Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বগ্রাসী যমুনার ভাঙন অব্যাহত

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে টি এম কামাল | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ভেঙেই চলেছে সর্বগ্রাসী যমুনা। কোন কিছুতেই তার ভাঙন তান্ডব থামছে না। কবে যে এর সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটবে কেউই তা জানে না। অথচ তার প্রলয়নৃত্যে এর তীরবর্তী মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও এর বাইরের এলাকাগুলো ভাঙনের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গত ক’দিনের ভাঙনে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাইরে ভাঙনের শিকার বাঐখোলা গ্রাম ও পাটাগ্রাম ফ্লাড সেন্টার, উঠতি ফসল জমি, সবজি ক্ষেত, গাছের বাগান। মাছুয়াকান্দি, শুভগাছা গ্রাম হুমকির মুখে। ভাঙনের শিকার পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা গ্রামের শাহজাহান আলী, রমেলা খাতুনসহ অনেকেই তাদের বসতভিটা থেকে ঘরদোর সরিয়ে পাশের চরগুলোতে ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্থানান্তর করেছে। গান্ধাইল ইউনিয়নের সদস্য রকি ও মঞ্জু জানান, ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এখনকার ভাঙনের ফলে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, ভাঙনকবলিত কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি ইউনিয়ন যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চল। বাকি ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে মাইজবাড়ি, কাজিপুর সদর ও শুভগাছা, গান্ধাইল ইউনিয়নের অংশ বিশেষ যমুনার ভাঙনের শিকার। সেই ১৯৮০ সালের ভয়াবহ ভাঙনে মূূল কাজিপুর থানা, সিও অফিসসহ নানা স্থাপনা যমুনা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এভাবে যমুনা প্রতিনিয়তই গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা, বিপন্ন হচ্ছে জনপদ, কমে আসছে আবাদি জমি, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ, বদলে যাচ্ছে জীবন-জীবিকার ধরণ। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া মূল যমুনার ভাঙন চলছে বছরের পর বছর। রাক্ষুসে যমুনা পানির বৃদ্ধিতেও ভাঙে আবার শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙে। একসময় যেখানে ছিল গ্রামীণ জনবসতি, রাত পোহালেই যেখান থেকে কৃষক বের হতেন লাঙল কাঁধে মাঠের উদ্দেশ্যে। আর বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে ঘোমটার ফাঁক গলে কিষাণী বধূ চোরা চোখে দেখত স্বামীর মাঠে যাওয়া। দুপুরের রান্না সেরে ঘরের দাওয়ায়, কিংবা পাখা হাতে গাছের ছায়ায় বসে স্বামীর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকত, আজ সেখানে অথৈ জলরাশি। উত্তাল যমুনার করাল গ্রাসে আজ তা কেবলই স্মৃতি। তারাকান্দি, শুভগাছা, টেংলাহাটা, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, কান্তনগর, বাংলাবাজার, খাষশুড়িবেড়, গোয়াল বাথান, হাটগাছা, জগৎগঞ্জ, ভাঙ্গারছেও, আমনমিহার, বিলসুন্দর, শ্রীপুর, বদুয়ারপাড়া, ধুলাউড়ি, মানিকপোটল, পলাশপুর, চরনাটিপাড়া, পানাগাড়ি, যুক্তিগাছা, দাদবোড়া, উজানমেওয়াখোলা, বিলধলী, রাজবাড়ী, পীরগাছা, ডগলাস ভেটুয়া, তেকানী, ডিগ্রি দোরতা, সাউদটোলা, ফুলজোড়, মেঘাই, মানিকপোটল, পলাশপুর, ঘোড়াগাছাসহ অনেক জনপদ কাজিপুরবাসীর কাছে কেবলই অতীত। এখনো ধর্মীয় পালা-পার্বণে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের মন কেঁদে ওঠে। বাপ-দাদার কবরের পাশে দোয়া-দরূদ পড়তে না পারার আক্ষেপ তাদের আজীবনের সঙ্গী।
তাই কাজিপুরবাসীর একটিই দাবি, এখনো যে অংশটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তা যেন সর্বনাশি যমুনা কেড়ে না নেয়। কেননা ভাঙন স্থিতাবস্থাই কেবল পারে, পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কাজিপুরবাসীকে শেকড়ের সন্ধানে মিলনের সুযোগ করে দিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ