Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ শতাধিক দখলদারে বিপন্ন কুমিল্লার পুরনো গোমতী নদী

ভোটের রাজনীতি ও স্থানীয়দের প্রভাবে অসহায় প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : প্রাচীন শহর কুমিল্লার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক পুরনো গোমতী নদী। এক সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে ছিল পুরনো গোমতী নদী। বর্তমানে নদীটি দেখভালের দায়িত্ব কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের। প্রায় ৩৬ বছর ধরে গোমতীর দুইপাড় ও পানির অংশের দুইশ শতকের বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক লোকজন। এসব লোকজন দখল করা জায়গায় বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। জেলা প্রশাসন থেকে গত ১৫ বছরে দখলদারদের নামে অন্তত দশবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভোটের রাজনীতি আর স্থানীয় প্রভাবের কাছে অসহায় প্রশাসনের উচ্ছেদ কার্যক্রম বার বার থমকে যায়। প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ পুরনো গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় দুইশো শতক জায়গা দখল হয়েছে। নদীর পানির অংশও দখল করে সেখানে বাড়িঘর, দোকানপাট, গাড়ীর স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অবৈধ এসব স্থাপনায় বৈধভাবে মিলেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ। নদীর উভয় প্রান্তে শুভপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে চকবাজার হয়ে টিক্কারচর শশ্মানঘাট পর্যন্ত পাড় দখলের সাথে নদীর অংশও দখলে চলে গেছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ও দক্ষিণ প্রান্তে চকবাজার, গর্জনখোলা অংশেও কমবেশি দখল হয়েছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ফেরিঘাট অংশে পাড় ও পানির অংশ দখল হয়ে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মোগলটুলি ফারুকি হাউজ রোডের দুই অংশের পাড় দখল হয়ে লেগুনা স্ট্যান্ড ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মোগলটুলি, ইসলামপুর, কাপ্তানবাজার এবং উত্তর প্রান্তে পশ্চিম চাঁনপুর ও গয়ামবাগিচা জুড়ে নদীর পাড় ও পানির অংশ দখল করে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় পুরনো গোমতীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখল করে রেখেছেন মর্মে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তালিকায় ৫২২ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ৫ শতাধিক দখলদার ঘিরে ভোটের রাজনীতি জড়িত এবং দখলদারের তালিকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীও নাম থাকায় নোটিশের কার্যকারিতা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর প্রকাশ পেয়েছে প্রশাসনের অসহায়ত্ব। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সবসময়ই জোর দিয়ে বলে থাকেন; পুরনো গোমতী নদীর জায়গা যারা দখল করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ৩৬ বছরে অন্তত ১৭ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কুমিল্লায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব ডিসি সাহেবদের অনেকেই পুরনো গোমতীর দখলদারদের তালিকা তৈরিসহ এটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনিক পর্যায়ে কমিটি গঠন এবং নদীর দুইপাড়ে ওয়াকিং জোনসহ বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ডিসি যায়, ডিসি আসে; বাস্তবায়ন হয়না পুরনো গোমতী দখলমুক্ত এবং ওয়াকিংজোন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি কুমিল্লায় যোগদান করা ডিসি মো. আবুল ফজল মীর জোর দিয়েই বলেছেন, পুরনো গোমতীসহ কুমিল্লার পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নে তিনি সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাতে ডিসি আবুল ফজল মীর বলেছেন, তিনি পরিবেশ রক্ষা কাজে ইতিপূর্বেও ভূমিকা রেখেছেন। ঢাকার বুড়িগঙ্গা দখল মুক্ত রাখতে প্রশাসনের হয়ে দায়িত্ব পালনও করেছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি প্রফেসর ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম জানান, অবৈধ দখলযজ্ঞ পুরনো গোমতী নদীর ঐতিহ্যকে বিলীন করে দিচ্ছে এটা সত্যি। গোমতীর ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় বাপা থেকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র ও ডিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। পুরনো গোমতীর দুইপাড়ে দুইপাড়ে ওয়াকিংজোন এবং বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আগ থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্তে রয়েছেন। আর সমন্বিত প্রচেষ্টার কাছে ভোটের রাজনীতি আর স্থানীয় প্রভাব মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ