পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৫ বছরের পুরনো রাডার দিয়ে চলছে বিমান ওঠা-নামার নিয়ন্ত্রণ। রাডারটি এত পুরানো, অনেক সময় বিমানের গতিবিধি ধরা পড়ে না। বিমান উড্ডয়ন, অবতরণ ও নিয়ন্ত্রণ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষও। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমনটি আশঙ্ক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাডার সচল রাখতে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও বিমান ওঠা-নামা বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে। পুরনো রাডারের কার্যক্ষমতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। ফলে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে অনেক বিমানেরই গতিপথ থেকে যাচ্ছে নজরদারির বাইরে। সিভিল এভিয়েশনের সাবেক এক কর্মকর্তার অভিমত, শাহজালালে বর্তমানে যে রাডারটি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি বেশ পুরনো। কয়েকবার রিফার্নিশ করা হলেও বর্তমান সময়ের জন্য এটি উপযোগী নয়। দক্ষিণ দিক দিয়ে সবার অজান্তে অনেক এয়ারক্রাফট বেশ নিচ দিয়ে চলে গেলেও সেগুলো দেখা যায় না। রানওয়ে দেখতে না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ফ্লাইট দেরি হচ্ছে। লাইটিং সিস্টেমও সেভাবে উন্নত নয়। এখনো আইএলএস ক্যাটাগরি ১-এই রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অত্যাধুনিক রাডার ও রাডার টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। তা না হলে যে কোনো সময় বিমান অবতরণ-উড্ডয়ন পরিস্থিতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
জানা যায়, মোটা অঙ্কের ভাগ-ভাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে সিভিল এভিয়েশনের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের কাছ থেকে সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্টদের দুই গ্রæপে ইতোমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দুইটি গ্রæপই প্রভাবশালী, ফলে রাডার স্থাপনের কাজ কোন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে এ নিয়ে দলাদলি লবিং গ্রæপিং এখন চরম আকার ধারণ করছে। একটি গ্রæপ রাডারের যন্ত্রাংশ পৃথক পৃথকভাবে ক্রয় করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অপর গ্রæপটি ফাহাদ করিম এ্যাসোসিয়েট নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রাডার স্থাপনের কাজ দেয়ার জন্য নানা ফন্দিফিকির করে চলেছে। ফলে নতুন রাডার স্থাপন প্রক্রিয়া এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে করে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ রাডার দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০০৫ সালে আধুনিক রাডার ক্রয়ের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়নি। সে বছরই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ রাডার ক্রয়ের উদ্যোগ নিলেও অনিয়মসহ নানা জটিলতায় সমাপ্ত হয়নি সেই প্রক্রিয়া। বসানো যায়নি আধুনিক শক্তিশালী রাডার।
সম্প্রতি নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আলোচনায় আসে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদে বিমান অবতরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নানা সীমাবদ্ধতার চিত্র। এই প্রেক্ষাপটে শাহজালাল বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের পরিচালন ব্যবস্থা কতটা আধুনিক, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে আধুনিক শক্তিশালী রাডার না থাকায় বিমানের অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নিরাপদ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য রাডারটি অনেক পুরনো হওয়ায় বিরূপ আবহাওয়ায় ব্যাহত হয় বিমান চলাচল। একই কারণে রাডারের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাচ্ছে অনেক বিমান। ফলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে নতুন রাডার কেনার পরামর্শ তাদের। উড়োজাহাজের মসৃণ অবতরণে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম-আইএলএস আরো উন্নত করারও তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহজালালে রানওয়ের লাইটিং সিস্টেম পর্যাপ্ত নয়। বিমান অবতরণ আরো সহজ করতে রানওয়ের লাইটিং এবং যান্ত্রিক অবতরণ পদ্ধতি বা আইএলএস ক্যাটাগরি ২-এ উন্নীত করার প্রয়োজন। এতে পাইলট আরো দক্ষতার সঙ্গে উড়োজাহাজ অবতরণ করাতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইএলএস ক্যাটাগরি টু-তে উন্নীত করা ছাড়াও নতুন রাডার ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবির জানান, আধুনিক রাডার ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক সিস্টেমে করা হচ্ছে শাহজালালের এটিএম সিস্টেমও। নতুন করে রাডার স্থাপন করা হলে আর দশটি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরাও এগিয়ে যাব বলে জানান তিনি।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, দ্রæত নতুন রাডার স্থাপন না করলে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে শাহজালালের উড়োজাহাজ চলাচলব্যবস্থা কিংবা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। বর্তমান রাডারটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডারের সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার (১০ বছর আয়ুষ্কাল সম্পন্ন) স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে চার কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং ১৯৯৪ সালে চার কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারটি আপগ্রেড করা হয়। কিন্তু আধুনিক চাহিদার বিপরীতে বিদ্যমান রাডার ব্যবস্থাটি এখন আর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল পিপিপির মাধ্যমে রাডার ব্যবস্থাপনার প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য একটি প্রস্তাব পায়। তবে সেই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি। প্রভাবশালী দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দ্ব›দ্ব এবং সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ঠদের মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকার ভাগাভাগিই শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে। সরকারি ও সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থায়নে নতুন রাডার স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কড়া নিদের্শনা দিলেও নতুন করে প্রকল্প তৈরির কাজই শেষ হয়নি গত এক বছরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।