ভাগ সবুজ মাঠ ও লেক তৈরীসহ ৫২ শতাংশ জমি উন্মুক্ত স্থান হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাদবাকি ৪৮ ভাগের (১১৯২ একর) মধ্যে ৯৯০ একর জমি শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত, ২শ’ ২ একর জমি আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই শিল্পায়নের জন্য তৈরি করা হবে। এ যাবত নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কোরিয়ান ইপিজেডে ইয়ংওয়ান কর্পোরেশানের অর্ন্তভুক্ত কর্ণফুলী সুজ, কর্ণফুলী গার্মেন্টস, কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্ট, এভারটপ প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানি, গায়া প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানি ও দেই-গু প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে।
কেইপিজেডে স্থাপিত কারখানাগুলোর তথ্য-উপাত্তে জানা যায়, দেশের প্রচলিত আইনানুসারে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দা অদক্ষ শ্রমিকরা নিয়োগে অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে ( যা প্রায় ৮৫ শতাংশ)। অবশিষ্ট কর্মীরাও উত্তর চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলের। কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৭০ ভাগ অস্টম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন। অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে সরাসরি পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত করা হয়। উৎপাদনরত কারখানাগুলোতে কর্মরত ২০ হাজার স্থানীয় শ্রমিকের আয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বার্ষিক ২শ’ কোটি টাকার নগদ সঞ্চালন বা ক্যাশ ফ্লো হচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকের অধিকাংশই নারী। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কারখানাগুলোতে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার, স্বাস্থ্য্য-চিকিৎসা, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ারসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার ফলে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ সামগ্রিকভাবে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে চমৎকার সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। স্থানীয়রাও সেখানে শিল্পায়নে সহযোগিতা করছে। সার্বিকভাবে এটি ধীরে ধীরে উপশহরে পরিণত হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেইপিজেড-এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ শাহজাহান বলেন, কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল কেইপিজেড সম্পর্কে সরকারকে ভুল তথ্য দিয়েছিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জমির মিউটেশানে (নামজারী) দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক আগ্রহের ফলে শিগগিরই এই বাধা অপসারিত হবে। মিউটেশান সম্পন্ন হলেই কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ শিল্প-কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশী উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ প্রদানে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের উৎসাহী বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা কেইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে বিশ্বখ্যাত কোরীয় কোম্পানি স্যামসাং, এলজি ও বিশ্বের বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা। কেইপিজেড মেগাপ্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বহু প্রতীক্ষিত বৈদেশিক বিনিয়োগ, নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং অধিকতর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের পথ উন্মোচিত হবে। সাংবাদিকদের পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন কেইপিজেডের এজিএম মোঃ মুশফিকুর রহমান, আইন ও এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।