Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো নিয়ে হাইকোর্টের রুল

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনের মেয়াদ ৫ এপ্রিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:২৭ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্র ও খালেদা জিয়াকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে হবে। রুলের শুনানি আপিলের শুনানির সময় এক সঙ্গে হবে। 

গতকাল বুধবার দুদকের রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সাহেদুর করিমের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছেন, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল দুর্নীতি দমন কমিশন করতে পারে কি না- সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এদিকে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিযার জামিন আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন বিশেষ আদালত। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুদুকের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, রাজনৈতিক চাপে সাজার বিরুদ্ধে রিভিশন করেছেন দুদক। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামালসহ বিএনপি আইনজীরা। 
দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বিচারপতিরা আসন গ্রহণ করেন। শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে জানান, দুদক খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে যে আবেদন (রিভিশন) করেছেন আমরা এখনও তার কপি (রিভিশনের) পাইনি। তখন খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা কপি দিবো। অবশ্যই দিবো। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ তার আসন থেকে উঠে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান।তিনি জয়নুল আবেদীনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে শুনানি করেন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দুদক স্বাধীন। কিন্তু কার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হবে এটাতো পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) ব্যাপার। সাজা কম ছিলো না বেশি ছিলো- এটা নিয়ে তারা কিভাবে এগ্রিভড (দুদক কিভাবে সংক্ষুব্ধ)? খুরশিদ আলম খান তার শুনানিতে এ সংক্রান্ত মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের কয়েকটি ধারার ওপর ব্যাখ্যা দেন এবং কয়েকটি কেস রেফারেন্সের ওপর আদালতে শুনানি করেন। এসময় আদালত বলেন, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল করতে পারে কি না- সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তাই আবেদন অনুসারে রুল দিলাম। চার সপ্তাহের। 
এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ২৭ মার্চ আবেদনটি উপস্থাপনের পর আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন। গত ২৫ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করা হয়।
চ্যারিটেবল মামলায় জামিন ৫ এপ্রিল পর্যন্ত: 
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জামিন মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন বিশেষ আদালত। গতকাল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন। গত ১৩ মার্চ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। সেদিন বিচারক ২৮ ও ২৯ মার্চ শুনানির নতুন তারিখ রেখে নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়াকে হাজিরের নির্দেশ দেন। 
আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে আবদুর রেজাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান তপনসহ বিএনপি আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিচারককে বলেন, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু কেন হাজির করা হয়নি তা বলতে পারছি না। কোনো কারণ আছে নিশ্চয়। আদালতের পরোয়ানার ফিরতি কাগজ দেখেছেন বলে জানিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া অসুস্থ। যেহেতু তিনি অসুস্থ, আমরা খুবই চিন্তিত। কারণ, আমরা জানতে পারছি না। উনারাও পরিষ্কার করে কিছুই বলেননি। তিনি আরো বলেন, তিনি কী রোগে ভুগছেন, তিনি কেন এলেন না সরকারের পক্ষ থেকে, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। শুধু লেখা আছে, বেগম খালেদা জিয়া জেলে অসুস্থ। এই মামলার আগামী তারিখ ধার্য করেছে ৫ এপ্রিল। এই আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার পর্যন্ত জামিন থাকায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আগামী ৫ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করেন। জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্কের শুনানি করতে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এদিন আদালতে উপস্থিত থাকলেও শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় তার আর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়নি। আগামী তারিখে তিনি আবার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন। 
বিশেষ আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোড়দার: 
বেগম খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষের শুনানি দিন ধার্য থাকায় সকাল থেকে আদালত পাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়। সকাল থেকেই প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সর্তক অবস্থা নেয়। আদালতের প্রাঙ্গণের বাইরেরও সড়কে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এ সময় পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানকেও রাস্তায় দেখা যায়। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের তল্লাশি করে তারপর আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেয়া হয়। এদিকে, এ মামলার নিরাপত্তার কারণে আশপাশের দোকানপাট থেকে শুরু করে রাস্তাগুলোতেও জনসাধারণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। এর পর থেকে তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। এর পরে দুদক সে জামিনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন।### ##
খালেদা জিয়াকে হাজির না করায়
কারা কর্তৃপক্ষকে শোকজ কুমিল্লা আদালতের
ইনকিলাব ডেস্ক : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৮ এপ্রিল কুমিল্লার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ও বিকেলে দুই দফা শুনানি শেষে কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিন এসব নির্দেশ দেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আটজনকে হত্যার মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি ছিল বুধবার। কিন্তু গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় ও তিনটায় দুই দফায় কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে মামলার জামিনের বিষয় নিয়ে শুনানি হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে কেন হাজির করা হয়নি, সে জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া আগামী ৮ এপ্রিল জামিনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’
এর আগে ১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে আবেদন নিয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে খালেদা জিয়াকে উপস্থিতিতেই গতকাল (২৮ মার্চ) শুনানির দিন ধার্য রেখেছিলেন। কুমিল্লার আমলি আদালত-৫-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন।
কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রæয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১২ মার্চ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে আদালতের বিচারক তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। 
এর আগে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই আদালতের বিচারক কুমিল্লা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম ওই আদেশ দেন।

 



 

Show all comments
  • বিলাল ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 0
    পুলিশের আগে বিচার হক আমার কচতেকে বাড়িতে জাওর সোময় তিন হাজার ঢাকা নিহেচে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ