পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে গত পাঁচ-সাত বছর ধরে অপসংস্কৃতি চলছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে পরিণতি ভালো হবে না। ভোটের পরিবেশটাকে নষ্ট করা হয়েছে। আর এটা থেকে বেরিয়ে আসা এতটা সহজ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারের ১৩৩টি এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটে। এই নির্বাচনের পর্যালোচনা করতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনটি পত্রিকা পড়ে একই চিত্র দেখতে পারলাম। পেছনে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত থাকে। এই দৃষ্টান্ত ভাঙতে না পারলে এটা চলতে থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের ১৩৩টি এলাকায় এই নির্বাচন হলো। অনেক সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে তেমন গুরুত্ব দেয় না নির্বাচন কমিশন। অথচ এই নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি খুনোখুনি এবং টাকা ছড়াছড়ির নির্বাচন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে দুর্নীতি বলতে যা বোঝায় তা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে রয়েছে। আগে এরকম ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে কাবিখা হয়তো নেই, কিন্তু তারা জন্ম সনদ, বাড়ি বেচা, বাড়ি কেনা, জমিজমা বেচাকেনা সবকিছুর সনদ তারাই দিচ্ছেন। নিজের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সাখাওয়াত বলেন, আমি যখন নির্বাচন কমিশনে গেলাম, সেখানে একজন আমাকে বললেন ঢাকার জিঞ্জিরায় নাকি টাকার বস্তা নিয়ে নামেন। যে কারণে হানাহানি বেশি হচ্ছে। আমি পড়াশোনা করে দেখলাম, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যত খুনোখুনি হয় যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হয় না। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সেহেতু রিমোট এলাকার ভেতরে এর মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ। সাখাওয়াত বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজন থাকে, তাদের প্রভাব বেশি থাকে। সরকারি দলের বাইরে যেসব লোক নির্বাচন করছে তারা প্রতিদ্বিদ্বতায়ই আসতে পারছে না। রাতের বেলায় ভোটকেন্দ্র দখল হয়। সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা থেকে ভোটকেন্দ্র কতটুকু দূরে থাকে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের সময় পরিবর্তন করতে পারে। একটি-দুইটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে গন্ডগোল হলে পুরো ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ করে দেন। এক ছকে সব নির্বাচন হবে না। প্রতিটি নির্বাচনের চরিত্র আলাদা। এটার ইনসেনটিভিটি আলাদা। এখন তো দলীয়ভাবে হচ্ছে। ফলে মারামারি হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব নির্বাচন থেকে নির্বাচন কমিশন কিছু শিক্ষা নিতে পারে। তারা যেহেতু সব নির্বাচন করে থাকে। সিটি করপোরেশনে যে নির্বাচন হবে সেখানে আপনারা রাতের বেলায় ব্যালট পেপার দেবেন না। ব্যালট পেপার সকালে দেন। গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেন। রাতে দিলে তো বুথ ক্যাপচার করে। রাতের বেলায় ব্যালট পেপার দিলে সিল মেরে সাইন করে দেয়। ব্যালট পেপারে সিল মারলে সেটা বৈধ হয়ে যায়। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের আইনের মধ্যে কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। সাময়িক বন্ধ করে আবার চালু করলেন কেন? নির্বাচন কমিশন আন অফিশিয়ালি যদি আন ভ্যালিড করে দেয় ফলস ভোট বের করতে কোনো সময় লাগবে না। এখন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা। আপনি স্যাম্পুল করেন। আপনি ওই লোকগুলোকে জিজ্ঞাসা করেন তুমি ভোট দিয়েছ। তোমার হাতের কালি কোথায়? এখন তো তিন দিনেও হাতের কালি শুকায় না। এই বিশ্লেষক বলেন, ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন হয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো রুল ছিল না। কে নির্বাচন করিয়েছে, সিটিং গভর্নমেন্ট। সেখানে কী হলো, মুসলিম লীগ পরাজিত হলো। সেটা তো একটি উদাহরণ রয়েছে। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচন দেখেন। তারপর থেকেই এসব নির্বাচন শুরু হলো। যখন থেকে মানুষ চিন্তা করতে শুরু করল যে আমাকে আরো কিছুদিন থাকতে হবে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা আরও পাঁচ বছর থাকলে বা ২০ বছর ৩০ বছর থাকলেন কিন্তু একটি সময় তো ক্ষমতা ছাড়তে হবে। একটি গণতান্ত্রিক দল যাদের এত অর্জন, কিন্তু ২০ বছর পর যদি ক্ষমতায় না থাকেন তাহলেও একটি ঐতিহাসিক দায় থেকে যাবে। নির্বাচন কমিশনের কী ভ‚মিকা থাকা দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের কিছু দায়-দায়িত্ব থেকে যায়। এখানে নির্বাচন কমিশনের আরো কিছু চিন্তাভাবনা করা দরকার ছিল। আপনাদের ১৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন একসঙ্গে করার কী দরকার। আপনি ১০টি, ২০টি, ৫০টি করে করেন। যারা সেখানে অফিশিয়াল দায়িত্ব পালন করেন সেখানে কীভাবে ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়? অগাধ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু শুধু ক্ষমতা দিলেই হবে না। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একজন মারা গেছেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনী সহিংসতায় মারা যাননি। তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এগুলো নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে। সেখানে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন? ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘটনাটি সেখানে কেন ঘটল। এইগুলো নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নিলো না। ব্যবস্থা নিলে অন্যরা বুঝতে পারবে। ব্যবস্থা নিয়ে জনগণকে বুঝাতে হবে। দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের কাছে। জনগণের কাছেই তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। আর নিলেও জনগণকে জানতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব জনগণের কাছে। নির্বাচন কমিশনের ভোটারদের কাছে যেতে হবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় ন্ডিগোল বেশি হচ্ছে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাখাওয়াত হোসেনও এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, দলের ওখানে অনেক লোক রয়েছে। সেখানে সরকারি দল হারতে চায় না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে হবে এটা কে নির্বাচন করবে। এটা স্থানীয় লোকজনই করে থাকে। আপনি যখন দলীয় একজন লোককে নেবেন তখন অন্যরা গন্ডগোল করে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।