পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নিয়োগে অনিয়ম, গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়া অর্থ খরচ, ব্যক্তিগত কাজে কলেজের অর্থ ব্যয়, ক্রয় কমিটিকে পাস কাটিয়ে কেনাকাটাসহ অভিযোগের পাহাড় খিলগাঁও মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল কানাই লাল সরকারের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির অডিটেই কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ করেছে অডিটকারী প্রতিষ্ঠান কর্নফুলী গ্রæপ। অডিট কমিটিতে ছিলেন কর্নফুলী গ্রæপের অডিট ম্যানেজার আব্দুল জলিল খান, কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ হামিদুল হক, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের লেকচারার মোঃ রফিকুল ইসলাম। অডিট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে ৪২টি খাতে খিলগাঁও মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রায় কোটি টাকার অর্থিক অনিয়ম করেছেন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কোন সঠিক হিসেব তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, নিজের পত্রিকা বিল, ইন্টারনেট, ইলেক্ট্রিক সামগ্রি, চেয়ার-টেবিল কেনা, মায়ের দোয়া অনুষ্ঠানের জন্যও তিনি কলেজের অর্থ ব্যয় করেছেন। ফুলবল ম্যাচ দেখতে যাওয়া, মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার জন্য নিয়েছেন কলেজের অর্থ। অডিট প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কানাই লাল সরকার গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছাত্র নেতাদের বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে নগদ ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০ টাকা দিয়েছেন। এই অর্থের পুরোটাই তিন ছাত্র নেতা সেলিম তাওহিদ, তারিকুল রহমান সজিব ও ফরহাদ হোসেন হোসেনকে দেওয়া হয়েছে। অডিটে এ বিষয়ে বলা হয়েছে ছাত্র নেতারা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে অভ্যস্ত। এর সাথে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে অডিট প্রতিষ্ঠানটি এবং প্রিন্সিপাল যাতে ভবিষ্যতে অবৈধভাবে ছাত্রনেতাদের অর্থ দিতে না পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। একই সময়ে সবুজমতি এবং এইচ আর ভবনের স্টাফদের ঈদ বকশিস দেওয়ার কথা বলে প্রিন্সিপাল ৯২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে এই টাকা যাদেরকে দেওয়া হয়েছে বলে প্রিন্সিপাল উল্লেখ করেছেন তাদের কারো নাম ও স্বাক্ষর উল্লেখ নেই। প্রিন্সিপালের এধরণের সংস্কৃতি বন্ধের সুপারিশ করেছে অডিট প্রতিষ্ঠান। তিনি ২০১১ সালের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম বেতন হিসেবে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৭১ টাকা এবং একই বছর ২৫ আগস্ট অগ্রিম বোনাস হিসেবে ৬ হাজার ৪৩৮ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই অর্থ তিনি আর কলেজের ফান্ডে ফেরত দেননি। গভর্নিং বডি ও ক্রয় কমিটির অনুমোদন ছাড়াই ৭০ হাজার ৫৩৮ টাকার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন কিনেছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে এর কোনটিতেই কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত প্রিন্সিপাল তার বাসার পত্রিকা বিল, ইন্টারনেট, মডেম, এনার্জি বাল্ব, টেবিল সংস্কার, ইলেক্ট্রনিক লাইন সংস্কার, কম্পিউটার টেবিল কেনা, প্রিন্সিপালের মায়ের দোয়া অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজের জন্য ৫২ হাজার ৭৬৮ টাকা উত্তোলন করেছেন। ২০১২ ও ২০১৩ সালে এইচএসসি কোচিংয়ের জন্য কলেজের ফান্ড থেকে ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছেন যা তিনি ফেরত দেননি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কলেজের স্টাফ নিয়োগ পরীক্ষায় খরচ দেখিয়ে ৮ হাজার টাকা নিলেও অডিট প্রতিষ্ঠানটি এ ধরণের কোন পরীক্ষার প্রমাণ পায়নি। কলেজ প্রিন্সিপাল ফুটবল ম্যাচ দেখা, মানববন্ধনে অংশগ্রহণের জন্যও নিয়েছেন সাড়ে ৮ হাজার টাকা। অনুমোদন ছাড়াই মাস্টার্স ও আইন পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য প্রিন্সিপাল ৯ লাখ ৩৮০ টাকা উত্তোলন করেছেন। এই অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হয়েছে বলে অডিট প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে। গভর্নিং বডির অনুমোদ ছাড়া প্রিন্সিপাল ৫ বছরে আপ্যায়ন বিল উত্তোলন করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই সময়ে প্রতিদিনের অতিথি আপ্যায়নের জন্য নিয়েছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫২ টাকা, মোবাইল বিল ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৪’র জুন থেকে ১৬’র জুন পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজার টাকার শিফট ও অনার এ্যালাউন্স নিয়েছেন। ২০১৫’র অক্টোবর থেকে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ টাকা প্রিন্সিপালের এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাইস প্রিন্সিপালের বাসায় নগদ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে তাদের কাছে নগদ থাকা এই অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কার বিল হিসেবে প্রিন্সিপাল ৭৬ হাজার ৯০০ টাকা দেখালেও এর রশিদ দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়া স্টাফদের সেলারি গ্রেড বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ পর্যন্ত অনুমোদন ছাড়াই ইন্সপেকশনের জন্য টিপস হিসেবে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের মাসিক সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা দিয়েছেন। তবে এর জন্য তিনি গভর্নিং বডির অনুমোদন নেননি। যা কলেজ পরিচালনা পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একইভাবে খন্ডকালীন শিক্ষক ও স্টাফদের বোনাস দেখিয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫০ টাকা। রেজ্যুলুশন ছাড়াই প্রিন্সিপাল ও ভাইস-প্রিন্সিপাল বিবিএ ক্লাস এডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যালাউন্স (২০১৫ সালে) ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৬, প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপাল ও কন্ট্রোলার বিভিন্ন পরীক্ষার অ্যালাউন্সের জন্য (২০১২-১৩ সেশনে) ১৯ লাখ ৪ হাজার ১১৪ টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক থাকলেও সাত জন শিক্ষককের নিয়োগে এই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি। স্টাফদের বিভিন্ন উপলক্ষে অতিরিক্ত অর্থ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ১ লাখ ৫ হাজার ৯০০ টাকার বিল ভাউচার দেখাতে পারেনি প্রিন্সিপাল। অনুমোদন ছাড়া ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৯ টাকার ফার্নিচার ক্রয় দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন বিল দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে অডিট কমিটির সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, কর্নফুলী গ্রæপ বরাবরই কলেজের অডিট করে থাকে। অডিটে যেসব অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে তাই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কানাই লাল সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আপনি সাংবাদিক হলে এই বিষয়ে তো আপনার জানার কথা না। আপনি জানলেন কিভাবে? আর আপনি এ বিষয়ে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন না। বিষয়টি গভর্নিং বডি দেখবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।