পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নিপীড়নকে গণহত্যা, গণসহিংসতা, মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে নামক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণা-তে এমন দাবি করা হয়েছে। ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, খুব দ্রত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক, সর্বজন স্বীকৃত এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত মানবিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একশনএইড বাংলাদেশ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত দু’দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে বাংলাদেশ সরকার, সাবেক ও বর্তমান ক‚টনৈতিক, গবেষক ও ১১টি দেশের প্রতিনিধিরা এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন, যারা এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবি জানান। ঢাকা ঘোষণা বাংলাদেশ ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়। এই ঘোষণার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞরা সংহতি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে কাজ করছে না বলেই মূলত: সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দুই দিনের সম্মেলন শেষে ঢাকা ঘোষণাতে ১৬টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয়, গেøাবাল সামিট-২০০৫ প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী, জাতিংঘের চার্টার অনুসারে গণহত্যা এবং গণ-দেশান্তরের মত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের সুস্পষ্ট ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতেই হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের যথাযথ ক‚টনৈতিক চ্যানেলসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত মানবিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের আহŸান জানানো হয় ঢাকা ঘোষণায়। মিময়ানমারে চলমান গণহত্যা, গণসহিংসতা, মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধনের ঘটনা ব্যাপক ও গভীরভাবে তদন্ত এবং দায়ী অপরাধীদের বিচার এবং রোহিঙ্গাদের আরো ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহŸান জানানো হয়েছে ঢাকা ঘোষণায়। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে আইন প্রণয়নসহ সকলের জন্য নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় মিয়ানমারের দায়িত্বের উপর জোর দেয়া হয়।
ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চলমান গণসহিংসতা প্রতিরোধে বিভিন্ন সম্প্রদায়, আঞ্চলিক সুশীল সমাজ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের শক্তিশালী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্বের উপর জোর দিতে হবে; নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় এবং আইনী নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধানের সন্ধানে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে সংহতি প্রকাশ ও সহায়তা প্রদান করতে হবে; বাংলাদেশীদের অবদান এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের কারণে বাংলাদেশীদের উপর যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, এবং তাদের জীবন-জীবিকায় যে প্রভাব পড়েছে তার স্বীকৃতি দিতে হবে; জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই সমাধানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি, লিঙ্গভিত্তিক ন্যায্যতা ও সমতা, শিশু সুরক্ষা, সুশাসনের নীতি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত এবং বাস্তবায়ন করতে হবে; রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারীদের সক্ষমতাকে ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুসারে যে কোন ভবিষ্যত টেকসই উন্নয়ন সমাধান পরিকল্পনায় তাদের নেতৃত্ব নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে। দুই দিনের আলোচনায়, দেশী-বিদেশী মানবাধিকার দলিল, আইন, গবেষণা ও বিভিন্ন পর্যালোনার উপর ভিত্তি করে ‘ঢাকা ঘোষণা’ আসে। প্রস্তাবনার পাশাপাশি “ঢাকা ঘোষণা”-এর শুরুতে প্রাসঙ্গিক কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয় মানবাধিকার সার্বজনীন। তাই গণহত্যা/ জাতিগত নিধন/ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। যারা সরাসরি দায়ী এবং যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; নিপীড়নের শিকার নারী, পুরুষ এবং শিশুদের সহায়তায় এবং নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি হ্রাসের জন্য নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, অথবা ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থার উন্নয়নে সঠিক কাজটি করার সাধ্যমতো চেষ্টা যারা করেন তাদের অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়া উচিত; রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা ট্রাজেডি থেকে মুনাফা ভোগ করে এবং যারা মানববিদ্বেষী ও দু’মুখী চরিত্রের তাদের চিহ্নিত করে বিচার করা উচিৎ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ‘ঢাকা ঘোষণা’ উপস্থাপন করেন।
ঢাকা ঘোষণা’ উপস্থাপনের পর এর উপরে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তিনি বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে কাজ করছে না বলেই মূলত: সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই সমস্যা আমাদের কারণে তৈরি হয়নি। তাই সমাধানও শুধু আমরা করতে পারবো না। যেখান থেকে সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে সেখান থেকেই সমাধান সম্ভব হবে। আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এটা প্রমাণ করতে যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে এবং তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার। তবে আন্তর্জাতিক চাপ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনভাবেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। কারণ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।
ড. ইমিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের বুঝতে হবে যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুধু বাংলাদেশেই নেই। রোহিঙ্গারা, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সৌদী আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে। তাদের উপর যে গণসহিংসতা চালানো হয়েছে তা কোনভাবে অবজ্ঞা করা যাবে না। আমরা যদি দ্বি-পাক্ষিকভাবে সমস্যা দেখিও গণহত্যার বিষয়টি হারিয়ে যাবে না। এর বিচার হবেই।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমাদের এখনই এই সংকট নিরসনে সকলকে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পিছিয়ে পড়লে হবে না। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই মানুষগুলোর সহযোগিতায় এগিয়ে আসুক। সভ্যতার এমন পর্যায়ে আছি যেখানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়াবে, এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। আমরা মানবতার জন্য যুদ্ধ করবো। এতে আমাদেরই লাভ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।