পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আর টি : শীতল যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মোকাবেলা করতে পশ্চিমা দেশগুলো সউদী আরবের সাহায্য চেয়েছিল। তারই পরিণতিতে সউদী অর্থায়নে বিশে^ ওয়াহাবিবাদ ছড়িয়ে দেয়া শুরু হয়। সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে এক সাক্ষাতকারে এ কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র সফরের শেষ দিনে ২২ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে যুবরাজের ৭৫ মিনিট ব্যাপী সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয়।
যুবরাজ পত্রিকাকে বলেন, শীতল যুদ্ধের সময় সউদী আরবের পশ্চিমা মিত্ররা মুসলিম দেশগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে উঠে পেেড় লাগে। তার ভাষায়, মুসলিম দেশগুলো যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে চলে না যায়, সেজন্যই পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো গত শতকের ’৭০ এর দশকে সউদী আরবকে সাহায্য করতে অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে বিভিন্ন দেশে মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিস্তারে কাজ শুরু করে সউদী আরব।
মুসলিমদের প্রধান দুটি ধারার অন্যতম সুন্নিদের মধ্যে ওয়াহাবিবাদের গোড়াপত্তন আঠারো শতকে আরবের নজদ থেকে মোহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাবের মাধ্যমে। ওয়াহাব ছিলেন বারো শতকের ইবনে তাইমিয়্যাহ দ্বারা প্রভাবিত; যিনি মনে করতেন, রাষ্ট্র হবে ধর্মের অনুগামী। ইবনে তাইমিয়্যাহ ছিলেন মুক্ত মত চর্চার ঘোর বিরোধী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপে সউদী আরব গঠন করে মসনদে বসে সউদ পরিবার; তখন তাদের সঙ্গে জোট বাঁধে ওয়াহাবিরা। রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছড়াতে থাকে ওয়াহাবিদের উগ্র মত।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এক পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ জানায়, পরমতসহিষ্ণু সুন্নিদের উগ্র ওয়াহাবিবাদে দীক্ষিত করতে ১৯৭০ থেকে চার দশকে ১ হাজার কোটিরও বেশি ডলার ঢালে সৌদি আরব। এই অর্থের ২০ শতাংশের মতো আল কায়দাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যায় বলে ইউরোপের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়।
২০১৩ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ওয়াহাবিবাদকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুরঘর’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ওয়াহাবিবাদের প্রচার যেভাবে শুরু হয়েছিল, তা পরে আর সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। তিনি বলেন, এখন সরকারের বদলে সউদী আরব ভিত্তিক বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অর্থায়ন হচ্ছে।
এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। ’৯০- এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর শীতল যুদ্ধের অবসান ঘটে। শীতল যুদ্ধের অবসানের পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী; যাদের অধিকাংশই ওয়াহাবি দর্শনে দীক্ষিত, যাদের সালাফিও বলা হয়।
আলোচনায় আরেকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তা হল মার্কিন মিডিয়ার আগের এক দাবি যে বিন সালমান বলেছিলেন যে হোয়াইট হাউসের সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার তার পকেটে রয়েছেন।
বিন সালমান এ মর্মে প্রকাশিত খবরগুলোও অস্বীকার করেন যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা কুশনারের সাথে রিয়াদে বৈঠক কালে তিনি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সউদী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানোর অনুমোদন চেয়েছিলেন বা সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন অভিযানে গ্রেফতার ও অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং কয়েক বছর ধরে তা চলছিল।
যুবরাজ বলেন, কুশনারের সাথে গোপন তথ্য বিনিময় অথবা ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে সউদী স্বার্থ হাসিলে তাকে ব্যবহার তার জন্য আসলেই পাগলামি হবে। তিনি বলে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক সরকারী কাজকর্মের প্রেক্ষিতেই। তবে তিনি স্বীকার করেন তিনি ও কুশনার অংশীদারির চাইতেও বেশি হচ্ছেন বন্ধু। যুবরাজ বলেন,মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হোয়াইট হাউসের মধ্যে অন্যদের সাথেও তার বন্ধু¦ আছে।
যুবরাজ ইয়েমেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
ইয়েমেন যুদ্ধে হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। এ সব মৃত্যু ও বেসামরিক ব্যক্তিদের জীবনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য সউদী জোটকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে রিয়াদ এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিন সালমান বলেন, তার দেশ ইয়েমেনে মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো সুযোগকে পাশ কাটিয়ে যায়নি। তিনি বলেন, ভালো সুযোগ মন্দ সুযোগ বলে কিছু নেই। বিষয় হচ্ছে মন্দ ও খারাপের মধ্যে।
সউদী যুবরাজের এ সাক্ষাতকার প্রথমে অফ দি রেকর্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরে সউদী দূতাবাস এ সাক্ষাতকারের নির্দিষ্ট অংশ ওয়াশিংটন পোস্টকে প্রকাশের অনুমতি দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।