নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : শিবনারায়ন চন্দরপল- একটি নাম, একটি বিস্ময়। কিংবদন্তি বা মহানায়ক বললেও ভুল হবে না। ভারতের শচীন টেন্ডুলকার অবসরে যাওয়ার পর দুই দশকের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একমাত্র খেলোয়াড় তিনি। ক্রিকেট ক্যারিয়ার থমকে গিয়েছিল আগেই; বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সারা হয়ে গেল সেটিও। মাঠের বাইরে থেকেই গতকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন ক্যারিবীয়ন অনেক ইতিহাসের সাক্ষী শিবু।
গত বছরের মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবশেষ খেলেছিলেন চন্দরপল। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর জায়গা হারিয়েছিলেন দলে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল তখনই। প্রধান নির্বাচক ক্লাইভ লয়েড বারবারই বলেছেন, চন্দরপল অধ্যায় পেছনে ফেলে সামনে তাকাচ্ছেন তারা। তবে বরাবরের লড়াকু চন্দরপল সেই ভাগ্য মানতে রাজি ছিলেন না। দলে ফেরার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাস্তবতার কাছ নতি স্বীকার করতেই হলো ৪১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান ডেভ ক্যামেরন নিশ্চিত করেছেন, ই-মেইলে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন চন্দরপল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট ডেভ ক্যামেরুন বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটে তার অবদানের ভূয়সীপ্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তার জন্য শুভ কামনাও জানান। ধারণা করা হচ্ছে মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নেন চন্দরপল। কারণ আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের জন্য তাকে অনাপত্তিপত্র দিতে অস্বীকার করেছে ডবিøউআইসিবি। এই টুর্নামেন্টে ৩০ হাজার ডলারে জেমিনি এ্যারাবিয়ান্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
চন্দরপলের বিদায়ে শুধু ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটেই নয়, অবসান হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্ণাঢ্য এক অধ্যায়েরও। অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সময়ের সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অভিষেক হয়েছিল সেই ১৯৯৪ সালে। নব্বই দশকের পর নতুন শতাব্দীর প্রথম দশক ছাড়িয়ে খেলেছেন দ্বিতীয় দশকেও। সাক্ষী তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক বাঁক বদলের।
অভিষেক টেস্টেই ঘরের মাঠ গায়ানায় করেছিলেন ৬২ রান। চতুর্থ টেস্টেই খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন ইতিহাস। ব্রায়ান লারার রেকর্ড গড়া ৩৭৫ রানের ইনিংসে চন্দরপলের সঙ্গে ছিল ২১৯ রানের জুটি। রেকর্ড গড়ার সময়টাতেও উইকেট ছিলেন চন্দরপল। পরে নিজেও গড়েছেন অনেক অনেক রেকর্ড।
শুরুতে সবার নজর কেড়েছিলেন স্টাম্পের সামনে অদ্ভুত স্ট্যান্স দিয়ে। ক্রমশ বুঝিয়ে দিতে থাকেন, স্ট্যান্স প্রথাগত না হলেও ব্যাটিংয়ে তিনি ধ্রæপদী ঘরানার। দ্রæতই হয়ে ওঠেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের ভরসা। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার লড়িয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন বিশ্ব ক্রিকেটে। বরাবরই ধারাবাহিক হলেও লারার জমানায় অনেকটাই আড়ালে পড়েছিলেন লারার তারকা খ্যাতির দ্যুতিতে। তবে লারার বিদায়ের পর টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং বলতে বোঝাত কেবল চন্দরপলকেই। নি:সঙ্গ শেরপার মতোই নিজের কাজটা করে গেছেন দিনের পর দিন। বিপর্যয়ে তিনি ছিলেন ত্রাতা, প্রয়োজনের সময় কার্যকর, অনেক অনেক বার দলের মান বাঁচানোর নায়ক; সব মিলিয়ে সবচেয়ে বড় ভরসা।
এই পথচলাতেই নাম লিখিয়েছেন অনেক রেকর্ডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ১৬৪ টেস্ট খেলেছেন চন্দরপল। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে সর্বোচ্চ রানের লারার রেকর্ড (১১ হাজার ৯১২) ছুঁতে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪৫ রান। টেস্ট শতকেও ক্যারিবিয়ানে চন্দরপলের (৩০) উপরে কেবল লারা (৩৪)।
দীর্ঘ সময় উইকেটে টিকে থাকতে আধুনিক ক্রিকেটে চন্দরপলের জুড়ি মেলা ভার। ২০০২ সালে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দুইবার আউট হওয়ার মাঝে অপরাজিত ছিলেন টানা ২৫ ঘণ্টার বেশি! সেই সিরিজে মোট ২ হাজার ৫৭ মিনিট ব্যাটিং করার অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েছিলেন, ক্রিকেট ইতিহাসে যেটির ধারেকাছে নেই আর কোনও ব্যাটসম্যান।
প্রয়োজনের সময় আবার ব্যাট হাতে তার রুদ্ররূপও দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ বলে শতক করেছিলেন, যা টেস্ট ইতিহাসে যা চতুর্থ দ্রæততম। ওয়ানডেতেও আছে দারুণ সব ইনিংস। জয়ের জন্য শেষ ২ বলে ১০ রানের সমীকরণ মিলিয়েছেন চামিন্ডা ভাসের মত বোলারকে পঞ্চম বলে চার, শেষ বলে ছক্কা মেরে।
মাঠে ভেতরে-বাইরে ছিলেন অন্তর্মুখ; নিজের মত থাকতেই পছন্দ করতেন। এই ভাবগাম্ভীর্যের কারণে লম্বা হয়নি অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ার। ১৪ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ক্ষয়িষ্ণু ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলেছেন দুই যুগ, সবচেয়ে বেশি টেস্ট হারের (৭৭টি) স্বাদ পাওয়া ক্রিকেটারের অনাকাক্সিক্ষত রেকর্ড তাই সঙ্গী তার। তবে এটিকে ভুলিয়ে দেয়ার মত গর্বের রেকর্ড ও কীর্তিও আছে ক্যারিয়ারে অসংখ্য। তবে সব ছাপিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে চন্দরপল বেঁচে থাকবেন ব্যাকরণকে বুড়ো আঙুল দেখানো অদ্ভুত স্ট্যান্সেও দারুণ সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে; ক্লান্তিহীন ব্যাটিংয়ের প্রতীক হিসেবে।
এক নজরে চন্দরপল
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় ১০০/৫০ উই.
টেস্ট ১৬৪ ১১৮৬৭ ২০৩* ৫১.৩৭ ৩০/৬৬ ৯
ওয়ানডে ২৬৮ ৮৭৭৮ ১৫০* ৪১.৬০ ১১/৫৯ ১৪
টি-২০ ২২ ৩৪৩ ৪১ ২০.১৭ ০/০ ০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।